চট্টগ্রামে ৭ দিনে মাত্র ৩৪ জনের নমুনা সংগ্রহ
চট্টগ্রামে করোনা ভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা শুরু করার পর থেকে গত সাত দিনে মাত্র ৩৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
ফৌজদারহাটস্থ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) ল্যাবে প্রতিদিন ৪০টি নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা থাকলেও গড়ে মাত্র পাঁচটি করে পরীক্ষা করা হচ্ছে।
এ ছাড়া টেস্ট করাতে হটলাইনে ফোন করে সাড়া না পাওয়ারও অভিযোগ করেছেন অনেকে। পাশাপাশি কতজন ব্যক্তি পরীক্ষা করার জন্য হটলাইনে ফোন দিয়েছেন, সেই তথ্য নেই বলে জানিয়েছে বিআইটিআইডি ও সিভিল সার্জন কার্যালয়।
নগরের মুরাদপুর এলাকায় একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে কাজ করেন মাহিম উদ্দিন। শুক্রবার থেকে সর্দি-কাশিতে ভুগছেন তিনি। শনি ও রোববার টানা দুইদিন যোগাযোগের চেষ্টা করে তিনি বিআইটিআইডির হটলাইনে কথা বলতে পারেননি।
মাহিম উদ্দিন বলেন, 'সোমবার সকালে হটলাইনে কল দেওয়ার পর এক ডাক্তার কিছু বিষয় জিজ্ঞেস করেছেন। এরপর তারা আমাকে বলেন- আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। বুধবার বিকেল পর্যন্ত তারা যোগাযোগ করেননি।'
শুধু মাহিম উদ্দিন নয়, চট্টগ্রামে অনেকে হটলাইনে ফোন করে সেবা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন। পাশাপাশি হটলাইনে ফোন করলে ব্যস্ত লাইন পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন অনেকে।
২৫ মার্চ থেকে চট্টগ্রামে করোনা শনাক্তের পরীক্ষা শুরু হয়। বিআইটিআইডি পরিচালক এমএ হাসান বলেন, গত এক সপ্তাহে আমরা ৩৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছি। পরীক্ষার ফলাফল আমরা ঢাকায় পাঠিয়ে দিই। আমাদের দুটি হটলাইন চালু রয়েছে। তবে এ পর্যন্ত কতজন ফোন করেছেন, তার কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।
নমুনা সংগ্রহে ধীরগতি ও কলের তথ্য নেই কেন জানতে চাইলে এমএ হাসান বলেন, কেউ পরীক্ষা করাতে চেয়ে ফোন দিলে ডাক্তাররা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। এরপর পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং উপসর্গ দেখে সন্দেহ হলে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। অন্যথায় পরীক্ষা করানো হচ্ছে না।
তিনি বলেন, 'আমাদের এটা একটি হাসপাতাল। করোনার পাশাপাশি অন্যান্য রোগীর চিকিৎসাও দিতে হয়। জনবল সঙ্কট রয়েছে। তাই কলের তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না।'
বিআইটিআইডি মাইক্রো-বায়োলজি বিভাগের প্রধান ডা. শাকিল আহমদ বলেন, 'আমাদের ল্যাবে প্রতিদিন ৪০টি পরীক্ষা করার যন্ত্রপাতি ও জনবল রয়েছে। এছাড়া পর্যাপ্ত কিটও রয়েছে। তবে আমরা গড়ে পাঁচ থেকে আটটির বেশি নমুনা পাচ্ছি না।'
বিআইটিআইডির পাশাপাশি সিভিল সার্জন কার্যালয়ে একটি হটলাইন চালু রয়েছে। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, বিআইটিআইডি প্রতিদিন কতজনের নমুনা সংগ্রহ করে, সেই তথ্য আমাকে দেয়। বাকি তথ্য তারা নিজেরা সংক্ষরণ করে। আমরা একটি হটলাইন চালু করেছি। সেখানে পরীক্ষার জন্য কেউ ফোন করলে আমরা তাদেরকে বিআইটিআইডির সঙ্গে সংযোগ করিয়ে দিই। তবে বিআইটিআইডি এবং আমাদের হটলাইনে কতজনে ফোন করেছে, সেই তথ্য নেই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে বেশি বেশি পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছে। তবে চট্টগ্রামে নমুনা সংগ্রহে ধীরগতির কারণে হতাশ সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন, সন্দেহজনক অনেক রোগীর পরীক্ষা করা হচ্ছে না। যদি তাদের শরীরে করোনার জীবাণু থাকে, তাহলে সেটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) চট্টগ্রাম নগরের সভাপতি অ্যাডভোকেট আকতার কবির চৌধুরী বলেন, সাতদিনে ৩৪ জনের নমুনা সংগ্রহ খুবই কম। যেখানে উন্নত দেশগুলো প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের পরীক্ষা করছে, সেখানে আমরা পরীক্ষাকে নিরুৎসাহিত করছি।
তিনি আরওবলেন, কতজন মানুষ পরীক্ষা করার জন্য কল করেছেন, সেই তথ্য প্রকাশ এবং যারা কল করছেন- তাদেরকে নজরদারিতে রাখা উচিত। তাহলে যারা উপসর্গ বহন করছেন, তাদের সহজে বাছাই করা সম্ভব হবে।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামে এখনো কোনো করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি। মঙ্গলবার রাতে বিআইটিআইডির আইসোলশন ইউনিটে ৫১ বছর বয়সী এক নারী মারা গেছেন। তবে তার শরীরে করোনা ভাইরাস ছিল কি না সেটি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। চট্টগ্রামে দুটি হাসপাতালে ১৫০টি বেড প্রস্তুত করা হয়েছে।