চিলাহাটি-হলদিবাড়ি সম্প্রসারিত রেল সংযোগে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন: পরিকল্পনা কমিশন
ভারত ছাড়াও নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে রেলপথে বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য চিলাহাটি ও চিলাহাটি বর্ডারের মধ্যে ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ দ্বিতীয় দফায় বাড়ানোর প্রস্তাব ফেরত দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
ভারতের হলদিবাড়ির স্টেশন বিল্ডিংয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চিলাহাটিতে স্টেশন ভবন নির্মাণ, নতুন দু'টি সেতু নির্মাণসহ বিভিন্ন অঙ্গ যুক্ত করে বাড়তি ব্যয় প্রস্তাব করে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব ছিল রেলপথ মন্ত্রণালয়ের।
এ অবস্থার মধ্যেই ভারতের দীর্ঘ ৫৬ বছর পর আবারও এই রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। ভারতীয় রেলওয়ে রবিবার উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের ডামডিম স্টেশন থেকে পাথর বোঝাই প্রথম মালবাহী ট্রেন বাংলাদেশে প্রেরণ করেছে বলে জানিয়েছে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন। এ পথে ভারতের সঙ্গে পণ্য পরিবহনে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরত্ব কমবে।
বৃটিশ আমলে নির্মিত এই রেলপথটি ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পর বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৫ সালের নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিত ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ইন্টার গর্ভনমেন্টাল রেলওয়ে মিটিংয়ে চিলাহাটি ও হলদিয়াবাড়ির মধ্যে রেলপথ নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়।
তার প্রেক্ষিতে ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে 'ভারতের সাথে রেল যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে চিলাহাটি এবং চিলাহাটি বর্ডারের মধ্যে ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প' হাতে নেয় সরকার, যা ২০১৮ সালের আগস্ট থেকে ২০২১ এর জানুয়ারি মেয়াদে বাস্তবায়ন হওয়ার কথা ছিল। পরে প্রকল্পটির ব্যয় ১৫২ কোটি টাকা নির্ধারণ করে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর উদ্যোগ নেয় রেলপথ মন্ত্রণালয়।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মো. হারুন-আল-রশীদের সভাপতিত্বে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সংশোধিত প্রস্তাবে যেসব অঙ্গ সংযোজন করার কথা বলা হয়েছে, সেগুলোর আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাসহ ব্যয় কমানোর সুপারিশসহ সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব (আরডিপিপি) জমা দিতে বলেছে।
প্রকল্পটির উদ্দেশ্য ছিল চিলহাটি ও চিলহাটি বর্ডারের মধ্যে ৬.৭২ কিলোমিটার ব্রডগেজ মেইন লাইন ও ৪ কিলোমিটার ব্রডগেজ লুপলাইন নির্মাণ করা। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের মোংলা পোর্ট হয়ে ভারতের উত্তর-পূর্ব অংশ, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন সহজ হবে।
জুনে অনুষ্ঠিত পিইসি সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে, প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় এক লাখ ঘনমিটার মাটির কাজ করার কথা ছিল, সেখানে কাজ হয়েছে ৬০ হাজার ঘনমিটারের। সাব-বেজের কাজের পরিমাণ ৩০০০ ঘনমিটার হ্রাস পেয়েছে। এর ব্যাখ্যায় রেলপথ মন্ত্রণালয় বলেছে, 'সম্ভাব্যতা পরীক্ষা করার সময় জায়গাটি ঘাস দিয়ে ঢাকা থাকায় সঠিক পরিমাণ নির্ধারণ করতে না পারার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নকালে সাব-বেজের পরিমাণ ৩০০০ ঘনমিটার হ্রাস পায়।'
ডাবল লাইন রেল চলাচলের জন্য নতুন একটি সেতু নির্মাণসহ পুরনো সেতু ভেঙ্গে আরেকটি সেতু নির্মাণের কথা প্রস্তাব করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। পুরনো সেতুটি সংস্কার করে দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহার উপযোগি করা যায় কি-না, সে বিষয়ে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি সংশোধিত প্রস্তাবে সেতু নির্মাণ ব্যয় কমানোর সুপারিশ করেছে কমিটি।
বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বেনাপোল-পেট্রোপোল, দর্শনা-গেদে, রহনপুর-সিংহাবাদ এবং বিরল-রাধিকারপুর রুটে ট্রেন চলাচল করছে।
দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ১৯৬৫ সাল পূর্ববর্তী সমস্ত রেল সংযোগ পুনরায় কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার প্রেক্ষিতেই চিলাহাটি-হলদিয়াবাড়ি রেল সংযোগ পুনঃস্থাপিত করার কাজ হাতে নেয় দুই দেশ। গত বছর ১৭ ডিসেম্বর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে রেল সংযোগটি উদ্বোধন করেন।