জলাবদ্ধতা দূর করতে কল্যাণপুরে হচ্ছে জল-কেন্দ্রিক ইকোপার্ক
দখল, দূষণে বিপর্যস্ত রাজধানীর কল্যাণপুরের রিটেনশন পন্ডকে পুনর্জীবিত করে অঞ্চলটিকে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা করতে নতুন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। প্রায় ৯৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ জলাধার ঘিরে একটি জলকেন্দ্রিক ইকোপার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
কল্যাণপুরের খালগুলো রক্ষার্থে এবং এর প্রবাহ ও পানি নিষ্কাশন ঠিক রাখতে, প্রায় ১৮২.৩১ একর জুড়ে হতে যাচ্ছে এ জল কেন্দ্রিক ইকোপার্ক। তবে কল্যাণপুর রিটেনশন পন্ডের জন্য অধিগ্রহণ করা ১৭৩ একর জমির, ১৭০ একরই দখলে নেই উত্তর সিটির। এবছরের মধ্যে প্রকল্পটির অনুমোদন সম্পন্ন ও জমি দখলমূক্ত করে, আগামী বছর প্রকল্পের কাজ শুরু হবে জানিয়েছে ডিএনসিসি।
সিটি কর্পোরেশন আশা করছে, ওয়াকওয়ে ও ফুটব্রিজ, একটি জীববৈচিত্র্য দ্বীপ, শিশুদের খেলার মাঠ, বন্যা প্রশমন ব্যবস্থা, বর্জ্য অপসারণ ও ব্যবস্থাপনা, পুনর্বাসন আবাসিক সুবিধা এবং অন্যান্য কাঠামোযুক্ত - এ প্রকল্প চলতি বছরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাবে।
এ প্রকল্পের কার্যক্রমের উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন- বাপা'র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, এ রিটেনশন পন্ডটিকে ঘিরে হবে জলকেন্দ্রিক ইকোপার্ক, যেখানে প্রকৃতি নির্ভরতায় নবায়নযোগ্য জ্বালানী এবং নিজের উৎস থেকে পানি সরবরাহ করে, একটি যুবকেন্দ্রিক উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরী করা হয়েছে।
এ প্রকল্পের মূল কাজ হবে, কল্যাণপুরের ৫টি খালের অতিরিক্ত পানি জলাধার হিসেবে ধারণ করে, পুরো অঞ্চলটিকে বন্যামুক্ত রাখা এবং সে কারণে এ খালগুলোর সাথে বাঁধ দিয়ে পানি পরিশোধিত করার জন্য ট্রিটমেন্ট প্লান্ট থাকবে।
৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর একটি বৈঠকে প্রকল্পটির অনুমোদন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এ পরিবেশবিদ বলেন, "এটা হওয়া প্রয়োজন কারণ যখন খালগুলো উদ্ধার করা হবে, তখন এর সাথে সংযুক্ত খালগুলোতে একটি ব্লু-নেটওয়ার্ক সৃষ্টি হবে।"
তিনি আরও বলেন, "ঢাকার উন্নয়নের জন্য আরও এ ধরনের জলকেন্দ্রিক প্রকল্প দরকার।"
তবে প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকার ১৭৩ একর জমির মধ্যে ১৭০ একরই বেদখলে থাকায় এটির বাস্তবায়নে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) কর্তৃপক্ষ বলছেন, অবৈধ দখলদারদের অপসারণের পর তারা আগামী বছর থেকে ইকোপার্ক নির্মাণ শুরু করবেন।
ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, "অবৈধ দখলদারদের অনেকেই রাজনৈতিকভাবে যুক্ত। তবে আমরা ইতোমধ্যেই উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করেছি।"
রিটেনশন পন্ডের সাথে মিশেছে কল্যাণপুরের ৫টি খাল। কিন্তু, গত দুই দশক ধরে বেসরকারি অবৈধ স্থাপনা ও আবাসিক এলাকায় বেদখল হয়েছে খাল ও জলাধারের জমি।
রিটেনশন পণ্ড (মূল জলাধারের) পাশের একটি পাম্প হাউজের চারপাশে এখন গড়ে উঠেছে বেশকিছু স্থাপনা, আর পরিত্যাক্ত জলাধার যেগুলো কচুরিপনা আর বর্জ্যেই নিমজ্জিত থাকে।
প্রায় ১৮২ একর জমির উপর বিস্তৃত প্রস্তাবিত ইকোপার্কটি এলাকার খালগুলিকে রক্ষা করবে এবং জল-নিষ্কাশন প্রবাহিত রাখবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ।
প্রকল্পের একটি শোধনাগার নগরীতে পরিশোধিত পানিও সরবরাহ করবে।
ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ গত বছরের ডিসেম্বরে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য শহরের ২৬টি খাল দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করে।
এরপর থেকে সিটি কর্পোরেশনগুলো খালগুলো পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে।
পরিবেশবিদরা বলছেন, ঢাকার অন্যান্য খাল পুনরুদ্ধারসহ কল্যাণপুরের ইকোপার্কটি সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে, চিরতরে জলাবদ্ধতার হাত থেকে বাঁচবে নগরবাসী।
এক নজরে পুরো প্রকল্প:
প্রায় ১০টি জোনে বিভক্ত সম্পূর্ণ প্রকল্পটিতে রয়েছেধরনের উন্নয়নমূলক কাজ। এর মধ্যে থাকছে- হাঁটার রাস্তা, সাইকেল লেন, প্রজাপতি ও পাখি পার্ক, কৃষি উদ্যান, খালের পাড় উন্নয়ন, বাস্তুসংস্থান সংস্কার, পরোক্ষ বিনোদন (যেমন: জগিং ট্র্যাক, শিশুদের খেলার জায়গা, বন্যার প্রভাব প্রশমন, বর্জ্য নিষ্কাশন ও ব্যবস্থাপনা (ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও জলাধারের সঙ্গে বর্জ্য নিষ্কাশনের যোগাযোগ পয়েন্ট), ডেনসিটি রিলিফ বা উন্মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক একীকরণ ও বিচার, পুনর্বাসন ও অগ্নি-নির্বাপণের জলাধারের জোন।
জোনগুলোর মধ্যে এক নম্বর জোনে থাকবে প্রাকৃতিক শিক্ষণ ও যুব উন্নয়নের বেজ ক্যাম্প। দুই নম্বর জোনে থাকছে- ফুড কোর্ট, বোট ক্লাব ও ফেরিস হুইল। চার নাম্বার জোনে থাকবে জীববৈচিত্র্য দ্বীপ, মৌমাছি পালন কেন্দ্র। পাঁচ নম্বর জোনে থাকবে, ভাসমান রেস্তোরাঁ ও ফুড হাট। ছয় নাম্বার জোনে- পদ্ম পুকুর, ফুট ব্রিজ আর সিটিং কিয়স্ক।
আট নাম্বার জোনে থাকবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন- বিএডিসি'র নিজস্ব হিমাগার ও বীজ সংরক্ষণের গুদাম।
৯ নাম্বার জোনে হবে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বহুমুখী সম্মেলন কেন্দ্র ও প্রদর্শনী হল। ১০ নাম্বার জোনে হবে সোলার একুয়াটিক ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ও পার্ক।
উচ্ছেদকৃতদের পুনর্বাসন:
সাত নাম্বার জোনে হবে বস্তিবাসী অবৈধ দখলদারদের পুনর্বাসন এলাকা। । এরমধ্যে পরিবার প্রতি ৯০০ স্কয়ার ফুট বরাদ্দ করে ২০০ পরিবারের জন্য আবাসিক এলাকা থাকবে, যেখানে থাকছে শিশুদের খেলার জায়গা, বোট ক্লাব, ফুট ব্রিজসহ অন্যান্য সুবিধা।
ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, উচ্ছেদকৃতদের পর্যায়ক্রমে সেখানে পুনর্বাসন করা হবে।