জুয়া খেলতে সাড়ে তিন কোটি টাকা লুট করলেন ব্যাংক কর্মকর্তা
অনলাইনে জুয়া খেলতে ব্যাংক থেকে তিন কোটি ৪৫ লাখ লুট করেছেন রাজশাহীর এক ব্যাংক কর্মকর্তা। অনলাইনে ক্রিকেটে জুয়া খেলতে গত দুই বছর ধরে ব্যাংক থেকে এ টাকাগুলো সরিয়েছেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত ধরাও পড়েছেন। মামলার পর ওই কর্মকর্তাকে পুলিশি হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
অভিযুক্ত ওই ব্যাংক কর্মকর্তার নাম শামসুল ইসলাম ওরফে ফয়সাল। তিনি নগরীর সাগরপাড়া এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে। তিনি প্রিমিয়ার ব্যাংকের রাজশাহী শাখায় ক্যাশ ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন।
অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গত ২৪ জানুয়ারি রাতে তার বিরুদ্ধে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় মামলা করেন প্রিমিয়ার ব্যাংকের জোনাল ম্যানেজার সেলিম রেজা খান। গ্রেফতারের পর ওই মামলায় তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে তোলা হবে।
নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ বলেন, অভিযুক্ত তাদের হেফাজতে রয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে বুধবার কিংবা বৃহস্পতিবার আদালতে তোলা হবে। প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ তিনি জানিয়েছেন ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে অনলাইনে জুয়া খেলতে গিয়ে তিনি অল্প অল্প করে এ টাকাগুলো ব্যাংক থেকে সরিয়েছেন। তিনি আইপিএলসহ অনলাইনে সব ধরনের ক্রিকেটের উপর জুয়ায় লগ্নি করতেন। এতে কখনো কখনো জিতলেও প্রায়ই হারতেন। জুয়াতে হারার পর তিনি ব্যাংক থেকে টাকাগুলো সরাতেন।
ফয়সালের উদ্ধৃতি দিয়ে ওসি আরও বলেন, তিনি টাকার বান্ডিলের প্রথম ১০টা লাইন ঠিক রাখতেন। পরের লাইনগুলোর মধ্যে থেকে কোনোটা থেকে দুই বান্ডিল, কোনোটা থেকে এক বান্ডিল- এভাবে টাকাগুলো সরাতেন। যেহেতু টাকার বান্ডিলের প্রথম লাইনটা ঠিক থাকতো তাই ব্যাংক থেকে টাকা সরিয়ে নেওয়া হলেও কোনো কর্মকর্তা বুঝতে পারেননি। এমনকি কেউ সন্দেহও করেননি।
ব্যাংকটিতে সব সময় প্রায় ১৫ কোটি টাকা থাকতো। গত বৃহস্পতিবার ভল্টে রাখা টাকা গণনার পর তিন কোটি ৪৫ লাখ টাকা কম পাওয়া যায়। এ সময় ওই কর্মকর্তা টাকা সরানোর কথা স্বীকার করেন। তবে প্রথমে দুই বন্ধুকে ভোল্ট থেকে এক কোটি করে দুই কোটি টাকা দেওয়ার কথা বললেও জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেন পুরো টাকা তিনি অনলাইনে জুয়া খেলে হেরেছেন।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সন্ধ্যা ৬টার দিকে লেনদেন শেষে ক্যাশ মেলাতে গিয়ে তারা পৌঁনে তিন কোটি টাকার হিসাবে মেলাতে পারেননি। তখনই ক্যাশ ইনচার্জ শামসুল ইসলামকে তারা ধরে বসেন। রাত ১২টার দিকে তারা ওই কর্মকর্তাকে থানায় নিয়ে যান।
নগরীর বোয়ালিয়া থানা পুলিশের ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ বলেন, তারা রাত ১২টার দিকে শামসুল ইসলামকে থানায় নিয়ে আসেন। কথাবার্তা বলে মামলা করতে রাত দেড়টা বেজে যায়। থানায় আনার পর তিনি টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। এখন সেই টাকা ফিরিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন। রিমান্ড শেষে তার বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।