দুগ্ধ খামারিদের পাশে র্যাব
সিরাজগঞ্জ ও পাবনায় করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দুগ্ধ খামারিদের বাঁচাতে গত দুই সপ্তাহে অন্তত এক লাখ লিটার দুধ কিনেছেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১২ সদস্যরা। ন্যায্য দামে দুধ বিক্রি করতে পেরে একদিকে যেমন খামারিরা বড় অংকের লোকসান থেকে রক্ষা পেয়েছেন, অন্যদিকে কম দামে খাঁটি ঘি আর পনির পাচ্ছেন র্যাব সদস্যরা। এ ছাড়া প্রাদুর্ভাবের এই সময় অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
মিল্ক ভিটা কোম্পানি বাংলাদেশে প্যাকেট জাত দুধের চাহিদার অনেকটাই পূরণ করে সিরাজগঞ্জ ও পাবনার বিভিন্ন এলাকার খামারিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা দুধে। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে লকডাউন থাকায় দুই জেলার খামারিদের অধিকাংশই এতদিন দুধ বিক্রি করতে পারছিলেন না।
এ অবস্থায় র্যাব-১২ সদস্যরা তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা দুধ দিয়ে তৈরি করছেন ঘি আর পনির। ৪৫ টাকা লিটার দামে কেনা দুধে পনির তৈরি করতে কারিগর আনা হয় কিশোরগঞ্জ থেকে; আর ঘি তৈরি করেন পাবনার ফরিদপুর উপজেলার কারিগররা।
খামারিরা জানান, র্যাব সদস্যরা তাদের কাছ থেকে কেনার আগে বিক্রি করতে না পেরে হাজার হাজার লিটার দুধ তারা পানিতে ফেলে দিয়েছেন।
র্যাব-১২-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল খায়রুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছিলেন, আমরা যেন স্বল্প আয়ের মানুষের পাশে দাঁড়াই। এ নির্দেশনার কয়েকদিনের মধ্যে জানতে পারি, সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুরে খামারিরা দুধ বিক্রি করতে না পেরে ফেলে দিচ্ছেন, যা খুবই দুঃখজনক।
'আমি তাৎক্ষণিকভাবে র্যাব মহাপরিচালককে বিষয়টি অবগত করে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতার কথা জানাই। তিনি আমাদের উৎসাহিত করলে দুধ কেনা শুরু করি। গত দুই সপ্তাহে আমরা এক লাখ লিটার দুধ কিনেছি'- বলেন লে. কর্নেল খায়রুল ইসলাম।
তিনি আরও জানান, খামারিদের কাছ থেকে দুধ কেনায় তিনটি পক্ষ উপকৃত হচ্ছে। প্রথমত, খামারিরা বাজারমূল্যে দুধ বিক্রি করে লাভবান হয়েছেন। দ্বিতীয়ত, র্যাব ফোর্সের সদস্যরা স্বল্পমূল্যে ঘি ও পনির কিনতে পারছেন। তৃতীয়ত, করোনায় কর্মহীদের অনেকেই ঘি ও পনির তৈরির কাজ করে এ দুর্যোগের সময়ও আয় করতে পারছেন।
খামারিরা বলছেন, লকডাউনের মধ্যে তারা র্যাব সদস্যদের কাছে দুধ বিক্রি করে উপকৃত হয়েছেন। আরও কিছুদিন এভাবে দুধ বিক্রি করতে পারলে কিছুদিন আগের হওয়া ক্ষতি তারা পুষিয়ে উঠতে পারবেন।
'হাজার হাজার লিটার দুধ নিয়ে আমারা যখন বিপাকে, বিক্রি করতে না পেরে পানিতে ফেলে দিচ্ছিলাম, তখন র্যাব সদস্যরা দুধ কিনতে শুরু করেন। এখন টাকা উঠে আসছে'- বললেন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার দুধ বিক্রেতা বাদল প্রামাণিক।
'করোনার কারণে আমরা প্রায় নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছিলাম। এই সময় আমাদের পাশে দাড়ায় র্যাব। এতে দুধ আর আগের মতো নষ্ট হচ্ছে না', বললেন একই এলাকার খামারি বিপ্লব ঘোষ।
খামারিদের কাছ থেকে প্রতিদিন অন্তত তিন হাজার লিটার দুধ কিনতে চায় র্যাব। তবে দুগ্ধ উৎপাদনকারি কোম্পানিগুলো পুনরায় আবার চালু হলে তা কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। পাবনা ও সিরাজগঞ্জের ওই অঞ্চলে প্রতিদিন প্রায় আড়াই লাখ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। এরমধ্যে শাহজাদপুর, বেড়া, উল্লাপাড়া উপজেলা উল্লেখযোগ্য।