দু’দফা বন্যায় মানিকগঞ্জে গবাদিপশুর খামারিদের লোকসান সাড়ে ৩ কোটি টাকা
দু'দফা বন্যায় প্লাবিত হয় মানিকগঞ্জের সাত উপজেলার ৩৭৫ হেক্টর কৃষি জমি। ডুবে যায় কয়েক হাজার বাড়ি-ঘর। বন্যায় প্লাবিত এলাকাগুলোর সাধারণ মানুষ জেলার বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে উঠতে পারলেও বেশি বিপাকে পড়েন বাণিজ্যিকভাবে লালন-পালন করা গবাদিপশুর খামারিরা।
মানিকগঞ্জ জেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ের তথ্যমতে, জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১৬ হাজার ৫৬৩ জন খামারি রয়েছেন। চলতি মৌসুমের বন্যায় এসব খামারির মধ্যে ২৬৯ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ সময় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত পশুর সংখ্যা তিন হাজার ৫৭৫টি। এ ছাড়া খড়, ঘাস ও দানাদার খাবার এবং গবাদিপশু থাকার ঘরও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আর্থিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপন করা হয়েছে তিন কোটি ৬৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
বন্যার সময় পশুর মধ্যে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় ১৬৫টি গরু, ২০টি ছাগল ও পাঁচটি ভেড়া; শিবালয়ে ৮৫টি গরু, ১২০টি ছাগল ও ৬০টি ভেড়া; ঘিওরে ৫০১টি গরু, ৩৫০টি ছাগল ও ৭০টি ভেড়া; সাটুরিয়ায় ৩৮২টি গরু, ৫৭০টি ছাগল ও ২১০টি ভেড়া; সিংগাইরে ৩০টি গরু, ১০০টি ছাগল ও ২০টি ভেড়া; হরিরামপুরে ৭৫টি গরু, ৫২টি ছাগল ও ২১০টি ভেড়া এবং দৌলতপুরে ৪০০টি গরু ও ১৫০টি ছাগল বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়।
জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা সূত্র জানায়, জেলায় প্রথম দফার বন্যা শুরু হয় ২৭ জুন, শেষ হয় ৭ জুলাই। দ্বিতীয় দফায় শুরু হয় ১১ জুলাই, শেষ হয় ১১ আগস্ট।
মানিকগঞ্জ ফ্রেন্ডস ডেইরি ফার্মের পরিচালক মো. মহিনুর রহমান বলেন, মানিকগঞ্জ পৌরসভা এলাকায় তার ফার্মে ছোট-বড় মিলিয়ে শতাধিক গবাদিপশু রয়েছে। এসব গরুর জন্য আশেপাশের প্রায় ২০ বিঘা জমিতে তিনি ঘাস বপন করেছিলেন।
'কিন্তু বন্যার পানিতে জমি ডুবে যাওয়ায় সব ঘাস পচে যায়। তাই শুধু খড় ও দানাদার খাবার দিয়ে এখন গবাদিপশুগুলো লালন-পালন করা হচ্ছে', বলেন তিনি। সব মিলিয়ে বন্যায় তার কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে অভিমত মহিনুরের।
সাটুরিয়া উপজেলার ক্ষুদ্র খামারি ময়নাল মিয়া জানান, ছোট-বড় মিলিয়ে ১০টি গরু রয়েছে তার। গরুগুলোর জন্য বাড়ির পাশের তিন বিঘা জমিতে ঘাস বপন করেছিলেন। বন্যায় সব ঘাস নষ্ট হয়ে যায়। আগে কুড়ার দাম কেজিপ্রতি ১২ টাকা থাকলেও এখন ১৫ টাকা। আর ভূষি ছিল ৩৩ টাকা, এখন ৩৭ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
ময়নাল জানান, এখন বাড়তি দাম দিয়ে কুড়া-ভূষি ও খড়ের ওপর নির্ভর করে তিনি গবাদিপশুগুলো পালন করছেন। এতে তার কমপক্ষে লাখখানেক টাকার লোকসান হয়েছে।
একই উপজেলার ধানকোড়া ইউনিয়নের খামারি আবুল হোসেন জানান, বন্যায় গোয়াল ঘরে পানি উঠে যাওয়ায় প্রতিবেশি এক ব্যক্তির বাড়িতে গাভী রাখেন তিনি। সেখানে গাভী পাতলা পায়খানায় আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সেবা দেওয়া হয়। এরপরই আবার বাছুরের নাভি ফুলে পোকা বের হতে থাকে। গাভী ও বাছুরের চিকিৎসা বাবদ প্রায় চার হাজার টাকা খরচ হয় বলে জানান তিনি।
হরিরামপুর উপজেলার লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের সেলিমপুর গ্রামের সাত্তার মোল্লা জানান, পদ্মার পানিতে গ্রামের বেশির ভাগ ঘর-বাড়ি ডুবে যায়। কৃষি কাজের পাশাপাশি চারটি গরু পালন করতেন তিনি। বন্যার পানিতে গরুর ঘরে পাঁচ থেকে ছয় ফুট পানি উঠে। এ সময় তিনি গরুগুলো বিক্রি করে দেন।
'পরে বন্যার পানি কমে যাওয়ার সময় আধা পাকা গরুর ঘরটি ভেঙে যায়। এতে আমার অর্ধলক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়', যোগ করেন সাত্তার।
এদিকে, দৌলতপুর উপজেলার আফাজ এগ্রিকালচারাল ফার্মের পরিচালক আবদুল মজিদ জানান, তার খামারে ৫০টি গরু ছিল। বন্যার পানিতে খামার ও তার চারপাশের এলাকা ডুবে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে তিনি ৪০টি গরু বিক্রি করে দেন। এতে তার লোকসান হয় কমপক্ষে চার লাখ টাকা। এ ছাড়াও গবাদিপশু থাকার ঘর নষ্ট হয়।
মানিকগঞ্জ জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুল ইসলাম বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের তালিকা করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। এসব খামারিদের লোকসান কাটিয়ে উঠতে প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়ে পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।