দেবাশীষের সৎকার করলেন ইউসুফ
মারাত্মক প্রাণঘাতী রোগ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারানো ময়মনসিংহের একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষের সৎকার করার জন্য আত্মীয়স্বজনরা এগিয়ে না আসায় নিজেই উদ্যোগ নিয়ে তা সম্পন্ন করেছেন মুসলিম এক ব্যক্তি।
রোববার ময়মনসিংহের এসকে হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডে মৃত্যুবরণ করেন ময়মনসিংহ জেলা জজ আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ উমা দাসের স্বামী ড. দেবাশীষ।
শশ্মানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করার জন্য তার স্ত্রী ছাড়া পরিবার কিংবা নিকটজন কেউ নেই; এমন খবর পেয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন এর ময়মনসিংহ মহানগর সম্পাদক ও সমাজকর্মী আলী ইউসুফ শেষকৃত্যের উদ্যোগ নেন।
ইউসুফ ও তার সঙ্গে যোগ দেওয়া স্বেচ্ছাসেবকের সহায়তায় রোববার বিকেলে ময়মনসিংহ সদরের শশ্মানে ওই মৃত ব্যক্তির শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
এ বিষয়ে আলী ইউসুফ বলেন, করোনা আমাদের কতটা অসহায় করেছে আজ তার প্রমাণ পেলাম।
তিনি বলেন, "ঘটনাটির খবর যখন আমার কাছে আসে তখনই ঠিক করলাম দায়িত্ব নিতে হবে। খুব দ্রুতই আমি কয়েকজন সেচ্ছাসেবককে সঙ্গে নিয়ে শশ্মানে যাই। দেখলাম করোনাকালে অবস্থা এমন হয়েছে যে, সনাতন ধর্মের একজন মৃত মানুষের মুখাগ্নি করার কার্যক্রমে তার আপনজন কেউ নেই। শুধু স্ত্রী আছেন সঙ্গে। তাই আমরাই নিহতের মরদেহ চিতায় তুলি ও আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে সহযোগিতা করি।"
সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার পর মৃত ব্যক্তির মুখাগ্নি করেন তার স্ত্রী উমা দাস।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনও শেষকৃত্য সম্পন্ন কাজে সাহায্য করেছে বলে জানান সমাজকর্মী ইউসুফ।
এই কাজে ইউসুফের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ও স্বেচ্ছাসেবক বিমল পাল, সাফরান, আশরাফ, শ্যামল পাল, সুজন এবং বিনয় দত্ত।
মুক্তিযোদ্ধা বিমল পাল বলেন, "কে কোন ধর্মের অনুসারী, সেটি বাংলাদেশে মুখ্য কোনো বিষয় নয়। আমরা সবাই মানুষ, যারা একে অপরের বিপদে এগিয়ে আসি। সম্প্রীতির মেলবন্ধনই আমাদের ঐতিহ্য।"
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের ময়মনসিংহ আঞ্চলিক সমন্বয়ক শিব্বির আহমেদ লিটন বলেন, "করোনাকালের এই সময়ে মৃত ব্যক্তির দাফন বা সৎকারের কাজে স্বেচ্ছাসেবীরা যেভাবে এগিয়ে এসেছে তা প্রশংসনীয়। নিজেরা ঝুঁকিতে পড়বে জেনেও তারা কাজটি করেছে, যেখানে ধর্ম কোনো বাধা নয়।"