দেশে করোনার ভ্যাকসিন উৎপাদনের পূর্ণ পরিকল্পনা চেয়েছে সংসদীয় কমিটি
দেশে সরকারিভাবে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন উৎপাদনে একটি পূর্ণ পরিকল্পনা চেয়েছে সংসদীয় কমিটি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশের সব নগারিককে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে প্রতিবেদন আগামী বৈঠকে জমা দিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
কমিটি চায় আগামী ছয় থেকে নয় মাসের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় টিকা বোতলজাত শুরু হোক।
বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়।
সংসদীয় কমিটির মেম্বার ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "সরকার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশেই যেন ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে পারে সেজন্য আমরা পরিকল্পনা চেয়েছি। দেশেই ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রস্তুতি,খরচ সব বিষয়ে পূর্ণ পরিকল্পনা কমিটিকে জমা দিবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়"। এসেনশিয়াল ড্রাগসের গোপালগঞ্জ ইউনিট ভ্যাকসিন তৈরির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে কমিটিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেশে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন উৎপাদন কার্যক্রম বাস্তবায়নে তারা দুটি কমিটি গঠন করেছে।একটি হচ্ছে উপদেষ্টা কমিটি এবং অন্যটি কারিগরি কমিটি।
সরকারের এই দুই কমিটির পাশাপাশি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিও একটি পৃথক কমিটি গঠন করেছে। ওই কমিটিকেও ভ্যাকসিন বোতলজাতকরণ বা উৎপাদনের বিষয়ে এক মাসের মধ্যে বিস্তারিত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিম সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশে টিকা উৎপাদনের আমরা একটি কমিটি করে দিয়েছি। এই কমিটি আগামী এক মাসের মধ্যে বিস্তারিত প্রতিবেদন দেবে। এরপর সংসদীয় কমিটি এটা নিয়ে আলোচনা করবে। আমরা চাই ৬ থেকে ৯ মাসের মধ্যে আমরা ভ্যাকসিন বোতলজাত করে সরবরাহ করা হবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা আপাতত ভ্যাকসিন বোতলজাত করতে চাচ্ছি। তবে, সম্ভব হলে এবং পেটেন্ট পেলে এখানেই আমরা ভ্যাকসিন প্রস্তত করবো।
গত ১৭ আগস্ট সংসদীয় কমিটি বৈঠকে আগামী ছয় মাসের মধ্যে দেশে সরকারিভাবে করোনাভাইরাসের টিকা উৎপাদনের সুপারিশ করে।
গত জুন মাসে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সরকারিভাবে টিকা উৎপাদনের বিষয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, গত এপ্রিল মাসে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব শেফিল্ডের গবেষক সানজান কে দাস স্বাস্থ্য সচিবের কাছে সরকারি পর্যায়ে টিকা উৎপাদনের লক্ষ্যে অবকাঠামো তৈরি করতে একটি প্রস্তাব পাঠান। সানজান দাসের টিকা তৈরির প্রযুক্তির আরএনডি ও প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়েছে বলে কার্যপত্রে বলা হয়।
সরকারি প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগসের বিদ্যামান কিছু অবকাঠামো এবং নতুন কিছু যন্ত্রপাতি কিনলে টিকা উৎপাদন সম্ভব বলে কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়। বিষয়টির কারিগরি দিক পর্যালোচনার ব্যাপারে মন্ত্রণালয় এখন বিবেচনা করছে।
কমিটির বৃহস্পতিবারের বৈঠকে সানজান দাস উপস্থিত ছিলেন।
সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট বিল- ২০২১ প্রয়োজনীয় সংশোধনীসহ রিপোর্ট চূড়ান্ত করে সংসদে উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সব ঘোষণা এ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রদানের সুপারিশ করা হয়। কমিটি সুপারিশগুলোর কপি সকল মন্ত্রণালয়ে পৌছানোর সুপারিশ করে।
শেখ ফজলুল করিম সেলিমের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, আফম রুহুল হক, মুহিবুর রহমান মানিক, মো. মনসুর রহমান, মো. আব্দুল আজিজ, সৈয়দা জাকিয়া নুর, রাহগির আলমাহি এরশাদ এবং মো. আমিরুল আলম মিলন অংশ নেন।
২৪ ঘণ্টায় দৈনন্দিন মৃত্যুসংখ্যা কমে ১০২
দেশে গত কয়েক সপ্তাহে করোনাভাইরাসে প্রাণহানির সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ভাইরাসটির কারণে মারা গেছেন আরও ১০২ জন।
গত ৬৩ দিনের মধ্যেই এটি এ ভাইরাসে একদিনে সর্বনিম্ন মৃত্যুর ঘটনা।
এদিকে, কোভিড-১৯ শনাক্তের হার কমে ১৩.৭৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা গত দুই মাসেরও বেশি সময়ের মধ্যে সর্বনিম্ন। অবশ্য, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪,৬৯৮ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
এ নিয়ে দেশে কোভিড-১৯ শনাক্ত হলো ১৪,৮২,৬২৮ জনের শরীরে। আর এই ভাইরাসে প্রাণহানি ঘটল ২৫,৭২৯ জনের।