ধর্মীয় সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীকে নিরাপত্তা দিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে: রানা দাশগুপ্ত
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেছেন, "সারাদেশে হামলার ঘটনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে সরকারের একটি দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। এ দূরত্ব অবসানে তাদের ক্ষোভ প্রশমন ও নিরাপত্তা দিতেও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে সরকার।"
শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে চট্টগ্রাম জেলা সৎসঙ্গ আয়োজিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভে অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রানা দাশগুপ্ত বলেন, "কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠী যদি নিজেদের একক হিসেবে মনে করে, তবে সেটি নতুন সংকটের জন্ম দিতে পারে। আমরা চাই না এই সংকটের উদ্ভব ঘটুক।"
"সরকার এ নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হলে দেশে বিপর্যয় নেমে আসবে। এই বিপর্যয়ের জন্য আমরা বাঙ্গালিরা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করি নাই", যোগ করেন অ্যাডভোকেট দাশগুপ্ত।
তিনি বলেন, "শুধু পুলিশের উপর দায়িত্ব দিয়ে বা দায় চাপিয়ে নিস্তার পাওয়া যাবে না। সাম্প্রদায়িক শক্তিকে মোকাবেলায় পুলিশ এবং জনতার ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ করতে হবে। দেশের গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো একসঙ্গে মোকাবেলা করলেই ধর্মীয় সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠী রক্ষা পেতে পারে।"
কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ রাখার ঘটনায় শনাক্ত যুবক ইকবাল হোসেনকে 'ভবঘুরে' বলা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে রানা দাশগুপ্ত বলেন, "যখনই কোনো ঘটনায় এমন কেউ ধরা পড়ে, তখন কখনো তাদের হয় পাগল বলে, না হলে বলে ভবঘুরে।"
মানববন্ধন থেকে শনিবার নগরের আন্দরকিল্লা মোড়ে গণঅনশন কর্মসূচিতে সবাইকে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান রানা দাশগুপ্ত।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার পালিত বলেন, "সারাদেশে এখনো হামলা অব্যাহত আছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর সাম্প্রদায়িক শক্তির এ হামলা মেনে নিতে পারিনা।"
ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেসের (ইসকন) বিভাগীয় সম্পাদক চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বলেন, "বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে ইতোমধ্যেই বৈশ্বিক আন্দোলন শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে যাতে সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথাচাড়া দিতে না পারে সে জন্যই এই আন্দোলন। কারণ সরকার এর মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে।"
এসময় তিনি সারাদেশে ক্ষতিগ্রস্ত মণ্ডপ-মন্দিরগুলো সংস্কার না করে পুণঃনির্মাণের দাবি জানান।
চট্টগ্রাম রামকৃষ্ণ মিশন সেবাশ্রমের সম্পাদক স্বামী শক্তিনাথানন্দ বলেন, "বর্তমানে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি যেমন বিনষ্ট হচ্ছে, তেমনি শান্তি ও প্রগতির পথও রুদ্ধ করতে চলেছে।"
চট্টগ্রাম জেলা সৎসঙ্গ প্রধান দোলন কুমার দে বলেন, "এটি কোনো একক ধর্মীয় জাতির দেশ নয়। হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টান সবাই এ দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে।"
এসময় তিনি ধর্মীয় সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর নিরাপত্তার জন্য সরকারের কাছে 'সংখ্যালঘু নিরাপত্তা আইন' এর দাবি জানান।