নিতান্তই সাধারণ একটি বাজেট: বিএনপি
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2020/06/12/bnp_logo.jpg)
মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যে বৃহস্পতিবার বিকেলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন তা নিতান্তই একটি সাধারণ বাজেট বলে মনে করছে বিএনপি।
বাজেট পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় শুক্রবার বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, "মানুষের জীবন ও অর্থনীতিকে এ মহাসংকট থেকে উদ্ধারের জন্য যেখানে প্রয়োজন ছিল প্রথাগত গতানুগতিক বাজেট কাঠামো থেকে বেরিয়ে এসে একটি "বিশেষ করোনা বাজেট", তা না করে অর্থমন্ত্রী গতকাল জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লক্ষ ৬৮ হাজার কোটি টাকার একটি গতানুগতিক অবাস্তবায়নযোগ্য বাজেট ঘোষণা করেছেন। এ বাজেট জাতিকে হতাশ করেছে।"
গত ৯ জুন বাংলাদেশ বিএনপির পক্ষে তারা সুনির্দিষ্ট পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা সমৃদ্ধ তিন বছরের একটি মধ্যমেয়াদি বাজেট রূপরেখা দিয়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, "অর্থমন্ত্রী আমাদের সুপারিশ ও দেশের অধিকাংশ শীর্ষ অর্থনীতিবিদদের অভিমতকে উপেক্ষা করে প্রত্যাশিত 'অসাধারণ বাজেটের' স্থলে নিতান্তই একটি 'সাধারণ বাজেট' এর ঘোষণা দিলেন।"
বিএনপি মহাসচিবের পাঠানো এই বিবৃতিতে বাজেটের সমালোচনা নিয়ে যে দিকগুলো উঠে এসেছে তা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল।
টেকসই অর্থনৈতিক ভিত্তি গড়ে তোলার কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নেই
বিএনপি মহাসচিব বিবৃতিতে বলেন, এই বাজেটে করোনা কাটিয়ে একটি টেকসই অর্থনৈতিক ভিত্তি গড়ে তোলার কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নেই। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে প্রত্যাশিত অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি। বাজেটে বর্তমানে বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে কার্যকর সুশাসন, স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ এবং সর্বস্তরে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার কোন বিকল্প নেই।
স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ নিয়ে হতাশা
বিবৃতিতে বলা হয়, জাতি আশা করেছিল এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়া হবে। কিন্তু সবাইকে হতাশ করে অর্থমন্ত্রী স্বাস্থ্য সেবা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৩ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা বাড়িয়ে ২৯ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেন।
এছাড়া করোনা মোকাবেলায় ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দের প্রস্তাব করা হলেও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেয়া হলো জিডিপির মাত্র ১.৩% মাত্র। অথচ স্বাস্থ্য খাতে আমরা জিডিপির ৫% বরাদ্দের প্রস্তাব করেছিলাম। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এর চেয়ে অধিক অর্থ absorb করতে পারবে না এমন খোঁড়া যুক্তিতে স্বাস্থ্য খাতে অধিক বরাদ্দ দেয়া হয়নি বলে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা সৃষ্টি করে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করাই ছিল প্রত্যাশিত।
সবচেয়ে বড় কথা, বরাদ্দ যাহাই হোক না কেন প্রয়োজন স্বচ্ছ দুর্নীতিমুক্ত ব্যবহার। সে বিষয়ে বাজেটে কোনো দিকনির্দেশনা নেই। বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে প্রকৃত অর্থে কোন গঠনমূলক ব্যবস্থা কিংবা সংস্কার প্রস্তাবও নেয়া হয়নি। এমনকি যেসব প্রকল্প নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে সেসব প্রকল্পগুলোকেই সরকারের বিশেষ উদ্যোগ হিসেবে দেখানো হয়েছে। অথচ পরিবহন খাত ও বিদ্যুৎ খাতসহ এমন অনেক খাতে অনেক বেশি পরিমাণ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যা এ মুহূর্তে প্রয়োজন ছিল না।
বিদ্যুত খাতে বিপুল বরাদ্দের দরকার ছিল না
বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারি ভাষ্য মতে, বর্তমানে বিদ্যুতের স্থাপিত ক্ষমতা ২০ হাজার ২৭৯ মেগাওয়াট। তাই এ অসময়ে তোড়জোড় করে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য বিপুল অর্থ বরাদ্দের কোনো দরকার ছিল না। ১২০০ মেগাওয়াট রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ১ লক্ষ ১৩ হাজার কোটি টাকায় দেশের সবচেয়ে একক ব্যয়বহুল চাপযুক্ত জল-চুক্তি প্রকল্প যা রাশিয়ান এক কোম্পানি কর্তৃক বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কিছু সময়ের জন্য পিছিয়ে দিয়ে ঐ অর্থ স্বাস্থ্য খাতসহ কর্মসংস্থান ও খাদ্য নিরাপত্তা খাতে ব্যয় করা যেত। তা করা হয়নি কারণ রূপপুর কেন্দ্রের দুর্নীতির সুযোগ বন্ধ করতে চায়নি সরকার।
প্রস্তাবিত বাজেটে করোনার ঝুঁকি মোকাবেলায় যে কাঠামো থাকা দরকার সেটি পরিপালিত হয়নি।
বাজেটে কেবল 'সংখ্যার' হিসাব মিলানো হয়েছে
বিএনপির বিবৃতিতে বলা হয়, বাজেটের আয় ও ব্যয়ের গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। বাজেটে কেবল 'সংখ্যার' হিসাব মিলানো হয়েছে। বাজেটে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ৩ লক্ষ ৮২ হাজার ১১ কোটি টাকা। তন্মধ্যে এনবিআরকেই আয় করতে হবে ৩,৩০,০০০ কোটি টাকা (অর্থাৎ ৫০% এর অধিক প্রবৃদ্ধি) যা বাস্তবতা বিবর্জিত। NBR এ অর্থ আহরণ করতে ব্যর্থ হবে এবং তাতে বাজেট ঘাটতির পরিমাণও বেড়ে যাবে। ব্যাংকগুলোর পক্ষে প্রস্তাবিত Deficit financing এর ৮৫ হাজার কোটি টাকা যোগান দেয় সম্ভব হবে না। NBR এর পক্ষে এত বিপুল রাজস্ব আহরণে ব্যর্থতা ও বাংকগুলোর পক্ষে ঘাটতি অর্থায়নে অক্ষমতার কারণে বাজেট মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য।
ব্যাংকিং খাতকে আরো সংকটের দিকে ঠেলে দিবে
ব্যাংকিং খাত নিয়ে বিএনপির এই বিবৃতিতে বলা হয়, বাজেটে ব্যাংকিং খাতসহ অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের কোন সুনির্দিষ্ট সংস্কার প্রস্তাব নেই। বরং শীর্ষ ঋণ খেলাপিদের ঋণ পরিশোধে আরও সময় বৃদ্ধি করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এটা তো কোন সংস্কার নয়। যা ব্যাংকিং খাতকে আরো সংকটের দিকে ঠেলে দিবে। আর্থিক শৃঙ্খলা আরো ভেঙে পড়বে।
জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার নির্ধারণ 'প্রতারণার শামিল'
সরকার বলছে চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৫%। সম্প্রতি বিশ্ব ব্যাংকের "গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টাস ২০২০ শিরোনামের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে চলতি বছরে প্রবৃদ্ধি ১.৬% নেমে আসবে এবং ২০২০-২১ বছরে হবে মাত্র ১ শতাংশ"।
অর্থমন্ত্রী এ বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার নির্ধারণ করেছেন ৮.২%। আমদানি, রপ্তানি, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ইত্যাদি macroeconomic indicator গুলো আলোচনা করলেই স্পষ্ট যে ৮.২% প্রবৃদ্ধি অর্জন নিতান্তই কল্পনাপ্রসূত। বিনিয়োগ দরকার ৩২-৩৪ শতাংশ। যা কঠিন এবং অসম্ভব। জিডিপি ও রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা দৃশ্যমানভাবেই প্রতারণার শামিল।
দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বার্থ উপেক্ষিত হয়েছে
বিবৃতিতে বলা হয়, এ বাজেটে করোনাকালীন সময়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে দিন আনে দিন খায়- এ শ্রেণীর মানুষের জন্য এবং বেকারত্ব মোকাবেলায় কোনো গঠনমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বাজেটে সীমিত আয়ের বৃহৎ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বার্থকে উপেক্ষা করা হয়েছে। করোনায় সাধারণ মানুষের আয়ে ঝুঁকি বাড়লেও সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণে বরাদ্দ আগের অর্থবছরের তুলনায় কমেছে ০.২% যা মোট বাজেটের ৪.৭ শতাংশ, চলতি বাজেটে ছিল তা ৪.৯% । পল্লী সমাজসেবা কার্যক্রমের জন্য প্রণোদনা প্রদান করা হবে মাত্র ১০০ কোটি টাকা যা নিতান্তই অপ্রতুল।
বাজেটে কিছু প্রণোদনার কথা উল্লেখ করলেও ঐসব আর্থিক প্রণোদনা নিতান্তই ব্যাংক লোন। রুগ্ন ব্যাংকিং খাত এ অর্থ বহন করতে না পারলে প্রস্তাবিত আর্থিক প্রণোদনা মিলবে না। মিললেও সরকারদলীয় কিছু লোকজনই এতে উপকৃত হবে। এ জন্য দরকার ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বিশেষ তহবিলের যোগান দেয়া। কিন্তু তা করা হলো না।
প্রবাসীদের জন্য সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই
বিবৃতিতে বলা হয়, অর্থমন্ত্রী বিদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির কথা বলেছেন। অথচ প্রবাসীদের destination হিসেবে পরিচিত প্রতিটি দেশই করোনা আক্রান্ত হয়ে মন্দাকবলিত। তাছাড়া কর্মহীন প্রবাসীদের দেশে পুনর্বাসন ও আত্মনির্ভরশীল করে তোলার কোনো সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই এ বাজেটে।
পোশাক খাতের অস্থিরতা কাটাতে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি
বাজেটে পোশাক খাতের অস্থিরতা কাটানোর জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে বিবৃতিতে দাবি করেন ফখরুল।
সেখানে বলা হয়, ৬ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যে গার্মেন্টসগুলো ফিরে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু এ সময়টুকু টিকে থাকার মতো সাপোর্ট তাদের দিতেই হবে। তা না হলে পোশাক খাত মুখ থুবড়ে পড়ার আশংকা রয়েছে। তবে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে হলে কেবলমাত্র গার্মেন্টস খাতের ওপর ভরসা করলে চলবে না। আমাদের অর্থনীতিকে ডাইভার্সিফাই করতে হবে। কিন্তু সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা প্রস্তাবিত বাজেটে নেই।
দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে
বিবৃতিতে বলা হয়, বাজেটের বড় অংশ মেগা প্রকল্পগুলোকে দেয়া হয়েছে যেগুলো এরই মধ্যে দুর্নীতির কারণে প্রশ্নবিদ্ধ। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব প্রকল্পকে বাজেটে আনয়নের প্রয়োজন ছিল না। দুর্নীতির যে ধারা চলমান, সেটাকে অব্যাহত রাখাই এর কারণ বলে আমরা মনে করি। তা ছাড়া কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ এ বাজেটে দেয়া হয়েছে সেটাও দুর্নীতিকে চলমান রাখার আরেকটি প্রয়াস মাত্র। আবাসন খাতের ফ্ল্যাটের পাশাপাশি এবার ১০% বাড়তি শুল্কে জমি কেনা ও উন্নয়ন, বিল্ডিং, নগদ টাকা, ব্যাংকে রক্ষিত টাকা এবং স্টক ডিভিডেন্ড, বন্ড ও শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করে অনৈতিকতাকে বৈধতা দেয়া হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রশ্ন করার বিধানটিও উঠিয়ে দিতে যাচ্ছে যা অসাংবিধানিক এবং কোনোভাবেই কাম্য নয়। দেশে যে আইনিই থাকুক না কেন আয়কর কর্তৃপক্ষসহ অন্য কোন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবে না। অর্থমন্ত্রী কালো টাকা সাদা করাকে করদাতাদের আয়কর রিটার্নের ত্রুটি সংশোধনের সুযোগ সৃষ্টি হিসেবে অভিহিত করেছেন। "কালো টাকা অর্থনীতিরই অংশ বটে, তবে এটি অর্থনীতির মস্তিষ্কে টিউমারের মত। এই টিউমার সরাতে হবে নয়তো রোগী (অর্থনীতি) মারা যাবে" রোহিনটন মিস্ত্রির এ বানী অর্থমন্ত্রী অবশ্যই জানেন, তবুও তিনি কালো টাকা সাদা করার দুয়ার খুলে দিলেন।
মূলত গত এক দশককালের অধিককাল ব্যাপী সরকারদলীয় যে সকল ব্যক্তি নজিরবিহীন দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে তাদের টাকা সাদা করার জন্য সরকার এবার কালো টাকা সাদা করার scope বৃদ্ধি করেছে। আমরা এহেন অনৈতিক, দুর্নীতি সহায়ক, বৈষম্যমূলক ও অসাংবিধানিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকার আহবান জানাচ্ছি। বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া লক্ষাধিক কোটি টাকার যে খতিয়ান দেশি বিদেশী সংবাদ মাধ্যমের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে তা দেশে ফিরিয়ে আনার কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
উন্নয়ন খাতের বরাদ্দ করোনা মোকাবিলায় দেওয়া যেত
বিবৃতিতে এ বিষয়ে বলা হয়, উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে দুই লাখ পাঁচ হাজার কোটি টাকা। অথচ করোনা সংকট মোকাবিলায় মাত্র ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এই উন্নয়ন খাত থেকে এক লাখ কোটি টাকা করোনা সংকট মোকাবিলায় দেয়া যেত। কারণ, উন্নয়ন খাতে শুধু লুটপাট হয়।
অর্থমন্ত্রী বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ২৬ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছে। বিদ্যুৎ খাতে ৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির প্রস্তাব করা হয়েছে। যার অধিকাংশই যাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেও বেসরকারি রেন্টাল প্ল্যান্টগুলোকে capacity charge পরিশোধ করার জন্য, যা নিতান্তই অনৈতিক।
বাজেটে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতে বরাদ্দ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ এখনও আম্পানের ধকল চলছে। উপকূলীয় বাঁধগুলো মেরামত হয়নি। লক্ষ লক্ষ মানুষ জলাবদ্ধ রয়েছে। অপরদিকে সামনে আরও সংকটময় পরিস্থিতি আসতে পারে। বিশেষ করে করোনার second shock. যা অনেক দেশেই হচ্ছে। এমতাবস্থায় এই দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ হ্রাস করা উচিত হয়নি বলে আমরা মনে করি।
কৃষি, ক্ষুদ্র-মাঝারি ও কুটির শিল্প গুরুত্ব পায়নি
কৃষকদের উৎপাদনের উপকরণ যেমন – বীজ, সার ইত্যাদির মূল্য হ্রাসের তেমন কিছুই বলা হয়নি বরঞ্চ রাসায়নিক সারের মুল্য গত বছরের মূল্যই বহাল রাখা হয়েছে। কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করাসহ কৃষিখাতকে যথাযথ গুরুত্বের সাথে মূল্যায়ন করা হয়নি। ক্ষুদ্র মাঝারি ও কুটির শিল্পে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ সম্পৃক্ত। এ খাতও যথাযথ গুরুত্ব পায়নি।
এমনিতেই ব্যাংকে আমানত কমে যাচ্ছে। অর্থমন্ত্রী প্রস্তাব করেছেন, ব্যাংকে ১০ লক্ষ টাকার উপরে রাখলেই ৩,০০০ টাকা কর দিতে হবে। এক কোটি টাকার উপরে থাকলে ১৫,০০০ টাকা ট্যাক্স দিতে হবে। এতে আমানত ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কারণ আমানত কারীরা নিরুৎসাহিত হবে।
কর্মসংস্থান কারিগরি শিক্ষা খাতে আরো গুরুত্ব দেয়া দরকার ছিল। শস্য বীমার কথা দীর্ঘদিন থেকে বলা হচ্ছে। এ বাজেটে অন্তত বলা উচিত ছিল তারা এ ব্যাপারে কি করবেন।
অনলাইন কেনাকাটা ও মোবাইল-ইন্টারনেট সেবার বর্তমান ব্যয় বহাল রাখার আহ্বান
বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাজেটে হাতে তৈরি খাবার, গুড়ো দুধ, অন-লাইন খাবার, অন-লাইন কেনাকাটা, মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবা খরচ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কেউ যদি ১০০ টাকার সেবা নিতে চান তাহলে ৭৫ টাকার সেবা নিতে পারবেন। ২৫ টাকা যাবে সরকারের পকেটে। মোবাইল সেবার ওপর কর প্রায় প্রতিবছরই বাড়ছে। করোনা সংকটকালে অবরোধ অবস্থায় আমরা দেখছি এ সব সেবা কত প্রয়োজনীয়। এ সময় অন-লাইন বেচাকেনা এবং মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক আরও ৫% বাড়ানো সঠিক হবেনা। আমরা অনলাইন কেনাকাটা ও মোবাইল /ইন্টারনেট সেবার বর্তমান ব্যয় বহাল রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।
স্বর্ণের দাম কমায় বিত্তবানরাই লাভবান হবে
বিবৃতিতে বলা হয়, বাজেটে স্বর্ণ আমদানিতে VAT অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এতে স্বর্ণের দাম কমবে। স্বর্ণের দাম হ্রাসের এ প্রস্তাবে জুয়েলারি দোকানের লবি এবং বিত্তবানরাই লাভবান হবে। সাধারন মানুষ এবং মধ্যবিত্তদের মধ্যে যারা সংকটকালে স্বংনালংকার বিক্রি করে দিতে বাধ্য হবেন তারা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন।
৩০ শে জুনের মধ্যে গ্যাস ও বিদ্যুতের বিল পরিশোধ না করলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে বলে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। এই সংকটকালে এই নিষ্ঠুর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।
ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহীতাদের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা বৃদ্ধি করার আহ্বান
বিএনপির বিবৃতিতে বলা হয়, সারাদেশে NGO গুলো থেকে ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহীতাদের ৩০ জুনের মধ্যে ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা বেধে দেয়া হয়েছে। করোনাকালে সংকটে নিপতিতঃ গরীব ঋণ গ্রহীতারা এতে আরও বিপদগ্রস্ত হবে। ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহীতাদের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা বৃদ্ধি করার আহ্বান জানাচ্ছি।