নির্বাচনে ‘নৌকার সমর্থন করায়’ ত্রাণের চাল বাতিল!
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে 'নৌকার প্রার্থীর সমর্থক হওয়ায়' প্রায় দুই শতাধিক অস্বচ্ছল পরিবারের ভিজিডি কার্ডের চাল বিতরণ বন্ধ করার অভিযোগ উঠেছে নির্বাচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী বিরুদ্ধে।
অভিযোগ যার বিরুদ্ধে তার নাম মো. নিজাম উদ্দিন হাওলাদার। চলতি বছরের জুনে তিনি ভোলার মনপুরা উপজেলার ২নং হাজিরহাট ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আনারস প্রতীকে বিজয়ী হয়েছিলেন। তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা।
তার ভাষ্য, আগের চেয়ারম্যান শাহরিয়ার চোধুরী দীপক; যিনি এবার পুনরায় নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছেন, তিনি ভিজিডি কার্ডে 'ব্যাপক অনিয়ম' করেছিলেন। তাই এবার 'যাচাই বাছাই' করে কার্ড দেওয়া হচ্ছে।
তবে শাহরিয়ার চোধুরী দীপক বলছেন, নির্বাচনে তার সমর্থন করার কারণেই এসব অস্বচ্ছল মানুষকে ত্রাণের চাল থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে।
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ভিজিডি কার্ডের মাধ্যমে দুস্থ ও অসহায় পরিবারগুলোকে মাসে ৩০ কেজি করে চাল দেয় সরকার। ২০২১ ও ২০২২ সালের জন্য এই ত্রাণ পেতে ওই ইউনিয়নটির ৮০৮টি পরিবারকে বাছাই করে চাল দেওয়া হচ্ছিল। তবে নতুন চেয়ারম্যান দায়িত্বে আসার পর থেকে প্রায় দুইশ'টির বেশি পরিবার ত্রাণের এ চাল আর পাচ্ছেন না।
এ বিষয়ে এলাকায় একটি মানববন্ধনও করেছে ভুক্তভোগীরা।
ইউনিয়নটির ১নং ওয়ার্ডের সোনার চর গ্রামের বাসিন্দা শিরিনা আক্তার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমাদের কার্ডে সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা ও ইউএনওর সাক্ষর রয়েছে। এই কার্ডে কোনো ধরনের ত্রুটি নেই। আগের চেয়ারম্যান এই কার্ডে পাঁচ মাসের চালও দিয়েছে। কিন্তু বর্তমানের চেয়ারম্যান এই কার্ড ভুয়া বলে আমাদেরকে টানা ৬ মাসের চাল না দিয়ে উল্টো আমাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক কার্ড ছিনিয়ে নিয়ে গেছেন।"
একই কথা বলছিলেন ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের চরফৈজুদ্দিন গ্রামের পারভিন আক্তার। তিনি বলেন, "বর্তমান চেয়ারম্যান যোগদানের পর থেকেই আমরা চালের জন্য ইউনিয়ন পরিষদে কয়েকবার গিয়েছি। আজ কাল করে চাল না দিয়ে আমাদেকে শুধু ঘুরিয়ে এখন আমাদের অনেকের কার্ডের নাকি সমস্যা আছে এই বলে আমাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক কার্ড ছিনিয়ে রেখে দিয়েছেন পরিষদের সচিব।"
"অথচ আমাদের কার্ড যদি ভুয়া কিংবা কোনো ধরনের সমস্যা থাকে তাহলে আগের চেয়ারম্যান কীভাবে এ কার্ডে পাঁচ মাসের চাল দিয়েছে। আসলে সমস্যা কিছুই না, আমরা আনারস প্রতীকের বর্তমান চেয়ারম্যানের ভোট না করে নৌকার ভোট করেছি বলেই আমাদের উপর এখন এ ধরনের অবিচার।"
হাজিরহাট ইউনিয়নের পরিষদের সচিব মো. ইয়াজ উদ্দিন বলেন, "সাবেক চেয়ারম্যানের কথার বাইরে আমি কিছু করিনি। এছাড়া বর্তমান চেয়ারম্যান আমাকে কার্ড রাখার নির্দেশ দেয়াতে আমি সকলকে বলেছি তাদের কার্ড জমা দিতে। সেই মোতাবেক কেউ কেউ জমা দিলেও বেশির ভাগ মানুষই তাদের কার্ড জমা দেয়নি।"
এ ব্যাপারে ইউনিয়নটির নবনির্বাচিত চেয়াম্যান মো. নিজাম উদ্দিন হাওলাদার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা সাবেক মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ইউনিয়নের ভিজিডি কার্ডে ব্যাপক অনিয়ম করেছেন। অধিকাংশ কার্ডের নামের সাথে অনলাইন তালিকায় গড়মিল থাকার কারণে ওই সকল কার্ড জব্দ করা হয়েছে। সেগুলো যাচাই বাছাই করে প্রকৃত কার্ডধারী লোককেই চাল দেওয়া হবে।"
এ বিষয়ে মনপুরার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামিম মিঞা বলেন, "বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। কোনো ধরনের অনিয়ম পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।"