ফোরজি সেবা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ শীর্ষ মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি
দেশের শীর্ষ দুই মোবাইল অপারেটর- গ্রামীণফোন ও রবি এবং একইসঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত অপারেটর টেলিটকও ময়মনসিংহ বিভাগে সর্বনিম্ন ফোরজি গতির ডেটা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। সবগুলো অপারেটরের মধ্যে শুধুমাত্র বাংলালিংকই এই বিভাগে প্রত্যাশিত ডেটা সুবিধা দিতে পেরেছে জনগণকে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানায়।
বিটিআরসি নির্ধারিত মাপকাঠি ৭ এমবিপিএসের বদলে বাংলালিংকের ফোরজি ডেটার গতি ছিল ৮ দশমিক ৮৮ এমবিপিএস। তবে বিভাগটিতে সকল মোবাইল অপারেটরের ক্ষেত্রেই কল ড্রপের হার আপাতত সহনীয় পর্যায়েই রয়েছে।
ডেটার গতির বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বাংলালিংকের করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স কর্মকর্তা তৈমুর রহমান বলেন, 'ময়মনসিংহে বাংলালিংকের উচ্চমানের ফোরজি সেবা আমাদের সার্বিক মানোন্নয়নের প্রচেষ্টাকেই তুলে ধরেছে। ক্রেতাকে স্পেকট্রাম সুবিধা দেওয়ার মানের দিক থেকে আমরা বহুদিন ধরেই দেশের সকল প্রাইভেট অপারেটরের মধ্যে শীর্ষস্থানে অবস্থান করছি। সর্বশেষ নিলামে মোট ৯ দশমিক ৪ এমএইচজেড স্পেকট্রাম অর্জনের মাধ্যমে আমরা এই ক্ষেত্রে আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছি।'
তৈমুর রহমান জানান, আগামী দিনগুলোতে উন্নতমানের সেবা প্রদানের মাধ্যমে দেশে একটি মাইলফলক সৃষ্টির ব্যাপারে তারা আশাবাদী। বাংলালিংকের ওপর ভরসা রাখায় ক্রেতাদের ধন্যবাদ জানাতেও ভোলেলনি তৈমুর।
২০২১ সালের ২১ মার্চ থেকে ১ এপ্রিল পর্যন্ত ময়মনসিংহের বিভিন্ন স্থানে ড্রাইভ টেস্টের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ সেবার মান পরিমাপ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করে বিটিআরসি।
এই পরীক্ষার জন্য বিটিআরসির প্রযুক্তি দল গ্রামীণফোন নেটওয়ার্কের ৬২৬টি, রবির ৫১৯টি, বাংলালিংকের ৬০৮টি ও টেলিটকের ৩৪০টি ডাউনলোড কেস পরীক্ষা করেছে।
ফোরজি ডাউনলোডের গড় গতির দিক থেকে দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোনের গতি ছিল ৬ দশমিক ৭৮ এমবিপিএস এবং দ্বিতীয় বৃহৎ টেলিকম অপারেটর রবির ক্ষেত্রে তা ছিল ৫ দশমিক ৮৩ এমবিপিএস।
অন্যদিকে, রাষ্ট্রায়ত্ত অপারেটর টেলিটকের ফোরজি গতি ছিল মাত্র ২ দশমিক ২১ এমবিপিএস।
গ্রামীণফোন ও রবি- দুটি অপারেটরই যখন নিজেদের সকল বেজ ট্রানসিভার স্টেশনই ফোরজি নেটওয়ার্কের বলে দাবি করে আসছে, তার মধ্যেই এই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হলো।
এ বিষয়ে গ্রামীণফোনের কাছ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে, রবি বিটিআরসির ড্রাইভ টেস্ট রিপোর্টের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে জানিয়েছে, তাদের নেটওয়ার্কে ডেটার গতি সন্তোষজনক।
রবি আজিয়াটা লিমিটেডের প্রধান করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার শাহেদ আলম বলেন, 'আমরা মনে করি বিটিআরসির ড্রাইভ টেস্টে মোবাইল ইন্টারনেটের যে গড় গতি দেখানো হয়েছে তা বেশ সন্তোষজনক। প্রযুক্তিগতভাবে বলতে গেলে, ৩ এমবিপিএস গতি একটা এইচডি মানের ভিডিও দেখা বা ইন্টারনেটে কোনো কাজ করার জন্যে যথেষ্ট।'
'ডেটার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়ই গতি নির্ভর করে একটা নির্দিষ্ট সময়ে ওই এলাকায় ক্রেতার সংখ্যার ওপর, যেমন- ড্রাইভ টেস্ট নেওয়ার স্থান বা সর্বাধিক ব্যবহারের সময়টা। একটা নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট অঞ্চলে ক্রেতাদের সর্বোচ্চ ডেটা ব্যবহার থাকলে সেটি অবশ্যই ডেটার গতির ওপর প্রভাব ফেলবে', বলেন শাহেদ।
রবির এই কর্মকর্তা বলেন, 'আরও ভালো মান নিশ্চিতের লক্ষ্যে মোবাইল অপারেটরগুলোর গড়ে অন্তত ৮০ থেকে ১০০ এমএইচজেড স্পেকট্রাম হোল্ডিং থাকতেই হয়। কিন্তু আমাদেরকে সে পরিমাণ স্পেকট্রাম বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।'
এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল অপারেটর হিসেবে গ্রামীণফোনের ব্যবহারকারী ৮ কোটি এবং দ্বিতীয় স্থানে থাকা রবির ব্যবহারকারী ৫ দশমিক ১৫ কোটি।
তৃতীয় স্থানে থাকা বাংলালিংকের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩ দশমিক ৫৯ কোটি এবং রাষ্ট্রায়ত্ত অপারেটর টেলিটকের ৫৫ লাখ ব্যবহারকারী রয়েছে বলে বিটিআরসি ডেটা থেকে জানা যায়।