বছরের প্রথম ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু, প্রতিদিনিই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা
দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে করোনা রোগী বৃদ্ধির সাথে সাথে গত একমাসে রাজধানীতে বেড়েই চলেছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। বছরের মোট ডেঙ্গু রোগীর প্রায় ৮২ শতাংশই আক্রান্ত হয়েছেন গত ৩৭ দিনে। আজ বুধবার (৭ জুলাই) ভোর চারটায় এবছর প্রথমবারের মতো এক ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
এদিন ভোর চারটায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশারের স্ত্রী সাঈদা নাসরিন বাবলী (৩৫) লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় মারা যান।
তবে তার মৃত্যুর তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রেরিত দৈনিক ডেঙ্গু সংক্রমণের তালিকায় সংযুক্ত করা হয়নি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দাবি, তাদের কাছে এখনও ডেঙ্গুতে কোনো রোগীর মৃত্যুর সংবাদ আসেনি।
ডেঙ্গুতে মৃত্যুবরণ করা সাঈদা নাসরিন বাবলীর স্বামী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, গত ২০ তার স্ত্রী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। ২১ জুন তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে সাপোর্টে নেওয়া হয়।
প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে তোড়জোড় করে মশা নিধনে নানা পদক্ষেপ হাতে নিলেও ঠেকাতে পারছে না ডেঙ্গু সংক্রমণ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, এবছর ১ জানুয়ারি থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৫৬৫ জন। তাদের মধ্যে জুন মাসের ১ তারিখ থেকে ৩৭ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৪৬৪ জন।
৭ জুলাই এক দিনেই আক্রান্ত হয়েছেন ২৯ জন যাদের মধ্যে ২৮ জনই ঢাকার এবং মাত্র একজন ঢাকার বাইরের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বুধবার এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, বৃষ্টিতে পানি জমে থাকছে। এ কারণে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা কিছুটা বাড়ছে।
নাজমুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসের প্রতি বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু, ডেঙ্গুকেও উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই। তিনি সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন।
বর্তমানে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী ভর্তি আছেন ১২৮ জন। এদের মধ্যে, অধিকাংশই ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বাসিন্দা। যারা তাদের বাসাতেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। উত্তর সিটি কর্পোরেশন বলছে, তাদের মাত্র ৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন, বাকিরা দক্ষিণের।
এ বছরের শুরুতে রাজধানীতে কিউলেক্স মশা বেড়ে যাওয়ায় তখন থেকেই ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন মশা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন অভিযান চালাচ্ছে; তবে বর্ষা মৌসুমের শুরু হতেই জুন মাসের মাঝামাঝি থেকেই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা।
পুরানা পল্টনের বাসিন্দা ফাহমিদা ইয়াসমিন গত ৩০ জুন রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে জ্বর নিয়ে ভর্তি হন। পরবর্তীতে তিনি পরীক্ষা করে দেখেন তার ডেঙ্গু পজেটিভ। সাথে তার আড়াই বছরের মেয়েও আক্রান্ত হয়েছিলেন।
গত দুদিন আগে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন ফাহমিদা।
ফাহমিদা ইয়াসমিন টিবিএসকে বলেন, "আমার বাসার সামনের রাস্তা মেরামতের কাজ চলছে হয়তো ওখানে পানি জমে জন্ম নেওয়া এডিস মশার মাধ্যমে আক্রান্ত হয়েছি।"
তার ভবনের আরও তিনজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "আমি আক্রান্ত হওয়ার দুই-এক দিনের মধ্যেই আমি যে ভবনে থাকি সেখানে তিনজন আক্রন্ত হয়েছেন। তারা এখনও সুস্থ হননি।"
গত ৩ তারিখ ডেঙ্গু পজেটিভ আসে যাত্রাবাড়ির ভাঙ্গাপ্রেস এলাকার মো. মুস্তাকিমের। তিনি এখন ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি আছেন। আগের থেকে এখন একটু উন্নতি হলেও পুরোপুরি সুস্থ হননি তিনি।
এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রি.জেনারেল (ডা.) মোঃ শরীফ আহমেদ ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে তাদের কার্যক্রম এবং দক্ষিণে বেশি সংখ্যক রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়া নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তিনি টিবিএসকে বলেন, "আমাদের কার্যক্রম সম্পর্কে পিআরও (জনসংযোগ কর্মকর্তা) থেকে জেনে নিন।"
দক্ষিণেই এবছর প্রথম ডেঙ্গু রোগী মারা গেল, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদকের ফোন কলটি কেটে দেন।
জনসংযোগ কর্মকর্তাকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান টিবিএসকে বলেন, "আমরা এপ্রিল থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করি। যাদের বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে তাদেরকে জরিমানা করা হচ্ছে।"
ঢাকা উত্তরে মাত্র ৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "উত্তরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীদের বাড়ি চিহ্নিত করে কীটনাশক ও ফগিং করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া যে হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী রয়েছে তার আশপাশেও নিয়মিত ফগিং করা হয়।"