বন্ড সুবিধায় আমদানি করা পণ্য গায়েব, ২২২ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি
চট্টগ্রাম ইপিজেডের দুটি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান এ এন্ড বি আউটওয়্যার এবং নর্ম আউটফিট এন্ড এক্সেসরিজ লিমিটেড। একই মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান দুটি বন্ড সুবিধায় তৈরী পোষাক শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করে খোলা বাজারে বিক্রি করে দিয়েছে। ফাঁকি দিয়েছে প্রায় ২২২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা রাজস্ব।
কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠান দুটির লিজ চুক্তি বাতিল করে নিলামে তুলেছে বাংলাদেশ রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ এলাকা বা বেপজা কর্তৃপক্ষ। ফাঁকি দেওয়া রাজস্ব আদায়ে তৎপর হয়েছে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট চট্টগ্রাম। এ এন্ড বি আউটওয়্যারকে গত ২২ এপ্রিল এবং নর্ম আউটফিট এন্ড এক্সেসরিজকে ২৬ এপ্রিল কারণ দর্শানো নোটিশ দেয় কাস্টম কর্তৃপক্ষ। কারখানার মালিক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত লন্ডনের নাগরিক নাজমুল আবেদিন। বর্তমানে তিনি লন্ডনে অবস্থান করছেন।
কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট চট্টগ্রামের কমিশনার এ কে এম মাহবুবুর রহমান টিবিএসকে বলেন, প্রতিষ্ঠান দুটির নিলাম কার্যক্রম চলাকালীন বেপজা কর্তৃপক্ষের অনুরোধে আমরা ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের অনিষ্পন্ন অডিট কার্যক্রম সম্পন্ন করি। নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, নর্ম আউটফিট এন্ড এক্সেসরিজ লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটিতে ২,৭৩৯ মেট্রিক টন ফেব্রিক্স এবং এক্সেসরিজ মজুদ আছে। কিন্তু এই পণ্য অবৈধভাবে অপসারণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। নর্ম আউটফিট এন্ড এক্সেসরিজের কাছে কাস্টম বন্ড এর সরকারি শুল্ক বাবদ পাওনা ৭৮ কোটি ১২ লাখ টাকা।
অন্যদিকে একই মালিকানাধীন এ এন্ড বি আউটওয়্যার গুদাম থেকে ৬৭৩৭ মেট্রিক টন কাঁচামাল অবৈধভাবে অপসারণ করে। যার শুল্কায়নযোগ্য মূল্য ২২৭ কোটি ১ লাখ টাকা। এই পণ্যের মোট সরকারী শুল্কের পরিমাণ ১৪৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠান দুটির অডিট কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য কাস্টমস বন্ড কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠান মালিককে বার বার তাগাদা দিলেও তারা সাড়া দেয়নি। পরবর্তীতে শুল্ক বিভাগের বিশেষ সফটওয়্যার এ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেম থেকে নেওয়া আমদানি এবং রপ্তানির তথ্য ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের তথ্য নিয়ে অডিট করতে হয়েছে।
এ কে এম মাহবুবুর রহমান আরো বলেন, 'প্রতিষ্ঠান দুটিকে দেওয়া কারণ দর্শানোর নোটিশের লিখিত জবাব দেয় তারা গত ২ মে। সেখানে বেপজা কর্তৃপক্ষের সাথে নিলাম ইস্যুতে চলমান রিট মামলার কথা উল্লেখ করে কারণ দর্শানোর নোটিশ স্থগিতের আবেদন করা হয়। কিন্তু এই রিটের সাথে শুল্ক কর ফাঁকির কোন সম্পর্ক নেই। আমরা আইনানুগভাবে ব্যবস্থা নেবো'।
চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট সূত্র জানায়, কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট চট্টগ্রাম থেকে শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০০৮ সালে এএন্ডবি আউটওয়্যার এবং ২০১২ সালে নর্ম আউটফিট এক্সেসরিজ নামের গার্মেন্টস দুটি নিবন্ধিত হয়। কোম্পানি পরিচালনায় ব্যর্থ হয়ে ২০২০ সালের মার্চে বন্ধ হয়ে যায় প্রতিষ্ঠান দুটি। এরপর একই বছরের ৭ জুন বেপজা লীজ চুক্তি বাতিল করে। ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর নিলাম কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। নিলামে প্রতিষ্ঠান দুটির দর উঠে ২৫ কোটি টাকা।
বেপজার চট্টগ্রাম ইপিজেড এর বিনিয়োগকারী তালিকায় ১ নম্বরে রয়েছে এ এন্ড বি আউটওয়্যার লিমিটেড। বিনিয়োগকারী দেশ হিসেবে দেখানো হয়েছে ডেনমার্ক। ওই তালিকার ১০১ নম্বরে আছে নর্ম আউটফিট। এখানে বিনিয়োগকারী দেশ হিসেবে উল্লেখ আছে বাংলাদেশের নাম।
প্রতিষ্ঠান দুটির ঠিকানায় দেওয়া টিএন্ডটি নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে এ এন্ড বি আউটওয়্যারের কমার্শিয়াল সেকশনের সাবেক এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রতিষ্ঠান দুটিতে কাজ করত প্রায় ১৫০০ কর্মকর্তা ও শ্রমিক। এর মধ্যে এ এন্ড বি আউটওয়্যারে ১ হাজার এবং নর্ম আউটফিটে ৫০০ জন শ্রমিক কর্মরত ছিল। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন বাবদ প্রায় ২ কেটি ৫০ লাখ টাকা বেতন পরিশোধ করেনি প্রতিষ্ঠান মালিক। এ নিয়ে শ্রমিকরা আন্দোলনও করে সেই সময়ে। বর্তমানে দেশে নেই প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক নাজমুল আবেদিন। তিনি লন্ডনের নাগরিক এবং সেখানেই অবস্থান করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাজমুল আবেদিন সিলেটের মরহুম মোস্তফা আনোয়ারের ছেলে। চট্টগ্রাম ইপিজেডে কোল্ড প্লে নামক তার মালিকানাধীন আরো একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এটিও গত বছরের মার্চ থেকে বন্ধ আছে। এখানে কাজ করত প্রায় ৩০০ শ্রমিক।
চট্টগ্রাম ইপিজেডের জেনারেল ম্যানেজার মশিউদ্দিন বিন মেজবাহের সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে তিনি তার অফিসে এসে কথা বলতে বলেন।