বর্জ্য থেকে জৈব সার উৎপাদিত হচ্ছে ফেনীতে
ফেনী শহরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বর্জ্য ভাগাড়ে না রেখে সেখান থেকে সার উৎপাদন শুরু করেছে সেবক এগ্রোভেট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
উৎপাদিত এসব সার প্রতি কেজি বিক্রি হবে ৪৫ টাকা মূল্যে। ফলে একদিকে যেমন শহরে আবর্জনার উৎকট দুর্গন্ধ থেকে রেহাই পাবেন নাগরিকরা অন্যদিকে আগামী তিন বছর পর এ খাত থেকে পৌরসভাও আয় করতে পারবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের সুলতানপুরে ৭০ শতক জমিতে জৈবসার উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। সেখানে ১১ হাজার ৬শ বর্গফুটের শেডে ১৯টি আবর্জনা রাখার হাউজ রয়েছে। প্রতিটি হাউজেই রয়েছে কমবেশি বর্জ্য। কয়েকজন শ্রমিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কাজ করছেন। একজন ভ্যানগাড়ি থেকে বর্জ্য নামাচ্ছেন। দুইজন বাইরে বসে পলিথিন সহ অপচনশীল বর্জ্য বাছাই করছেন। কোম্পানীর ম্যানেজার (অপারেশন) নুরুল আবছার তাদের দেখভাল করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে দীর্ঘদিন ধরে ফেনী শহরের প্রবেশপথ দেওয়ানগঞ্জ, বিসিক রাস্তার মাথা সহ বিভিন্ন স্থানে সড়কের পাশে বর্জ্য স্তুপ করা হতো। দ্রুত ও আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় 'জৈব আবর্জনা ব্যবহার করে প্রোগ্রামেটিক সিডিএম-২য় প্রকল্প' নামে একটি প্রকল্প অনুমোদন করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পরিবেশ অধিদপ্তর। জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের অর্থায়নে ১ কোটি ৫৬ লাখ ৮৪ হাজার ৮৭ টাকা বরাদ্ধে ২০১৮ সালের ৭ অক্টোবর সার উৎপাদন কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করা হয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের ক্লিন ডেভেলপমেন্ট মেকানিজম (সিডিএম) ও ফেনী পৌরসভা এটি নির্মাণে তদারকি করেন।
সেবক এগ্রোভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খালেদ আমিন জানান, গত ১৫ জুলাই থেকে তার প্রতিষ্ঠান সার উৎপাদন শুরু করেছে। প্রতিদিন এ প্ল্যান্টে ৮ টন বর্জ্য থেকে ১ হাজার কেজি সার উৎপাদন করা যাবে। কিন্তু পৌরসভা কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন শুধুমাত্র ১ টন বর্জ্য সরবরাহ করছে। ফলে এখন পর্যন্ত প্রতিদিন ২০০ কেজি পরিমাণ সার উৎপাদন হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে বর্জ্য অনুপাতে সারের পরিমাণও বাড়বে। সার তৈরিতে তার নিজের মালিকানাধীন ১টি কাটিং, ১টি নেটিং ও ১টি ক্রাশিং মেশিন ব্যবহার করছেন।
তিনি আরো জানান, কক্সবাজারে সার উৎপাদন কেন্দ্রটিও তিনি পরিচালনা করেন। এছাড়া চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ছোট পরিসরে তার নিজস্ব সার কারখানা রয়েছে। অতীত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সুলতানপুর জৈব সার কারখানাও লাভজনক করতে পারবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। প্যাকেটজাত করার পর প্রতিকেজি সার বিক্রি হবে ৪৫ টাকায়।
পৌরসভা সূত্র জানায়, প্রতিদিন ফেনী পৌরসভায় ৭০ থেকে ৮০ টন বর্জ্য তৈরী হয়। এসব বর্জ্য থেকে পচনশীল দ্রব্য ও অপচনশীল দ্রব্য আলাদা করে প্রকল্পে ব্যবহার করা হবে। ফেনীতে নির্মাণাধীন প্রকল্পের ধারণক্ষমতা দৈনিক ৮ টন। তারা এখান থেকে উৎপাদিত জৈব সার সরাসরি কৃষকের কাছে বিক্রি করে এর চাহিদা তৈরী করবেন। এছাড়া তারা এখানে স্থায়ীভাবে জনবল তৈরীর জন্যেও কাজ চালিয়ে যাবেন।
ফেনী পৌরসভার সচিব সৈয়দ আবু জর গিফরী জানান, সম্প্রতি ফেনী পৌরসভা, পরিবেশ অধিদপ্তর ও সেবক এগ্রোভেট লিমিটেডের সাথে যৌথ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি অনুযায়ী পৌরসভা সার উৎপাদন কেন্দ্রে বর্জ্য সরবরাহ করবে। আগামী তিন বছর পর্যন্ত সেবক এগ্রোভেট লিমিটেড সার উৎপাদন করবে। চুক্তির মেয়াদ শেষে পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিবে। এরপর সার উৎপাদনে পৌরসভা তার নিজস্ব জনবল দিয়ে কিংবা টেন্ডারের মাধ্যমে কোন প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিয়ে আয় বাড়াতে পারবে।
ফেনী পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী বলেন, বর্জ্য থেকে সার উৎপাদন প্রকল্পের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও আবর্জনাকে বাণিজ্যিকভাবে আয় করা সম্ভব। একসময়ে ময়লার দুর্গন্ধে পরিবেশ দূষিত হয়ে থাকত। সার উৎপাদন পুরোদমে চালু হলে দৃশ্যপট বদলে যাবে।