বন্যায় ফেনী ও নোয়াখালীতে ক্ষতিগ্রস্ত ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ: অক্সফাম
বাংলাদেশে ফেনী ও নোয়াখালীর বন্যায় ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৪৮ শতাংশ ঘরবাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সংস্থা অক্সফামের একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
অক্সফামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্যাকবলিত এলাকায় স্যানিটেশন ব্যবস্থা এবং বিশুদ্ধ পানির উৎস সম্পূর্ণরূপে অচল হয়ে পড়েছে। এছাড়াও বন্যার কারণে অবকাঠামোরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
বন্যার পানি সরে যাওয়ার সাথে সাথে ধ্বংসযজ্ঞের পরিমাণ ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। জীবিকা হারানো এবং খাদ্যের নিরাপত্তা জনগণের জন্য প্রধান উদ্বেগ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অনেক বাসিন্দা তাদের ন্যূনতম চাহিদা পূরণে হিমশিম খাচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলির ৭২ শতাংশেরও বেশি পরিবার দিনে দুই বেলা খাবার জোগাড় করতেও অক্ষম।
স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা ধ্বংস হওয়ার কারণে খোলা জায়গায় মলত্যাগ করতে হচ্ছে। এর ফলে ডায়রিয়া ও কলেরার মতো জলবাহিত রোগের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার বন্যাকবলিত হোসনে আরা বন্যার সময় তার ও তার পরিবারের দুর্ভোগের কথা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, "আমাদের ছাদে আশ্রয় নিতে হয়েছিল, যেখানে বিশুদ্ধ পানি বা খাবারের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। টয়লেট পানিতে ডুবে যাওয়ায় গোপনীয়তা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছিল। অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিল।"
অন্য এক ভুক্তভোগী আবদুল করিম এ বন্যায় তার বাড়ি এবং জীবিকা দুটোই হারিয়েছেন। অন্যত্র আশ্রয় নিয়ে তারা বন্যা থেকে বেঁচে গেলেও তার একমাত্র আয়ের উৎস ছোট সবজির দোকানটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।
বাংলাদেশে অক্সফামের কান্ট্রি ডিরেক্টর আশীষ দামলে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, "বাংলাদেশ আগে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি। লক্ষ লক্ষ মানুষ এই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘরবাড়ি এবং কৃষিজমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। লাখ লাখ মানুষ তাদের জীবিকা হারিয়েছে। গবাদি পশুর ক্ষতি এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উদ্বেগজনক।"
তিনি আরও বলেন, "যদি আমাদের মতো সংস্থাগুলো এই বন্যাকবলিত মানুষের পাশে না দাঁড়ায়, তাহলে আমাদের অস্তিত্ব অর্থহীন হয়ে পড়বে। আমাদের যা কিছু সম্পদ রয়েছে তা দিয়ে বন্যার্তদের সাহায্য করতে হবে।"
আশীষ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, বন্যা-পরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত এসব সম্প্রদায়ের পুনরুদ্ধারের জন্য বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবস্থা পুনঃস্থাপন অত্যন্ত জরুরি।
ত্রাণ কার্যক্রমকে বেগবান করতে অক্সফাম একটি জরুরি তহবিল চালু করেছে। বন্যাকবলিত মানুষকে সহায়তা করতে সংস্থাটি সব ধরনের সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়াও, অক্সফাম তাদের ত্রাণ কার্যক্রমে তরুণ শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবকদের স্বাগত জানিয়েছে।
২০ আগস্ট শুরু হওয়া এই বন্যায় বাংলাদেশের ১১টি জেলার বিশাল এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং ৫৮ লাখেরও বেশি মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অবকাঠামো, ঘরবাড়ি, কৃষি এবং মৎস্য খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জরুরি এবং টেকসই মানবিক সহায়তার প্রয়োজন। প্রধান চাহিদাগুলোর মধ্যে রয়েছে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ, নগদ সহায়তা, খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা সামগ্রী এবং ঘরবাড়ি, স্যানিটেশন ব্যবস্থা, কৃষি এবং জীবিকা পুনর্নির্মাণে সহায়তা।
বন্যার শুরু থেকেই অক্সফাম জরুরি ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে দুর্যোগের মাত্রা বিবেচনায় আরও সহায়তা জরুরি, যাতে তাৎক্ষণিক এবং দীর্ঘমেয়াদি চাহিদা পূরণ করা যায়।