বাঁশখালীতে গুলিতে ৫ শ্রমিক নিহতের ঘটনায় দুই তদন্ত কমিটি
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা গণ্ডামারায় কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রে সংঘর্ষে ৫ শ্রমিক নিহতের ঘটনায় জেলা প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া সংঘর্ষে নিহত ও আহত শ্রমিকদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
শনিবার বিকেলে ঘটনাস্থলে জেলা প্রশাসনের এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে-দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুমনী আক্তার।
তিনি বলেন, "বাঁশখালীর ঘটনায় ৪ সদস্য বিশিষ্ট এক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনাস্থলে জেলা প্রশাসনের এক বৈঠকে নিহতের পরিবারকে ৩ লক্ষ টাকা করে ও আহতদের ৫০ হাজার টাকা সহায়তা প্রদানের ঘোষণা দেয়া হয়।"
"কমিটিতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে পুলিশের একজন, কলকারখানা অধিদফতর থেকে একজন এবং বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে একজনসহ মোট চারজন সদস্য থাকবেন"-যোগ করেন সুমনী আক্তার।
অপরদিকে, সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, "কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।"
পুলিশের ওই তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন— চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (অপরাশেন ও ক্রাইম) জাকির হোসেন খান, চট্টগ্রাম রেঞ্জ কার্যালয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) নেছার উদ্দীন, চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) কবির হোসন।
এদিকে কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনার জন্য পরস্পরকে দায়ী করছেন আহত পুলিশ ও শ্রমিকেরা। শ্রমিকদের দাবি, রমজানের শুরু থেকে সেহেরি ও ইফতারের সময় ছুটি চেয়ে শ্রমিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছিলেন। আজ সকালে একই দাবিকে শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে আন্দোলন শুরু করলে পুলিশ বিনা উসকানিতে গুলি ছুঁড়েছে।
মো. তৌহিদ নামে এক শ্রমিক-দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'রমজানে মাসে দুপুরের নামাজ ও ইফতারের সময় ছুটির দাবি জানিয়ে আসছিলেন শ্রমিকরা। শুক্রবার এই দাবিতে বিক্ষোভ হয়। আজ সকালে আমরা কাজে যোগ না দিয়ে আন্দোলন শুরু করছে পুলিশ বিনা উসকানিতে গুলি করে।'
তবে পুলিশের অভিযোগ, বিনা উসকানিতে ইটপাটকেল ছোড়ায় ঘটনার সূত্রপাত হয়। সংঘর্ষে আহত পুলিশ সদস্য মো. ইয়াসির বলেন, 'বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের শান্ত করার চেষ্টা করছিল পুলিশ। কিন্তু শ্রমিকেরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। তখন পুলিশ বাধ্য হয়ে গুলি করে।'
বাঁশখালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল ইসলাম বলেন, "বেতন বৃদ্ধিসহ একাধিক দাবিতে বিক্ষোভ করছিলেন শ্রমিকরা। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষের খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় পুলিশ। শ্রমিকরা ইট-পাটকেল ছোড়া শুরু করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি করে।"
প্রসঙ্গত, শনিবার সকালে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে এস আলম গ্রুপ ও চীন ভিত্তিক সেপকোথ্রি'র মালিকানাধীন নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ কেন্দ্রে শ্রমিকদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে অন্তত পাঁচজন মারা গেছেন, আহত হয়েছেন অন্তত ১৯ জন।