বাংলাদেশের আর পেছনে ফিরে তাকানোর সুযোগ নেই: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার বলেছেন, বাংলাদেশের এখন আর পেছনে ফিরে তাকানোর কোনো সুযোগ নেই। এখন শুধু সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা।
'সকল বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে এ দেশকে আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শোষণ-বঞ্চনামুক্ত, ক্ষুধা-দারিদ্র্য-নিরক্ষরতামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবই,' বলেন তিনি।
মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে আয়োজিত ১০ দিনব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন যে অবস্থানে পৌঁছেছে, সেখান থেকে তাকে সহজে নামানো যাবে না। বাংলাদেশ করোনাভাইরাস মহামারিও সফলভাবে মোকাবিলা করতে পেরেছে। 'তবে আমাদের খুবই সতর্ক থাকতে হবে।'
প্রধানমন্ত্রী সতর্ক করে বলেন, বাংলাদেশবিরোধী অপশক্তি এখনও দেশে-বিদেশে সক্রিয় রয়েছে এবং তারা নানা অপতৎপরতার মাধ্যমে এ অর্জনকে নস্যাৎ করতে চায়।
'জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের শুভ জন্মদিনে আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সকল অপতৎপরতা প্রতিহত করি এবং প্রিয় মাতৃভূমিকে উন্নয়ন-অগ্রগতির পথ ধরে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাই,' বলেন তিনি।
হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির প্রতীক্ষার প্রহরের আজ অবসান হতে চলেছে। আজ এমন এক সময়ে দেশ জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করতে যাচ্ছে, যখন বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে মর্যাদাশীল উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সামিল হওয়ার চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে।
তিনি উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় সম্মানজনক দুই হাজার মার্কিন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে, দারিদ্র্যের হার ২০.৫ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে এবং দেশ খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। মানুষের গড় আয়ু ৭৩ বছরে উন্নীত হয়েছে।
'বাংলাদেশ আর্থ-সামজিক সূচকে প্রভূত উন্নয়ন সাধন করেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত ১২ বছরের নিরলস প্রচেষ্টা এবং জনগণের ঐকান্তিক পরিশ্রমের ফলেই এই অর্জন,' বলেন তিনি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ সংগ্রামের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বাঙালির রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক মুক্তির লক্ষ্য নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ মাতৃভাষার মর্যাদা অর্জনের যে সংগ্রাম শুরু করেছিলেন, সে ধারাবাহিক সংগ্রামের সাফল্যের ফসলই আমাদের স্বাধীনতা।'
তিনি বলেন, এটি একটি যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশ, যা কয়েকশ বছরের পরাধীনতার অধীনে ছিল। মাত্র সাড়ে তিন বছরে তিনি একটি পূর্ণাঙ্গ সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের বিশাল কাজটি সম্পাদন করেছেন যেখানে জনগণ শোষণ, বঞ্চনা, ক্ষুধা এবং দারিদ্র্যে ভুগছিল।
'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসম্ভব থেকে সমস্ত কিছু করেছেন,' হাসিনা বলেন।
মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং যুদ্ধপরবর্তী দেশ গড়ার কাজে যেসব বন্ধুপ্রতীম দেশ এবং নেতা বাংলাদেশকে সাহায্য করেছিলেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনেক স্বপ্ন ছিল। তিনি বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ 'সোনার বাংলাদেশ' হিসেবে গড়ে তোলার কল্পনা করেছিলেন। কিন্তু হত্যাকারীদের নির্মম বুলেট তাকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়,' বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আলো জ্বালিয়েছিলেন বাঙালি জনগোষ্ঠীর জীবনে এবং এনে দিয়েছিলেন স্বাধীনতা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্রতি বছর ১৭ মার্চ জাতীয় শিশু দিবস হিসাবে পালন করে।
তিনি বলেন, 'অন্যদিকে, ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। এই বছরটি আমাদের স্বাধীনতার পঞ্চাশতম বার্ষিকী। আমরা একসাথে মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি।'
শেখ হাসিনা বলেন, 'মুজিব চিরন্তন' প্রতিপাদ্যে '১৭ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত আমরা দেশে এবং বিদেশে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছি।'
'আজ তার সূচনাপর্ব। তবে আমাদের উৎসব বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১ পর্যন্ত চলতে থাকবে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার সমন্বয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।'
তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার-নেতা, মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ নির্যাতিত মা-বোনকে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সালাম জানান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ায় মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা শুভেচ্ছাবাণী পাঠানোয় শেখ হাসিনা দেশবাসী ও তার পক্ষ হতে তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।