বায়ুদূষণে বাংলাদেশীদের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ৫.৪ বছর কমেছে
প্রধানত জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে সৃষ্ট নিঃসরণসহ সার্বিকভাবে বায়ুদূষণ বাংলাদেশীদের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ৫.৪ বছর কমিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের 'এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স' (একিউএলআই) প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।
ধূমপান, এইচআইভি/ এইডস, দূষিত পানি ও অপর্যাপ্ত পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থার চাইতেও বায়ুদূষণ যে মানবস্বাস্থ্যে অনেক বড় প্রভাব ফেলছে সেটাই উঠে এসেছে এখানে।
আজ বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়টির এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট আয়ুষ্কালে বাতাসের মান কীভাবে প্রভাব ফেলছে সে সম্পর্কিত সারণীর প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। ওই সূত্রে আরও জানা গেছে, দূষণ নিয়ন্ত্রণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) গাইডলাইন মেনে চললে যা হতো সে তুলনায় দেশের সবচেয়ে বড় মহানগরী ঢাকার বাসিন্দাদের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ৭.৭ বছর কমেছে।
বাংলাদেশের বাতাসে জীবাশ্ম জ্বালানি নির্গত পিএম-২.৫ অতিক্ষুদ্র দূষণকণার ঘনত্ব বাড়ছে, যা ১৯৯৮ সালের পর বেড়েছে ১৫.৩ শতাংশ।
এর আগে ২০১৯ সালে দেশের প্রতি ঘন মিটার বাতাসে ৬৫.৫ মাইক্রোগ্রাম দূষণকণার উপস্থিতি ধরা পড়ে, যা ছিল বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঘনত্বের। এটি বাংলাদেশের বার্ষিক গড় মানদণ্ডের ১৫ মাইক্রোগ্রাম এবং হু নির্ধারিত ১০ মাইক্রোগ্রামকে ছাড়িয়ে যায়।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ৬৪টি জেলার প্রতিটিতে সূক্ষ্মকণার দূষণ মাত্রা, হু নির্ধারিত মাত্রার চাইতে অন্তত তিনগুণ বেশি।
এতে সবচেয়ে দূষিত বিভাগ হলো; খুলনা ও রাজশাহী। বিভাগ দুটির বাসিন্দারা হু' নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে সাতগুণ বেশি দূষণের শিকার হচ্ছেন। একারণে তাদের গড় আয়ু ৬ বছরের বেশি কমছে।
জাতীয় গড়ের চাইতে বাতাসের মান সবচেয়ে ভালো থাকার পরও চট্টগ্রাম বিভাগের বাসিন্দাদের গড় আয়ু কমেছে ৩.৬ বছর।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রত্যাশিত গড় আয়ু ৭২.৮ বছর। নারীদের ক্ষেত্রে যা ৭৪.৫ বছর ও পুরুষের ক্ষেত্রে ৭১.২ বছর।
তবে বাতাসের মান পরিমাপক সুইস সংস্থা আইকিউএয়ার- এর ২০২০ সালের প্রতিবেদনে পিএম-২.৫ কণা সৃষ্ট স্বাস্থ্য ঝুঁকির দিক থেকে বাংলাদেশ টানা তৃতীয় বছরের ন্যায় বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দূষণের শিকার দেশ হিসেবে উঠে আসে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ২০২০ সালে বাংলাদেশের প্রতি ঘন মিটার বাতাসে পিএম-২.৫ কণার বার্ষিক ঘনত্ব ছিল ৭৭.১ মাইক্রোগ্রাম। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) বার্ষিক ১০ মাইক্রোগ্রাম পিএম-২.৫ দূষণকণার উপস্থিতি জনস্বাস্থ্যের জন্য সর্বোচ্চ সহনসীমা হিসেবে নির্ধারণ করেছে, বাংলাদেশের পরিমাণটি ছিল লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সাতগুণের বেশি।