বিদ্যুৎস্পৃষ্ট শিশু তামিমকে ১০ কোটি টাকা দিতে রুল, তাৎক্ষণিক ৫ লাখ দেওয়ার নির্দেশ
লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে পল্লী বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে গুরুতর আহত শিশু তামিম ইকবালের (১২) চিকিৎসা খরচ বাবদ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে তাৎক্ষণিক ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাকে ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে। শিশু তামিমের বাবা শাহাদাত হোসেনের দায়ের করা রিটের শুনানি নিয়ে সোমবার (৬ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
একই সাথে জ্বালানি সচিব, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজারসহ সংশ্লিষ্ট পাঁচজনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। তার সহযোগী আইনজীবি ফুয়াদ হাসান সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, শিশু তামিমের পিতার আবেদনের প্রেক্ষিতে তার পরিবারের ক্ষতিপূরণ বাবদ ১০ কোটি টাকা এবং তামিমের চিকিৎসা বাবদ ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে। আদালত তাৎক্ষণিক চিকিৎসা খরচ বাবদ লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে ৫ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
তামিম রামগতি উপজেলার চর আলগী ইউনিয়নের চর টবগী গ্রামের দিনমজুর শাহাদাত হোসেনের ছেলে; সে স্থানীয় কাটাবনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির মেধাবী ছাত্র। গত ২৫ সেপ্টেম্বর তারিখে গোসল করতে গিয়ে চর টবগী গ্রামের একটি বিদ্যুতের খুঁটির তারে জড়িয়ে মারাত্মক আহত হয় সে। তামিমের বাম হাত কেটে ফেলতে হয়েছে। ডান পায়ের দুটি আঙুলও কেটে ফেলতে হবে। ঝলসে যাওয়া শরীরের বিভিন্ন অংশে পচন ধরেছে। মাথার আঘাতও গুরুতর।
শিশু তামিমের বাবা শাহাদাত হোসেন উচ্চ আদালতে রিট দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গত ৭০ দিন যাবত ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে শিশু সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন তার ছেলে তামিম। পরে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'স্বপ্ন নিয়ে' এর প্রতিষ্ঠাতা আশরাফুল আলম হান্নানের সহযোগিতায় তিনি আদালতে রিট দায়ের করেন।
অন্যদিকে অভাব অনটনের সংসারে তার চিকিৎসা খরচ যোগাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। নিজের একমাত্র মুদি দোকানটিও বিক্রি করে দিয়েছেন। এ ঘটনায় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব অবহেলাকে দায়ী করছেন তিনি।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মো. আবু তাহের বলেন, নদীভাঙনের কারণে নদীর পাড়ে থাকা খুঁটি হেলে পড়ে। তবে খুঁটিতে থাকা ক্যাবল উপরে ঝুলে ছিল। যদি মাটিতে লেগে থাকতো, তাহলে সাথে সাথে বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যেত। কিন্তু বিষয়টি স্থানীয়ভাবে কেউ তাদের জানায়নি। তাই হয়তো তারে লেগে ওই শিশুটি দুর্ঘটনার মধ্যে পড়েছিল।
তিনি আরো বলেন, আমরা জানতে পেরে শিশুটির খোঁজখবর নিয়েছি এবং তাকে চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহযোগিতাও করেছি।
তবে আর্থিক সহযোগিতার বিষয়ে শিশুর বাবা শাহাদাত হোসেন সোমবার সকালে বলেন, দুর্ঘটনার অনেক পরে সাম্প্রতিক সময়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখির পর বিদ্যুৎ অফিস থেকে কেউ একজন তাকে ফোন করেছিল। কিন্তু কোন আর্থিক সহযোগিতা করা হয়নি।