বিশ্ব র্যাংকিংয়ে ১০০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় নেই বাংলাদেশ
যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা সাময়িকী টাইমস হায়ার এডুকেশনের করা র্যাংকিংয়ে বিশ্বের ১০০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় স্থান হয়নি বাংলাদেশের কোনও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। তবে তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে ভারতের ৩৬টি ও পাকিস্তানের ৭টি বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্বের ৯২ টি দেশের ১৪০০ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে করা এই র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ থেকে একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে দেশের সবচেয়ে পুরনো উচ্চ শিক্ষার বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান ১০০০ এর পরের তালিকায়। সেরা ১৪০০ তে দেশের আর কোনও বিশ্ববিদ্যালয় নেই।
২০১৬ সালে এই র্যাংকিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ছিল ৬০১ থেকে ৮০০ এর মধ্যে। ২০১৮ সালে তা পিছিয়ে ১০০০ এর পর চলে যায়। ২০১৯ সালে এ তালিকায় ঢুকতেই পারেনি বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়।
গত বুধবার নিজেদের ওয়েবসাইটে ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাংকিংস ২০২০’ প্রকাশ করেছে সাময়িকীটি।
সেখানে দেখা যায়, ১৪০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় প্রতিবেশী দেশ ভারতের ৫৬টি বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও সেরা ৩০০ এর নিচে নেই একটিও। গতবছর এ তালিকায় ভারতের ৪৯টি বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো।
তালিকায় ৩০১ থেকে ৩৫০ এর গ্রুপে অবস্থান করে ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এগিয়ে আছে বেঙ্গালুরুতে অবস্থিত ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সেস।
টাইমস হায়ার এডুকেশনের এই তালিকায়, একক দেশ হিসবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বিবেচনায় ভারতের অবস্থান বিশ্বে পঞ্চম এবং এশিয়ার মধ্যে তৃতীয়। এশিয়ায় প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে আছে জাপান ও চীন।
১৪০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে পাকিস্তানের ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও সেরা ৩০০ এর নিচে একটিও নেই। র্যাংকিংয়ে ৪০১ থেকে ৫০০ এর গ্রুপে জায়গা করে নিয়ে কায়েদে আজম বিশ্ববিদ্যালয় দেশটিতে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এগিয়ে আছে।
এছাড়া শ্রীলঙ্কার দুটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং নেপালের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা হয়েছে যুক্তরাজ্যের এই সাময়িকীটির করা র্যাংকিংয়ে।
গত তিন বছর ধরে এক নম্বরে থাকা যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবারও তালিকায় সবার উপরেই রয়েছে। গতবার দুইয়ে থাকা যুক্তরাজ্যের আরেক ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়কে তিনে ঠেলে দিয়ে দুই নাম্বারে উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলোজি।
টাইম হায়ার এডুকেশনের এই তালিকায় সংখ্যায় সবার ওপরে আছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। প্রথম ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি এবং প্রথম ২০০টিতে দেশটির ৬০টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। প্রথম ২০০ তে যুক্তরাজ্যের ২৮টি এবং জার্মানীর ২৩টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে।
মোট পাঁচটি সূচকে এই র্যাংকিং করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে টিচিং, রিসার্চ, সাইটেশন, ইন্ডাস্ট্রি ইনকাম এবং ইন্টারন্যাশনাল আউটলুক। এরমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে আছে গবেষণার সূচকে। গবেষণায় মোট ১০০ পয়েন্টের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছে মাত্র ৮ দশমিক ৮।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলছেন, র্যাংকিংয়ে আরও এগিয়ে যেতে চাইলে বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পুরো গবেষণা কাঠামোকেই ঢেলে সাজাতে হবে।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে যে একাডেমিক গবেষণাগুলো হয়, আমাদেরকে সেগুলোর মান বাড়াতে হবে। সেজন্য আমাদের এমন গবেষক দরকার যারা আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে গবেষণা করতে পারেন।”
১৯২১ সালে ব্রিটিশ সরকার অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে পূর্ববঙ্গে প্রতিষ্ঠা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। বিশ্ববিদ্যালয়টির গায়ে এখনো বাংলাদেশের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তকমা থাকলেও সময়ের সাথে সাথে এটি হারিয়েছে তার অতীত গৌরব।
বরাবরই এইসব র্যাঙ্কিংয়ে পদ্ধতিগত ভুল আছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাবি করে আসলেও শিক্ষাবিদ ও গবেষকরা বলছেন, গবেষণায় বরাদ্দের পরিমাণ খুবই কম থাকায় এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভালো গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ না হওয়ার র্যাংকিংয়ে এমন দুরাবস্থায় পড়ছে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।