বৈরী আবহাওয়ায় ইলিশ ধরায় বিঘ্ন
সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে রূপালি ইলিশ। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে চট্টগ্রামের জেলেরা ইলিশ শিকারে নেমে পড়েছেন। চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকার প্রায় দুই হাজার নৌকা ইলিশ শিকারে এখন বঙ্গোপসাগরে। এর মধ্যে কিছু জেলে ও নৌকা ইলিশ বোঝাই করে ঘাটে ফিরেও এসেছে। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগরের মাঝে গিয়ে মাছ শিকার করতে পারছে না জেলেরা।
চট্টগ্রামের ফিশারিঘাটের আড়তদার ও জেলেরা জানিয়েছেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে মৌসুমের শুরুতে ইলিশ শিকারিরা হোঁচট খেয়েছেন। তিন নম্বর সতর্কসংকেত থাকায় অনেক জেলে প্রস্তুতি নিয়েও মাছ ধরতে যেতে পারেননি। এর মধ্যে যারা সমুদ্রে গেছেন তারা মাছ পেয়ে খুশি। প্রচুর ইলিশ জালে পড়ছে, যার বেশিরভাগই বড় আকারের। চট্টগ্রাম নগরীর ফিশারিঘাট, রাসমণিঘাট, পতেঙ্গা ১৫ নম্বর ঘাটসহ বিভিন্ন ঘাটে সকাল ও রাতে একের পর এক ভিড়ছে ইলিশবোঝাই নৌকা। জেলেপাড়ায় এখন শুধুই উৎসবের আমেজ। জেলে ও ব্যাপারীদের হাঁকডাকে জেলেপাড়াগুলো মুখরিত।
সরেজমিনে দেখা যায়, ফিশারিঘাটের একাধিক জায়গায় ট্রলার নোঙর করা। মাথায় ঝুড়ি থেকে ইলিশ, পোয়া, লইট্টা, ছুরি, চিংড়িসহ নানা প্রজাতির মাছ নামাচ্ছেন শ্রমিকেরা। কেউ কেউ আবার সামনের সড়কে রাখা ভ্যানে ইলিশ এনে ফেলছেন। সেই ভ্যানে বিশেষ কায়দায় দৃষ্টিনন্দন করে সাজানো হচ্ছে ধরা পড়া ইলিশ। ভ্যানে সাজানো ইলিশ নিয়ে চালক ছুটে চলছেন আড়তে।
খাজা বাবা ট্রলারের মাঝি রমিজ উদ্দিন বলেন, 'এখানকার ট্রলারগুলো আনোয়ারা, বাঁশখালী, কুতুবদিয়া, সেন্টমার্টিন, নোয়াখালী, হাতিয়া, সন্দ্বীপ, ভোলা এসব জায়গায় মাছ ধরে। আমরা বাঁশখালী ও কুতুবদিয়া উপকূলে মাছ ধরেছি, সকালে ইলিশ নিয়ে ঘাটে এলাম, দামও পাব বলে আশা করছি।'
আড়তদার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, 'মূলত চট্টগ্রামের ফিশারিঘাটে ৬০ শতাংশ মাছই সমুদ্রের। তাই সমুদ্রে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকলে ফিশারিঘাট জমজমাট থাকে না। অনেক দিন পর শ্রমিকেরা কাজ করছেন। ইলিশ ও সামুদ্রিক মাছ কিনতে ক্রেতারা আসছেন। অনেক ভালো লাগছে।'
চট্টগ্রাম ফিশারিঘাট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল সরকার বলেন, চট্টগ্রাম থেকে প্রায় দুই হাজার ইঞ্জিন নৌকা ইলিশ শিকারে গেছে। বড় আকারের এসব নৌকার প্রতিটিতে ৮-১৬ জন জেলে রয়েছেন। তারা তিন থেকে সাত দিন পর্যন্ত সাগরে থাকবেন। এবার কক্সবাজার, সন্দ্বীপ চ্যানেল, মেঘনার মোহনা এবং মহীপুর এলাকায় সমুদ্রে বেশি মাছ ধরা পড়ছে। তাই জেলেরা ওই সব এলাকায় ভিড় করছেন।
তিনি জানান, এরই মধ্যে কিছু নৌকা মাছ নিয়ে আসছে। প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৩ হাজার মণ পর্যন্ত মাছ আসছে বাজারে। সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পরপর দুদিন আবহাওয়া খারাপ থাকায় অনেক জেলে সাগরে নামতে পারেনি। অনেক নৌকা সদ্যই রওয়ানা দিয়েছে। আবার কিছু কিছু নৌকা মাছ নিয়ে ফিরছে। সবগুলো নৌকা ফিরতে শুরু করলে ফিশারিঘাট ইলিশে সয়লাব হয়ে যাবে। এবার গত বছরের চেয়েও বেশি মাছ পাওয়া যাবে বলে এই ব্যবসায়ী নেতা আশা প্রকাশ করেন।
আড়তদার মিন্ঠু সাহা জানান, সাগরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত থাকায় অনেক ট্রলারই ঝুঁকি নিয়ে যেতে চাচ্ছে না। যারা গেছে তারাও কাছাকাছি উপকূল থেকে মাছ ধরেছে। খুব বেশি দূরে গেলে আরও বেশি মাছ ধরা পড়ত।
তিনি বলেন, 'বাজারে আসা জেলেরা বলছেন সাগরে প্রচুর মাছ বিশেষ করে আষাঢ়ী পূর্ণিমার কারণে মাছ তীরের দিকে এসেছে। কিন্তু সাগর উত্তাল থাকায় তারা ধরতে পারছেন না। ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত কেটে গেলে এবার প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে বলে আশা জেলেদের'।
নগরীর রাসমণিঘাট থেকে কয়েকশ জেলে ও নৌকা প্রতিদিনই কয়েক দফা সাগরে যায় ও মাছ নিয়ে আসে। এরই মধ্যে এই ঘাটে ইলিশ বেচাকেনা জমে উঠেছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকাররা ট্রাক বোঝাই করে ইলিশ নিয়ে যাচ্ছেন। এই ঘাটের জেলে ও ব্যাপারীরা জানান, মাত্র ইলিশ ধরা শুরু হয়েছে। তাই দাম কিছুটা বেশি। বড় আকারের ইলিশ পাইকারিতে (এক কেজি ও এর বেশি) প্রতি কেজি ৬০০-৭০০ টাকা এবং ছোট ইলিশ আকারভেদে ৪০০-৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।