‘গোল্ডেন মনির’: সেলসম্যান থেকে কোটিপতি হয়ে ওঠার গল্প
'গোল্ডেন মনির' নামে পরিচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী মনির হোসেনকে অভিযান চালিয়ে রাজধানীর মেরুল বাড্ডা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)।
১৯৯০-এর দশকে রাজধানীর গাউছিয়া মার্কেটের একটি কাপড়ের দোকানে সেলসম্যান হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু হয় তার। স্বর্ণ চোরাচালানের মাধ্যমে ৩০ বছরে তিনি ১ হাজার ৫০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। এরমধ্যে একটি গাড়ির শোরুম, প্রায় ২০০ প্লট এবং একটি বিখ্যাত স্বর্ণের দোকানে শেয়ার রয়েছে তার।
মনিরের বাসায় আজ (শনিবার) অভিযান শেষে এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান র্যাবের ডিরেক্টর (মিডিয়া উইং) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ।
গোয়েন্দা বিভাগের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে র্যাব-৩-এর একটি দল মনিরের বাসার সামনে গতকাল রাত ১১টার দিকে অবস্থান নেয়। এরপর ওই বাসায় শুরু করে অভিযান। আজ সকাল ১১টার দিকে সেই অভিযান শেষ হয়।
পরে ওই বাসার সামনেই প্রেস ব্রিফিং করে র্যাব।
মনিরের বাসা থেকে যা জব্দ করেছে র্যাব
মনিরের বাসা থেকে র্যাব একটি বিদেশি পিস্তল, কয়েক রাউন্ড গুলি, ১০টি দেশের ৯ লাখ টাকা সমমানের বৈদেশিক মুদ্রা, ৮ কেজি স্বর্ণালঙ্কার এবং নগদ ১ কোটি টাকা উদ্ধার করেছে।
এছাড়া পাঁচটি গাড়িও জব্দ করেছে র্যাব। সেগুলোর মধ্যে ৩ কোটি টাকা দরের দুটি বিলাসবহুল গাড়ি তার বাড়ি থেকে এবং বাকি তিনটি গাড়ি তার শোরুম থেকে জব্দ করা হয়েছে।
মনিরের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা
অস্ত্র আইন, মাদক নিয়ন্ত্রণ আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মনিরের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করবে র্যাব।
এছাড়া, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে আরও তদন্ত করার অনুরোধ জানাবে র্যাব।
যেভাবে সেলসম্যান থেকে কোটিপতি
১৯৯০-এর দশকের শুরুর দিকে রাজধানীর গাউছিয়া মার্কেটের একটি কাপড়ের দোকানে বিক্রয়কর্মী (সেলসম্যান) হিসেবে কাজ করতেন মনির। এরপর তিনি ক্রোকারি বিজনেস শুরু করেন। এর পাশাপাশি লাগেজ পার্টির মাধ্যমে চোরাচালানেও যুক্ত হয়ে পড়েন।
ধীরে ধীরে মনির স্বর্ণ চোলাচালানে সম্পৃক্ত হন। সিঙ্গাপুর-ঢাকা-ভারত রুটে চোরাচালান করতেন তিনি। দেশে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ চোরাচালান করেছেন বলে এক নামে সবাই তাকে 'গোল্ডেন মনির' ডাকে।
২০০৭ সালের মামলা
'ভূমিদস্যু' হিসেবেও কুখ্যাতি রয়েছে মনিরের। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অসৎ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে প্রচুর পরিমাণ অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। এরমধ্যে ডিআইটি প্রজেক্ট, বাড্ডা, নিকুঞ্জ ও কেরাণীগঞ্জে ২০০ প্লট নিজের করে নিয়েছেন বলে গোয়েন্দা রিপোর্টে জানা গেছে।
এ ছাড়া, 'অটো কার সিলেকশন' নামে একটি গাড়ির দোকানের মালিক তিনি। রাজধানীর গাউছিয়া মার্কেটে একটি স্বর্ণের দোকানেও রয়েছে তার শেয়ার।
সব মিলিয়ে মনিরের সম্পদের পরিমাণ এখন ১ হাজার ৫০ কোটি টাকারও বেশি।