ভারমুক্ত হয়ে হেফাজতের পূর্ণাঙ্গ আমিরের দায়িত্বে মহিবুল্লাহ বাবুনগরী
এক বছরে তিন নেতার মৃত্যুতে নেতৃত্ব শূন্যতার শঙ্কায় থাকা কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত আমির আল্লামা মহিবুল্লাহ বাবুনগরীর নেতৃত্বেই ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে। জুনায়েদ বাবুনগরীর মৃত্যুর পর রোববার প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় তাঁকে ভারমুক্ত করে হেফাজতের পূর্ণাঙ্গ আমির ঘোষণা করা হয়েছে।
বিষয়টি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন সংগঠনটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদ্রিস। দুপুরে রাজধানীর খিলগাঁওয়ে সংগঠনটির মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদীর পরিচালনাধীন মাখাজানুল উলুম মাদ্রাসায় সংগঠনটির সর্বোচ্চ কমিটির এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এর মধ্যে দিয়ে হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীর অনুসারীদের নিয়ন্ত্রণেই থাকছে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক সংগঠনটি। নতুন আমির আল্লামা মহিবুল্লাহ বাবুনগরী সম্পর্কে জুনায়েদ বাবুনগরীর মামা।
জুনায়েদ বাবুনগরীর মৃত্যুর দিন রাতে সংগঠনটির বর্তমান মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদি মজলিসে শূরার সদস্যদের সঙ্গে ফোনালাপের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী নাম আমির (ভারপ্রাপ্ত) হিসাবে ঘোষণা করেন।
গতকাল শনিবার মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ঢাকায় পৌঁছানোর পর বর্তমান মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদীর সঙ্গে বৈঠক হয়। সেখানে ভারপ্রাপ্ত থেকে ভারমুক্ত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। এরপর সিদ্ধান্ত হয়, আজকে প্রথমে খাস কমিটিতে তার ভারমুক্ত হওয়ার বিষয়ে প্রস্তাবনা দেয়া হয়। এরপর জোহরের পর কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে ভারমুক্ত ঘোষণা করা হয় মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী। মহাসচিবের একান্ত ইচ্ছায় দলটি এ সিদ্ধান্ত নেয় বলে জানান হেফাজত নেতারা।
মূলত আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যুর পর থেকে নুরুল ইসলাম জিহাদি হেফাজত নিয়ন্ত্রণ করছেন। ২০১৩ ও এর পরবর্তী সময়ে হেফাজতের মূল কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট না থাকলেও আল্লামা শফীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে কওমি অঙ্গনে প্রভাব বিস্তার করেন তিনি। আল্লামা শফীর ব্যক্তিগত ক্ষমতায় নুরুল ইসলামকে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের সহ-সভাপতি করা হয়। যদিও আল্লামা শফীর শেষ ও মৃত্যুপরবর্তী সময়ে শফী বিরোধী পক্ষের নেতৃত্ব দেন তিনি।
আল্লামা শফী গত বছরের সেপ্টেম্বর মারা যাওয়ার পর হাটহাজারী মাদ্রাসায় কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটিতে আমির নির্বাচিত হন জুনায়েদ বাবুনগরী, আর মহাসচিব হন নূর হোসাইন কাসেমী।
এরপর আমির ও মহাসচিবের বলয়ের লোকজন একচেটিয়া কমিটিতে জায়গা পান। এতে আল্লামা শফীর ছেলে আনাস মাদানীসহ হেফাজতের প্রতিষ্ঠাকালীন নেতৃত্বে থাকা অধিকাংশকে বাদ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে শফীপন্থিরা বিকল্প কমিটি করবেন ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত তাদের কমিটি আলোর মুখ দেখেনি।
আমিরের দায়িত্ব পাওয়া মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী সম্পর্কে জুনাইদ বাবুনগরীর মামা। তিনি হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির প্রয়াত আল্লামা শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বাধীন কমিটিতে সিনিয়র নায়েবে আমির ছিলেন।
পরে কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি মিললে আল্লামা শফীর ঢাকায় শোকরানা মাহফিলের আয়োজনের বিরোধিতা করে ২০১৯ সালে ইসলামী ঐক্যজোট, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ ও আল হাইআতুল উলয়া-লিল-জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ থেকে পদত্যাগ করেন। যদিও আল্লামা শফীর মৃত্যুর পর গত নভেম্বরের কাউন্সিলে প্রধান উপদেষ্টা হন মুহিবল্লাহ বাবুনগরী।
বছরের মার্চ মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরোধিতায় মাঠে নামে জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বাধীন হেফাজত। এ সময় দেশের কয়েকটি স্থানে সহিংস ঘটনা ঘটে। এরপরই সরকার কঠোর অবস্থানে যায়। গ্রেফতার হতে থাকে একের পর এক নেতা। এক পর্যায়ে কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দেন বাবুনগরী। গত ৭ জুন তার নেতৃত্বে হেফাজতের ৩৩ সদস্যবিশিষ্ট নতুন কমিটি হয়।
জুনায়েদ বাবুনগরীর মৃত্যুর পর নয় সদস্যের এ কমিটিতে বর্তমানে আছেন আটজন। তারা হলেন- আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী, আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা সাজেদুর রহমান, মাওলানা মুহিউদ্দীন রব্বানী, মাওলানা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী, মাওলানা আব্দুল আউয়াল।