হেফাজত নেতাদের চাপে নারায়ণগঞ্জে লালন মেলা আয়োজনের অনুমতি বাতিল
নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার কাশিপুরের মধ্য নরসিংহপুর গ্রামে 'মুক্তিধাম আশ্রম ও লালন একাডেমি' প্রাঙ্গণে আয়োজিত 'মহতি সাধু সঙ্গ ও লালন মেলা' আয়োজনের অনুমতি বাতিল করেছে জেলা প্রশাসন। নিরাপত্তার কারণ এবং স্থানীয় হেফাজত নেতাদের আপত্তির জেরে এই অনুমতি বাতিল করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক। তিনি বলেন, 'এই মেলা বন্ধের জন্য স্থানীয় হেফাজতের নেতারা দাবি জানিয়েছেন। মেলার অনুমতি দেয়া হলে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরী হতে পারে। সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনায় আমরা লালন মেলার অনুমতি প্রদান করিনি।'
এর আগে, গত ১৫ নভেম্বর হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা এই মেলাকে 'ঈমান-বিধ্বংসী' আখ্যা দিয়ে মেলা বন্ধে মিছিল করেন। পরে মুক্তিধাম আশ্রমের অদূরে জড়ো হয়ে সেখানে বক্তব্য রাখেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুল আউয়াল।
মাওলানা আব্দুল আউয়াল বলেন, 'অন্যায়কে প্রতিহত করতে আমরা এখানে সমবেত হয়েছি। আমাদের তৌহিদী জনতা নারায়ণগঞ্জে কম নাই। প্রয়োজনে তৌহিদী জনতা সকলকে নিয়ে আমরা সামনে বাড়ব, কী করে এটি (লালন মেলা) বন্ধ করা যায়, সেটি আমরা দেখবো। প্রশাসনকে বলবো, এখানে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে যেতে পারে। মুসলিম তৌহিদী জনতা আপস করতে রাজি না। প্রয়োজনে আমরা হাত দিয়ে বাধা দিব। যা কিছু এখানে হচ্ছে, এগুলো বন্ধ করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই যেন এটা না হয়। অপ্রীতিকর কিছু হলে তার দায়ভার আপনাদের নিতে হবে।'
এদিকে হেফাজত নেতা আব্দুল আউয়ালের 'হুমকির' প্রতিবাদে গত ২০ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রেসক্লাব প্রাঙ্গনে মানববন্ধন করে মুক্তিধাম আশ্রমের লোকজন এবং নারায়ণগঞ্জের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা।
মানববন্ধনে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সিনিয়র সহ-সভাপতি রফিউর রাব্বী বলেন, 'প্রশাসনের দায়িত্ব হচ্ছে মানুষের মত প্রকাশ, ধর্ম পালন এবং শান্তি শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা। নির্বিঘ্নে লালন মেলা আয়োজনের জন্য রাষ্ট্র ও সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে আপনাদের কাজ করতে হবে। এই দেশে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ রয়েছে। সকল ধর্ম, বর্ণ ও মতের মানুষের বসবাস এই দেশে। এখানে প্রত্যেকের নিজ নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতা রয়েছ্। নিজের মত আরেকজনের ওপর চাপিয়ে দিয়ে তার কণ্ঠরোধ করা শুধু চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের বিরুদ্ধেই নয়, এটি আমাদের সংবিধানেরও বিরোধীতা।'
আয়োজকরা জানান, গত সাত বছর ধরে এখানে 'মহতি সাধু সঙ্গ ও লালন মেলা' আয়োজন করে আসছিলেন তারা। মুক্তিধাম আশ্রম ও লালন একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ফকির শাহ জালাল বলেন, 'দশ বছর আগে আমার জমিতে আশ্রম প্রতিষ্ঠা করি। গত সাত বছর ধরে— দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লালন ভক্তরা এখানে আসেন। আমরা তো কারও বিরুদ্ধে কিছু বলি না। আমাদের মত করে সাঁইজির গান চর্চা করি, ভক্তদের মাঝে খাবার বিতরণ করি। এমন পরিস্থিতি আগে কখনও হয়নি। এলাকার মানুষও বাধা দেয়নি। কিন্তু এবার তৌহিদী জনতা বলছে, মেলা বন্ধ না করলে সব ভেঙ্গে ফেলবে।'
শাহ জালাল জানান, "গত ১৪ অক্টোবর 'মহতি সাধু সঙ্গ ও লালন মেলা' আয়োজনের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর অনুমতি চাওয়া হয়। ইতোমধ্যে এই আয়োজনের জন্য কার্ড ছাপানো এবং বিতরণ করা হয়ে গেছে। তৌহিদী জনতার হুমকির পর ১৯ নভেম্বর পুলিশ সুপারের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছি। কিন্তু নিরাপত্তা জনিত কারণে শেষ পর্যন্ত জেলা প্রশাসন অনুমতি প্রদান করেনি।"