ভুটান ছাড়াই কার্যকর হবে বিবিআইএন মোটরগাড়ি চুক্তি
ভুটানকে বাদ রেখে বাংলাদেশ-ভুটান-ইন্ডিয়া-নেপাল মোটর ভেহিক্যাল এগ্রিমেন্ট (বিবিআইএন-এমভিএ) কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপাল।
গত ২৭ নভেম্বর নয়াদিল্লীতে ত্রি-দেশীয় প্রতিনিধিদের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম।
"ভুটানকে বাদ রেখে বাকি তিনটি দেশ বিবিআইএন-এমভিএ কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এই চুক্তির এনফোর্সমেন্ট তারিখের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। সবকিছু চূড়ান্ত করতে ত্রি-দেশীয় প্রতিনিধিরা আরও কিছু সভা করবে," জানান তিনি।
২০১৫ সালের ১৫ জুন ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে স্বাক্ষরিত হয় এই চুক্তি। যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহনের আন্তঃসীমান্ত চলাচলের সুবিধার্থে স্বাক্ষরিত হয় এটি। পরবর্তীতে, তিনটি দেশ চুক্তিটি অনুমোদন করলেও ভুটান এ থেকে পিছিয়ে যায়।
এরপর থেকেই ভুটানকে ছাড়া চুক্তি বাস্তবায়নের কথা বলে আসছে ভারত। ভারতের মতে, ভবিষ্যতে সম্মত হলে যে কোনো সময় এই চুক্তিতে পুনরায় যুক্ত হতে পারে ভুটান।
বাংলাদেশ, ভারত ও নেপাল এর আগে খসড়া কার্গো প্রোটোকলের বেশিরভাগের সাথে একমত হলেও কার্গোর ওজন, কার্গো ফ্রেইটের জন্য ব্যাংক গ্যারান্টি প্রবর্তন এবং ঠিক কী পরিমাণ পণ্য পরিবহন করা যাবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি।
কর্মকর্তারা জানায়, ভারত ভারী মালবাহী ট্রেইলার ব্যবহার করতে চাইলে বাংলাদেশ নিজেদের দুর্বল অবকাঠামোর কথা উল্লেখ করে এর বিরোধিতা করে।
কার্গো প্রোটোকলের অধীনে, কার্গো পণ্য পরিবহনের জন্য একটি ব্যাংক গ্যারান্টি বিধান চেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু আর্থিক লেনদেন শুধুমাত্র কাস্টমস বন্ডের অধীনে রাখার পরামর্শ দেয় ভারত। বৈঠকে শেষ পর্যন্ত ব্যাংক গ্যারান্টি অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
যাত্রী প্রোটোকলের বিষয়ে, ঢাকা-শিলিগুড়ি-গ্যাংটক এবং বাংলাদেশ-আসাম রুট স্থাপনের প্রস্তাব করে বাংলাদেশ। এই প্রস্তাবে সম্মতিও দেয় ভারত। যাত্রী প্রোটোকলে আরও দুটি রুট অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বাংলাদেশের প্রস্তাবেও ভারত সম্মত হয়েছে।
নেপালের পরামর্শ অনুযায়ী দেশগুলোর তাদের নিজ নিজ অঞ্চলে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের জন্য চার্জ ধার্য এবং অনুমোদনের ক্ষমতা থাকতে হবে। তবে, সেসময় একটি নির্দিষ্ট চার্জের বিরোধিতা করে তারা।
এদিকে দেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, শুল্ক এবং বাণিজ্যের সাধারণ চুক্তির সাথে প্রোটোকলের ট্রানজিট সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। মোংলা এবং চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের জন্য ভারতের সাথে ট্রানজিট চুক্তির মতো একটি স্ট্যান্ডার্ড অফ প্রসিডিওর (এসওপি) স্বাক্ষরের পর বিবিআইএন প্রোটোকলের অধীনে ট্রানজিট শুরু হবে। দেশগুলো নিজেরাই পারমিট প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে কাজ করবে।
২০১৭ সালে বিবিআইএন চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয় ভুটান। এরপরের বছর বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল বাস সার্ভিসের ট্রায়াল রান পরিচালিত হয়েছিল।
সেসময় তিনটি দেশ এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের প্রায় ৪৫ জন প্রতিনিধিকে নিয়ে দুটি বাস ভারত হয়ে কাঠমান্ডুর উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ে।
চলতি বছরের মার্চে ঢাকায় বাংলাদেশ-ভারত সচিব পর্যায়ের বৈঠকে কিছু 'আঞ্চলিক চুক্তি' তুলে ধরে বাংলাদেশ। চুক্তিগুলোকে পুনরায় সক্রিয় করতে দিল্লির বৃহত্তর ভূমিকা চেয়েছিল তারা।