ভোলায় কোরবানির পশু বিক্রি নিয়ে উদ্বিগ্ন খামারিরা
ভোলায় কোরবানির পশু বিক্রি নিয়ে উদ্বিগ্ন গো-খামারিরা। জেলার অধিকাংশ খামারি আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া প্রস্তুত করলেও দেশে করোনার ভয়াবহতায় চলমান লকডাউনের কারণে কোরবানির পশু বেচাকেনা ও ন্যায্য দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা।
এছাড়া দুধের বাজার মূল্য কমে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত দুধ বিক্রিতে লোকসান গুনছেন তারা। তাই কিছুটা লোকসান এড়াতে আসন্ন কোরবানিকে সামনে রেখে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের মাধ্যমে পুশুর হাট গুলোকে ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবি করছেন জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, আসন্ন কোরবানিতে জেলায় পশুর চাহিদা রয়েছে রয়েছে ১ লক্ষ ২৬০টি। যার মধ্যে গরু মজুদ রয়েছে ৭৫ হাজার ৩০৪টি, মহিষ ২ হাজার ৫৯২টি, ছাগল ২৭ হাজার ৪৭৪টি, ভেড়া ১ হাজার ৩শত ৮৪টি।
চাহিদার বিপরীতে মজুদ রাখা হয়েছে ১ লক্ষ ৬ হাজার ৭৫৪টি পশু। যার মধ্যে ২ হাজার ৯৭৫টি খামারে বাণিজ্যিক মোটা-তাজাকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২৩ হাজার পশু মজুদ রাখা হলেও বাকিগুলোকে পারিবারিক ভাবেই মোটা-তাজাকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়েছে।
খামারের বাইরে জেলায় গবাদি পশু রয়েছে ১০ লাখ ৫ হাজার ৩০৬টি। যার মধ্যে গরু রয়েছে ৫ লাখ ৯৫ হাজার, মহিষ ১ লাখ ২০ হাজার, ছাগল ২ লাখ ৬৯ হাজার, ভেড়া ২১ হাজার ৩০৬টি।
এদিকে, আসন্ন কোরবানিকে ঘিরে জেলার পশু খামারিরা গবাদি পশু মজুদ রেখে চরম বিপাকে পড়েছেন। করোনা ভয়াবহতায় টানা লকডাউনে প্রতিটি পশুর হাট বন্ধ থাকায় গরু বেচাকেনা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা। এভাবে বিধিনিষেধ চলতে থাকলে বিপদে পড়বেন বলে জানিয়েছেন তারা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সদর উপজেলার চরনোয়াবাদ এলাকার সাহাদজাহান ডেইরি ফার্মে ৭০টি দুধের গরুর পাশাপাশি কোরবানির জন্য ৯টি গরু ও ৮০টি ছাগল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কিন্তু লকডাউনের কারণে এসব গরু ও ছাগল বিক্রি নিয়ে অনেকটা শঙ্কায় রয়েছেন বলে জানান খামারের মালিক আবু সায়েম।
তিনি বলেন, "আমার ৯টি গরুর মধ্যে সবচেয়ে কম মূল্যের গরুটির দাম দেড় লাখ টাকা। এছাড়া, চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা মূল্যের গরু আমার খামারে রয়েছে। লকডাউনের জন্য আমার লাখ লাখ টাকার চালান আটকে আছে। এছাড়া ৭০টি দুধের গরু থেকে ২৫০ লিটার দুধ আসলেও বাজার মূল্য কমে গিয়ে ৪০ টাকা কেজিতে ঠেকেছে। খাবার ক্রয় করে উৎপাদিত দুধ বিক্রি করছি লিটার প্রতি ৩০ টাকা। এতে করে প্রতিদিনই মোটা অংকের টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।"
একই উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের মমতা ডেইরি ফার্মেও দেখা যায় একই চিত্র। দুধের গরুর পাশাপাশি কোরবানির জন্য ১০০ গরু প্রস্তুত রাখলেও লকডাউনে পশুর হাট না বসায় দুঃচিন্তায় রয়েছেন বলে জানান খামারের মালিক ইফতারুল হাসান স্বপন।
তিনি বলেন, "গত বছরও করোনার কারণে আমার খামারের বহু গরু বিক্রি করতে পারিনি। গত বছরের চেয়ে এখন দেখছি আরো ভয়াবহ অবস্থা। কোরবানির এ সময়টুকুতে সরকার স্বাস্থ্যবিধির মধ্যে পশুর হাট গুলোকে উন্মুক্ত করে দিলে আমরা কিছুটা হলেও লোকসান কমাতে সক্ষম হবো।"
একই চিত্র দেখা গেছে শান্তুু চৌধুরী ডেইরি ফার্ম, মুসা ডেইরি ফার্ম, মা ডেইরি ফার্ম, মাতব্বর ডেইরি ফার্ম, জসিম ডেইরি ফার্মসহ জেলার প্রতিটি ডেইরি ফার্মে। গরু মজুদ রেখে বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা।
অন্যদিকে, গেলো বছর করোনার প্রভাবে খামারে প্রায় দুই শাতধিক কোরবানির গরু মজুদ করে মোটা অংকের লোকসানে পড়ায় এবার সীমিত সংখক গরু মজুদ করার কথা জানালেন দৌলতখান উপজেলার চরপাতা ইউনিয়নের আরটিএন খামারের মালিক মো. হুমায়ন কবির।
তিনি বলেন, "গেল বছর খামারে কোরবানির জন্য ২১০টি গরু মজুদ করে বিক্রি হয়েছে মাত্র ১২৬টি গরু। যা পরবর্তীতে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেকটা কমে বিক্রি করে কোনোভাবে চালানটা উঠিয়েছি। তাই লোকসানের ভয়ে এবার কোরবানির জন্য মাত্র ১০টি গরু মজুদ করেছি। এছাড়া, দুধের ৪০টি গরু থেকে প্রতিদিন ৩০০ লিটার দুধ দিয়ে গরুর খাদ্য ও কর্মচারীদের বেতনসহ খামারের সকল খরচ পরিচালনা করে আসলেও সম্প্রতি করোনার কারণে দুধের বাজার লিটার প্রতি ৫০ টাকা থেকে কমে চলে এসেছে মাত্র ৩০ টাকায়। যার জন্য মাস শেষে গুনতে হচ্ছে মোটা অংশের লোকসান। এমন অবস্থায় আমাদের মতো খামারিদের দিকে সরকার সামান্য দৃষ্টি দিলেই আমাদের পক্ষে পুনরায় ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে।"
তবে সরকারের চলমান বিধিনিষেধের কথা বিবেচনা করে পশু কেনা-বেচার জন্য জেলায় ৮টি অনলাইন খোলা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ইন্দ্রজিৎ কুমার মন্ডল।
তিনি খামারিদের হতাশ না হওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়ে বলেন, "এখনও হাতে সময় আছে। যদি সরকারের দেওয়া বিধিনিষেধ না থাকে এবং ভারতীয় গরু দেশে আসা বন্ধ হয়, তাহলে ভোলার খামারিরা ভালো দামে পশু বিক্রি করতে পারবেন।"