মধ্যরাতে সাংবাদিককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে জেল-জরিমানা
মধ্যরাতে কুড়িগ্রামের এক সাংবাদিককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর মাদক রাখার অভিযোগে জেল-জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
শুক্রবার মধ্যরাতে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা এ অভিযান পরিচালনা করেন।
জেল-জরিমানার দণ্ড পাওয়া ওই সাংবাদিকের নাম আরিফুল ইসলাম রিগান। তিনি অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি।
আরিফুলের স্ত্রী মোস্তারিমা সরদার মিতু জানান, মাঝরাতে ঘরের দরজা ভেঙ্গে তার স্বামীকে মারতে মারতে তুলে নিয়ে যায় একদল লোক। পরবর্তীতে জানতে পারেন, মাদক রাখার অভিযোগে তার স্বামীকে সাজা দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
আরিফুলকে দণ্ড দেওয়া ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতেই এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।
বাংলা ট্রিবিউন তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন একটি পুকুর সংস্কার করে নিজের নামে নামকরণ করতে চেয়েছিলেন। আরিফুল এ বিষয়ে নিউজ করার পর থেকেই তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন ডিসি। এছাড়া, সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়োগ নিয়ে ডিসি সুলতানা পারভীনের অনিয়ম নিয়েও প্রতিবেদন তৈরি করেন আরিফুল। এ কারণে আরিফুলের ওপর আরও ক্ষুব্ধ হন তিনি।
সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের স্ত্রী মোস্তারিমা সরদার মিতু সাংবাদিকদের বলেন, "শুক্রবার রাত ১২টার দিকে খাওয়া শেষে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এ সময় হঠাৎ কে বা কারা দরজা ধাক্কাধাক্কি শুরু করলে আমার স্বামী ফোনে স্বজনদের বিষয়টি জানান। এক পর্যায়ে দরজা ভেঙে তারা আমার স্বামীকে মারধর শুরু করে। আমি বাধা দিতে গেলে তারা আমাকেও মারতে উদ্যত হয়। পরে আমার স্বামীকে তুলে নিয়ে যায়। পরে জানতে পারি তার বিরুদ্ধে মাদকের অভিযোগে ১ বছরের জেল দেয়া হয়েছে। আমার স্বামী কোন অন্যায় করেনি আমি ন্যায় বিচার চাই।"
এ বিষয়ে অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা বলেন, "সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ, আনসার ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে টাস্কফোর্সের অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ অভিযানের সময় মাদকসহ আরিফুল ইসলাম রিগানকে আটক করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে সে দোষ স্বীকার করায় এক বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।"
এদিকে কুড়িগ্রামে বাংলা ট্রিবিউনের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে মধ্যরাতে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তারের পর মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে মধ্যরাতেই মাদকের মামলা দিয়ে ১ বছরের জেল প্রদান করায় স্থানীয় সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ ফুঁসে উঠেছে। এর প্রতিবাদে তারা শনিবার দুপুরে কুড়িগ্রাম শহরের শাপলা চত্ত্বর (কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার) এলাকায় একটি মানববন্ধন করে।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন কুড়িগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান বিপ্লব, দৈনিক কুড়িগ্রাম খবরের সম্পাদক এসএম ছানালাল বকসী, টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ আলমগীর, সাংবাদিক রাজু মোস্তাফিজ, হুমায়ুন কবির সুর্য ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদ দুলাল বোস।
আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে আরিফুলের বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ প্রত্যাহার করে মুক্তি না দিলে বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণা দেন সাংবাদিক নেতারা।
কুড়িগ্রাম সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর ইসলাম জানান, "আমরা জানতে পেরেছি ডিসি অফিসের লোকজন সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে নিয়ে এসে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জেলে পাঠিয়েছে।"
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোঃ আবু জাফর বলেন, "আমি কি বলবো, আমি তো গতরাতের মাদক বিরোধী অভিযানে ছিলাম না। সংশ্লিষ্ট ম্যাজিট্রেট এ বিষয়ে বলতে পারবেন।"