মির্জার বিরুদ্ধে মামলা নেয়নি পুলিশ, বাদল কারাগারে
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের বিবাদমান দু'পক্ষের মধ্যে বিরোধ ও সংঘর্ষের ঘটনা ও পাল্টাপাল্টি মামলায় ফের উত্তপ্ত বসুরহাট পৌরসভা।
মির্জা-বাদলের চলমান সংঘর্ষের ঘটনায় এ পর্যন্ত মিজানুর রহমান বাদল ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা নিলেও বাদলের সমর্থকরা দু'টি আবেদন দিলে তা রেকর্ড করেনি কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পৌর ভবনে ঘিরে রাখলেও শুক্রবার সকাল থেকে পৌর ভবনের বাইরে আসেন আবদুল কাদের মির্জা।
শুক্রবার দুপুরে গ্রেপ্তারকৃত আ.লীগ নেতা মিজানুর রহমান বাদলকে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ১নং আমলী আদলতে হাজির করে পুলিশ। আদালতের বিচারক সোয়েব উদ্দিন খান শুনানি শেষে বাদলকে জেলা কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করেন।
শুক্রবার বসুরহাট বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পৌর এলাকা জুড়ে ভীত পরিবেশ বিরাজ করছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে নেমে এসেছে স্থবিরতা। দু'পক্ষের মধ্যকার চলমান উত্তেজনায় সার্বক্ষণিক আতংকে রয়েছেন বসুরহাট বাজারের ব্যবসায়ীরা। দ্রুত তাদের ব্যবসায়িক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে দলের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে এ ভীতিকর অবস্থা থেকে মুক্তি চাচ্ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষরা।
বসুরহাটে আবদুল কাদের মির্জার শো-ডাউন
মঙ্গলবার আ.লীগের দু'পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে বসুরহাট পৌরভবনে অবস্থান নেন মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। বৃহস্পতিবার বিকেলে নোয়াখালী প্রেসক্লাব এলাকা থেকে আ.লীগ নেতা মিজানুর রহমান বাদল গ্রেপ্তারের পর পুলিশ, র্যাব সদস্যরা বসুরহাট পৌরসভার বাইরে অবস্থান নেন। ভবনটি নজরদারিতে রাখেন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। রাতভর ব্যাপক উত্তেজনার পর শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পৌর ভবন থেকে কয়েকজন পৌর কর্মচারীসহ বের হয়ে আসেন মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। কর্মচারীদের নিয়ে বসুরহাট বাজার ঘুরে পুনঃরায় দুপুরে পৌরভবনের তৃতীয় তলায় নিজের কক্ষে যান মির্জা। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আবারও বের হয়ে আসেন আবদুল কাদের মির্জা। এসময় তিনি তার কয়েকজন সমর্থকদের নিয়ে বাজারের বিভিন্ন অলিগলিতে ঘুরে শো-ডাউন করেন। এ খবর লেখা পর্যন্ত (সন্ধ্যা ৬টা) তিনি পৌর ভবনের ভিতরে অবস্থান করছেন। পৌর ভবনের বটতলায় দিনভর কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
নিহত আলা উদ্দিনের ছোট ভাই এমদাদ হোসেনের মামলা নেয়নি পুলিশ
বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে নিহতের ছোট ভাই এমদাদ হোসেন বাদী হয়ে ১৬৪ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরও ৩০-৪০জনকে আসামী করে কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ নিয়ে আসেন। অভিযোগে মেয়র আবদুল কাদের মির্জা, তার ভাই শাহাদাত হোসেন ও ছেলে মির্জা মাসরুর কাদের তাসিককে আসামী করা হয়েছে। কিন্তু এজাহারে কিছু ভুল থাকার কথা বলে পুলিশ তাৎক্ষনিকভাবে তা মামলা হিসেবে রেকর্ড না করে রাতে তাকে বাড়ীতে পৌঁছে দেয় এবং সকালে থানায় আসতে বলে। পুলিশের কথায় শুক্রবার সকালে এজাহারের কপিটি নিয়ে পুন:রায় থানায় আসেন বাদী এমদাদ হোসেন। কিন্তু দুপুর ২টা পর্যন্ত থানার ওসি মীর জাহেদুল হক রনির জন্য অপেক্ষা করেও তার দেখা পাননি এমদাদ।
এমদাদ অভিযোগ করে বলেন, আমার ভায়ের হত্যার ঘটনার এজাহারে আবদুল কাদের মির্জাকে প্রধান আসামী করায় পুলিশ আমার মামলাটি রেকর্ড করেনি। এরমধ্যে পুলিশ এজাহার থেকে কাদের মির্জার নাম বাদ দিতে আমাকে চাপ দেয়। কিন্তু কোন চাপের কাছে আমি নত হবো না। আমি শনিবার আদালতে গিয়ে সেখানে মামলা করবো।
বাদলের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা
পৌর ভবনে হামলা, ভাঙচুরের অভিযোগ এনে বৃহস্পতিবার রাতে মিজানুর রহমান বাদলকে প্রধান আসামী, মির্জা কাদেরের দুই ভাগিনা মাহবুবুর রশীদ মঞ্জু ও ফখরুল ইসলাম রাহাতসহ ৯৯ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ২৫০-৩০০জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছেন বসুরহাট পৌরসভার অফিস সহকারী নূর নবী স্বপন।
মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াতের স্ত্রীর মামলাও নেয়নি পুলিশ
গত ৮মার্চ বসুরহাট রূপালী চত্বরে কাদের মির্জা ও তার অনুসারীরা উপজেলা আ.লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খানের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। এসময় হামলাকারীরা তাকে মারধর করে গায়ের পাঞ্চাবি ছিঁড়ে ফেলে। আহত খিজির হায়াত খানকে ওইরাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় গত ৯মার্চ খিজির হায়াত খানের স্ত্রী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান ও উপজেলা মহিলা আ.লীগের সভাপতি আরজুমান পারভীন একটি লিখিত এজাহার নিয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানায় যান। ওই এজাহারে মেয়র আবদুল কাদের মির্জা, তার ভাই শাহাদাত হোসেন ও ছেলে মাশরুর কাদের তাসিকসহ ৯৮জনের নাম উল্লেখ করা হয়। আর এই কারণে গত চার দিনেও মামলাটি পুলিশ রেকর্ড করেনি বলে অভিযোগ করেন আরজুমান পারভীন।
মিজানুর রহমান বাদলের মুক্তির দাবিতে পরিবারের সংবাদ সম্মেলন
পুলিশের দায়ের করা মামলায় নোয়াখালী প্রেসক্লাব এলাকা থেকে সাদা পোশাকের পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারকৃত কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের মুক্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে তার পরিবার।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টায় অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, বাদলের মা আরা ধনী বেগম, স্ত্রী সেলিনা আক্তার কাকুলি, বোন ফাতেমা আক্তার বকুল ও আমেনা বেগম।
বক্তারা বলেন, মিজানুর রহমান বাদল উপজেলার একজন সফল চেয়ারম্যান। চট্টগ্রাম বিভাগে সেরা চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। তার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি আ.লীগ পরিবারের সন্তান। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা সত্যবচনের নামে বাদলসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ কথা বলে আসছে। তাদের অভিযোগ মির্জার নেতৃত্বে চাপরাশিরহাটে সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির ও বসুরহাট বাজারে তাদের প্রতিবেশী আলা উদ্দিনকে হত্যা করা হয়েছে। অথচ পুলিশ হত্যাকারী মির্জা ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে কোন মামলা না নিয়ে উল্টো বাদলকে গ্রেপ্তার করেছে। আমরা প্রধানমন্ত্রী ও ওবায়দুল কাদেরের কাছে আবেদন করছি হত্যার ঘটনা সঠিক তদন্ত করে বাদলকে মুক্তি দিয়ে মির্জার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি মীর জাহিদুল হক রনি জানান, সংঘর্ষে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ ঘটনায় নতুন করে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে শুক্রবার ভোরে বসুরহাট রূপারী চত্বর থেকে ৭টি ককটেল ও ২৬টি গাবের লাঠি উদ্ধার করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পৌর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। টহলে আছে র্যাব সদস্যরা।