রপ্তানির সুবিধার্থে বাংলাদেশের সাথে রেল সংযোগ বাড়াতে চায় ভুটান
পণ্য রপ্তানি পথে বাঁধা কাটিয়ে উঠতে, ভারতের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাথে নতুন রেল যোগাযোগের পথ সন্ধান করছে ভুটান।
বাংলাদেশে অবস্থিত ভুটান দূতাবাসের কর্মকর্তাদের মতে, সম্প্রতি পুনরায় চালু করা করা হলদিবাড়ি-চিলাহাটি রেলপথ ভুটান থেকে বাংলাদেশে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি পথ হয়ে উঠতে পারে।
সড়কপথে ভুটান থেকে বাংলাদেশে পণ্য রপ্তানিকারীরা বিভিন্ন ঝামেলার সম্মুখীন হন, বিশেষ করে ভারতে পৌঁছানোর পর থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের আগ পর্যন্ত।বেশিরভাগ ঝামেলাই অনানুষ্ঠানিকভাবে কর সংগ্রহের অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া এখানে এত বেশি সময় লেগে যায় যে প্রায়ই কমলা এবং আপেলের মত পণ্যগুলো পচে যায়।
কর্মকর্তারা বলেন যে, সরকারী পর্যায়ে কোনও সমস্যা হয় না তবে সাধারণ মানুষ এক্ষেত্রে অন্তহীন সমস্যা তৈরি করছে। ভুটানের রপ্তানিকারকরা বেশ কয়েকবার এ বিষয়ে অভিযোগ করলেও সরকার তেমন কোন পদক্ষেপ নেয়নি বলে তারা জানান। একজন কর্মকর্তা জানান, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে এক ট্রাক থেকে পণ্য রীতিমত আরেক ট্রাকে স্থানান্তর করতে হয়।
ঢাকায় ভুটান দূতাবাসের বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, ভারতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ভুটান থেকে পণ্য পরিবহনের ফলে শুধু যে রপ্তানিকারকরা নানা সমস্যায় পড়ছেন তাই নয়, এতে সময় এবং খরচ উভয় বাড়ছে।
তিনি বলেন, দূতাবাস শীঘ্রই বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে ট্রানজিট চুক্তি চূড়ান্ত করার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবে।
প্রায় ৫৫ বছর বন্ধ থাকার পরে ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ হলদিবাড়ি-চিলাহাটি রেলপথটি সম্প্রতি পুনরায় চালু করা হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দু'দেশের মধ্যে রেল যোগাযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে গত বছরের ডিসেম্বরে যৌথভাবে এর উদ্বোধন করেন।
১৯৬৫ সালে ভারত ও বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) মধ্যে সংঘর্ষের ফলে রেলপথটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। ১৯৬৫ সালের আগে দু'দেশের মধ্যে সাতটি আন্তঃসীমান্ত রেখা ছিল। হলদিবাড়ি-চিলাহাটি রেলপথটি পুনঃস্থাপনের দিক দিয়ে পঞ্চম।
গত বছরের ৬ই ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (প্রেফারেন্সিয়াল ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট বা পিটিএ) অনুযায়ী, ভুটান আপেল-কমলাসহ বাংলাদেশে ৩৪টি পণ্য রপ্তানি করে থাকে।
দূতাবাসের কর্মকর্তারা জানান, রেলপথ আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক উভয় দেশের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। "পিটিএ'র অধীনে ভুটান রেলপথে বাংলাদেশে গ্যালন গ্যালন পানীয় জল রপ্তানি করতে পারে"।
গত মাসে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং বাংলাদেশে এলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দ্বিপক্ষীয় আলাপকালেও হলদিবাড়ি-চিলাহাটি হয়ে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে রেল সংযোগ স্থাপনের বিষয়টি উঠে আসে।
উল্লেখ্য, পিটিএ'র ফলে আগের ১৮টি পণ্যসহ নতুন আরও ১৬টি পণ্য ভুটান থেকে বাংলাদেশে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পায়। একইভাবে বাংলাদেশ ভুটানে ১০০টি পণ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পায়।