রিফাত হত্যার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ, মিন্নির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে তার বয়সী মেয়েরা বিপদগামী হবে: আদালত
মিন্নির কারনে হতভাগা রিফাত শরীফ নির্মমভাবে খুন হয়েছেন এবং তার পিতা-মাতা পুত্রহারা হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন আদালত। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির রায়ের অবজারভেশনে কথা বলেছেন বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালত।
শনিবার (৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রিফাত হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। চার শ' ২৯ পৃষ্ঠার ওই রায়ের কপি ঘেঁটে এ তথ্য জানা গেছে। এদিকে বহুল আলোচিত এই হত্যা মামলার রায়ের সার্টিফাইড কপি সর্বপ্রথম হাতে পেয়েছেন এ মামলার অন্যতম আসামি ও ফাঁসির দন্ডে দন্ডিত নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির বাবা মোঃ মোজাম্মেল হোসেন কিশোর।
রায়ের অবজারভেশনে উল্লেখ করা হয়েছে, আসামি রিফাত ফরাজী, রাব্বি আকন, সিফাত, টিকটক হৃদয়, মোঃ হাসান এবং মিন্নি পূর্বপরিকল্পিতভাবে ভিকটিম রিফাত শরীফকে হত্যার অভিন্ন উদ্দেশ্য পূরণের জন্য রিফাত শরীফকে খুন করে পেনাল কোড ৩০২ এবং ৩৪ ধারার অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
তাই ৩০২ ধারায় মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং তৎসহ অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। ৩৪ ধারা মূলত স্বতন্ত্রভাবে শাস্তির বিধান আরোপকারী কোন ধারা নয়। এ ধারা অপরাধের মূল শাস্তি আরোপকারী অন্যান্য ধারার পরিপূরক।
এতে বলা হয়েছে, কতিপয় ব্যক্তি মিলে তাদের অভিন্ন উদ্দেশ্যে বাস্তবায়নের জন্য কোন কাজ করলে সেই অপরাধের জন্য তাদের প্রত্যেকে, সে একা উক্ত কাজ করলে যেভাবে দায়ি হব, ঠিক তেমনি সবাই একই ভাবে দায়ী হবে। তাই এই আইন অনুসারে এ মামলার ভিকটিম রিফাত শরীফকে খুন করার দায়ে উক্ত আসামীগণ সমানভাবে দায়ী।
রায়ের অবজারভেশনে আরো উল্লেখ করা হয়, এ মামলার আসামি মিন্নি এই ঘটনার পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা এবং তার কারণে হতভাগা রিফাত শরীফ নির্মমভাবে খুন হয়েছেন এবং তার পিতা-মাতা পুত্রহারা হয়েছেন। তাই মিন্নির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে তার পদাঙ্ক অনুসরণে তার বয়সী মেয়েদের বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। তাই এ মামলায় মিন্নির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া বাঞ্ছনীয়।
আদালত আরও বলেন, 'প্রকাশ্য দিবালোকে রামদা দ্বারা নির্মম ভাবে কুপিয়ে এ হত্যাকাণ্ড মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে হার মানিয়েছে। এ নির্মম হত্যাকাণ্ড সংগঠনের অন্যান্য আসামিরা প্রত্যেক যুবক। তথ্যপ্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে যুবসমাজ দেশে-বিদেশের মানুষ তাদের হত্যাকান্ড প্রত্যক্ষ করেছেন। তাই তাদের উপযুক্ত শাস্তি না হলে দেশের যুবসমাজ ভুল পথে অগ্রসর হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া বাঞ্ছনীয়।'
রায়ের কপি পাওয়ার সাথে সাথেই মিন্নির বাবা উচ্চ আদালতে আপিল করার জন্য বরগুনা থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরগুনার আদালতের মিন্নির আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহবুবুল বারী আসলাম। তবে রায় কি উল্লেখ করা হয়েছে সে বিষয়ে তিনি অবগত নন বলে জানান।