লাউড় রাজ্যের দুর্গকে ‘সংরক্ষিত পুরাকীর্তি’ঘোষণা
তাহিরপুর উপজেলার প্রাচীনতম লাউড় রাজ্যের দুর্গকে সরকারিভাবে ‘সংরক্ষিত পুরাকীর্তি’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এতে লাউড়ের গড় ঘিরে হাওরাঞ্চলে প্রত্নতত্ত্ব-পর্যটনের সম্ভাবনা তৈরি হবে। স্থানটি সরকারি তালিকাভুক্ত হয়েছে বলেও জানা গেছে।
২৫ সেপ্টেম্বর সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় তাহিরপুরের লাউড় রাজ্যকে প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষিত ঘোষণা করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর তাহিরপুরের লাউড় রাজ্যের প্রাথমিক খননকাজ শুরু করেছিল। সে সময় প্রত্নতত্ত্ববিদরা জানিয়েছিলেন, তাহিরপুরের লাউড়ের গড়ে অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেছে।
ইতিহাস বলে, প্রাচীনকালে শ্রীহট্ট (সিলেট) কয়েকটি রাজ্যে বিভক্ত ছিল। শ্রীহট্টের (সিলেট) তিন ভাগ তিনজন পৃথক রাজা বা নৃপতি শাসন করতেন। এর মধ্যে গৌড় রাজ্য, লাউড় রাজ্য ও জয়ন্তিয়া রাজ্য নামে তিন রাজ্যের রাজার অধীনস্থ ছিলেন আরও অনেক ক্ষুদ্র ভূমিমালিক। সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও আংশিক ময়মনসিংহ জেলা নিয়ে অবস্থান ছিল লাউড় রাজ্যের। সে সময় লাউড়ের রাজধানী ছিল সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায়।
হলহলিয়া নামের গ্রামে এখনও ওই রাজ্যের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া যায়। কেশব মিশ্র সিংহ নামে একজন এই রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। কৌনজ গোত্র থেকে খ্রিস্টীয় দশম বা একাদশ শতকে তিনি লাউড় গড়ে তুলেন। পরে বিজয় মাণিক্য নামের একজন রাজা এখানে রাজত্ব করতেন। কারও কারও মতে, বঙ্গবিজয়ের পর রাঢ় অঞ্চল মুসলমানদের হাতে চলে যাওয়ায় সেখানকার বিতাড়িত ও পরাজিত সম্ভ্রান্তরা জীবন বাঁচানোর জন্য বিভিন্ন স্থানে চলে যান। এদেরই একজন এখানে এসে রাজত্ব গড়ে তোলেন।
লাউড় রাজ্যের রাজধানী লাউড় ছাড়াও জগন্নাথপুর ও বানিয়াচংয়ে আর দুটি উপ-রাজধানী ছিল। এই দুর্গের ধ্বংসাবশেষই লাউড়ের হাউলী, হলহলিয়া বা হাবেলী নামে স্থানীয়ভাবে পরিচিত। এখন এই দুর্গের ভগ্নাবশেষ দেখা যায়। প্রতিটি প্রকোষ্ঠের মনোরম কারুকার্য দেখলেই বুঝা যায়, এক সময় এখানে কোনো সম্ভ্রান্ত রাজা থাকতেন।
বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক এ প্রসঙ্গে জানান, “খনন ও গবেষণা চলবে। উন্মুক্ত জাদুঘর করার জন্য যা যা প্রয়োজন সবই করা হবে।”
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ বললেন, “আমরা আশা করি দ্রুত সরকারিভাবে পুনঃখননের কাজ শুরু হবে। এর আশপাশে বেশ কিছু খাস জমিও রয়েছে, যেগুলো পর্যটনের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণে ব্যয় করা হবে। লাউড়ের গড়ের পুরাকীর্তি হাওরাঞ্চলের পর্যটনের নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে বলে আশা করছি।”