লোকসানের শঙ্কায় আম চাষিরা
আমের রাজধানী খ্যাত রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ অঞ্চলে চলতি বছর আমের মুকুল কম এসেছে। কোনো এলাকায় আশানুরুপ মুকুল এলেও কোনো অঞ্চলের চিত্র আবার একেবারেই ভিন্ন। আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের মতে, মুকুল কম এলে আমের উৎপাদন কম হয়। ফলে এ বছর লোকসানের শঙ্কা রয়েছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বছর শীতের স্থায়ীত্ব বেশি থাকায় গাছে মুকুল আসতে দেরি হচ্ছে। তবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানি এলাকার মাহতাব উদ্দিন বাদশার এক হাজার আম গাছ রয়েছে। তিনি নিজের বাগানে উৎপাদনের পাশাপাশি অন্যের বাগান লিজ নিয়েছেন। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এই বছর তুলনামূলকভাবে গাছে মুকুল কম এসেছে। প্রাকৃতিক কারণেই এমনটা হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
তবে উল্টো চিত্র পবার হরিয়ানের সমসাদিপুর গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের বাগানে। ১২০০ গাছ নিয়ে উৎপাদনে যাওয়া এই ব্যক্তির বাগানগুলোতে আশানুরুপ মুকুল এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ''প্রত্যেক বাগানে মুকুল ভালোই এসেছে। তবে সম্পূর্ণ মুকুল আসতে আরও সপ্তাহখানেক সময় লাগবে।''
শীত বেশি থাকলে মুকুল আসতে চায় না জানিয়ে তিনি আরও বলেন, গত কয়েকদিন ধরে ভালই গরম পড়েছে। এখন মুকুল তাড়াতাড়ি ফুটবে। এরই মধ্যে প্রথম ধাপে কীটনাশক ছিটানো হয়েছে। সম্পূর্ণ মুকুল এলে দ্বিতীয় ধাপে আবারও কীটনাশক ছিটানো হবে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, অনেক গাছে ভালো মুকুল এসেছে; আবার অনেক গাছে কোনো মুকুলই আসেনি। ফল গবেষণা ইনস্টিটিউটের ভেতরেও দেখা যায় এমন চিত্র। পাশেই বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণাগার রাজশাহীর আমবাগানের চিত্রও অভিন্ন।
রাজশাহীর সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদন হয় পুঠিয়া, দুর্গাপুর, চারঘাট, বাঘা ও বাগমারা উপজেলায়। এসব এলাকার বাগান মালিক ও চাষিরা জানান, এ বছর তুলনামূলকভাবে গত বছরের চেয়ে গাছে মুকুল কম এসেছে।
পুঠিয়ার বানেশ্বরের আম চাষি মোখলেসুর রহমান বলেন, আমার বাগানে কেবল মুকুল আসতে শুরু করেছে। সম্পূর্ণ মুকুল আসতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার মুকুল কম এসেছে। গাছে মুকুল কম এলে আমের গুটিও কম হবে। ফলে লোকসানের শঙ্কা রয়েছে।
চারঘাটের আম চাষি তৌফিক এলাহী বলেন, গাছে প্রচুর মুকুল আসলে কৃষকদের জন্য লাভ। কারণ মুকুল ঝরে যাওয়ার পর যা থাকে তাতে আমের গুটি ভালো আসে। এ বছর মুকুল এমনিতেই কম। ঝরে যাওয়ার পর কতখানি দাঁড়াবে কে জানে?
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজশাহী অঞ্চল সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলতি বছর মোট ৭২ হাজার ৯০৯ হেক্টর জমিতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে আট লাখ ২৮ হাজার ৬৩৭ টন আম। এর মধ্যে রাজশাহী জেলায় ১৭ হাজার ৫৭৩ হেক্টর জমিতে আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ ৯ হাজার ৩৭৮ টন, নওগাঁয় ১৮ হাজার ৬৬৬ হেক্টর জমিতে ধরা হয়েছে তিন লাখ ১৭ হাজার ৮৬৫ টন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩১ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে ধরা হয়েছে দুই লাখ ৩৯ হাজার টন এবং নাটোরে চার হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬২ হাজার ৩৯৪ টন।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামসুল হক জানান, এ বছর রাজশাহীতে শীত দীর্ঘ সময় ধরে ছিলো। তাই গাছে মুকুল আসতে দেরি হয়েছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় আম গাছে ভালো মুকুল আসতে শুরু করেছে। বলা যায়, এখন পর্যন্ত গাছে ৬০ শতাংশ মুকুল এসেছে। আগামি এক সপ্তাহের মধ্যে ৯০ শতাংশ মুকুল চলে আসবে। আর প্রতিবছরই গাছে ১০ শতাংশ মুকুল আসে না বললেই চলে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজশাহী অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ খয়ের উদ্দিন মোল্লা জানান, রাজশাহী অঞ্চলের রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে এ বছর আম গাছে গত বছরের চেয়ে মুকুল কম এসেছে। তবে গাছে সম্পূর্ণ মুকুল আসতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে।
সম্পূর্ণ মুকুল আসার পর যখন গুটি বের হবে তখনই বোঝা যাবে এ বছর আমের উৎপাদন বেশি না কম হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, অনেক সময় গাছে প্রচুর মুকুল এলেও দেখা যায় বেশির ভাগ ঝরে যায়। তখন উৎপাদনও কম হয়। তার চেয়ে গাছে কম মুকুল এলেও যদি মুকুল ফুটে গুটি বের হয় এবং তা টিকে থাকে তাহলে উৎপাদন ভালো হবে।