সরকারকে সামর্থ্যের চেয়ে বেশি প্রকল্প হাতে না নেওয়ার আহবান পরিকল্পনাবিদদের
বেশিরভাগ উন্নয়ন প্রকল্পই যথাসময়ে, নির্ধারিত টাকায় সমাপ্ত করতে পারছে না সরকার বরং অধিকাংশ প্রকল্পের ক্ষেত্রে সময় ও ব্যয় বাড়ছে, কাজের মান খারাপ হচ্ছে, জনদুর্ভোগ বাড়ছে। এর জন্য সরকারকে সামর্থ্যের চেয়ে বেশি প্রকল্প হাতে না নেওয়ার আহবান জানিয়েছেন নগর পরিকল্পনাবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)।
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বাংলামোটরে প্ল্যানার্স টাওয়ারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন সংগঠনটির নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে উন্নয়ন প্রকল্পের সঠিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে বিভিন্ন মন্তব্য তুলে ধরে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, 'সময় বাড়ানোর ফলে দশকজুড়ে উন্নয়ন প্রকল্প একই চক্রে ঘুরপাক খাওয়ায় সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে এই গোলকধাঁধাকে সরকার সম্প্রতি স্বীকার করে নিয়েছে যা ইতিবাচক।
সরকার এখন বলছে, প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতা ও ব্যয় বৃদ্ধি সাধারণ প্রবণতায় পরিণত হয়েছে। নির্ধারিত সময় ও ব্যয়সীমার মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের দৃষ্টান্ত এখন নেই বললেই চলে'।
২০১৬ সালের জুন থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নকালে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে মোট ৯৬টি বাস্তবায়িত প্রকল্পের মধ্যে ৪৮টির সময় এক বা একাধিকবার বাড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর মধ্যে ২৮টি প্রকল্পের সময়সীমা নিয়ে প্রতিবেদনে কিছু বলা হয়নি। মাত্র ১৬টি প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়েছে। কয়েকটি ব্যতিক্রম বাদে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যয়ও বেড়েছে।
তিনি তার বক্তব্যে আরও উল্লেখ করেন, মশক নিধনে কীটনাশক যতটা কার্যকর, এ ক্ষেত্রে তার চেয়ে বেশি কার্যকর খালগুলো দখলমুক্ত করা ও শহরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা।
মশক নিধন কার্যক্রম অধিক পরিমাণে কীটনাশকনির্ভর হয়ে পড়ায় মশার যন্ত্রণা থেকে নগরবাসীর মুক্তি মিলছে না। অথচ বর্তমানে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মশা নিধনের বরাদ্দ ব্যয়ের ৯০ ভাগই করে থাকে কীটনাশক কিনতে।
গত পাঁচ বছরে দুই সিটি করপোরেশন মশা নিধনের ক্ষেত্রে বরাদ্দ দেয়া হয় ৩২১ কোটি ৬০ লাখ টাকা যার মধ্যে ২৪০ কোটি ৬১ লাখ টাকাই মশা নিধনে ওষুধ কিনতে ব্যয় করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি খালগুলো পুনরুদ্ধার অভিযানে পরিপূর্ণভাবে সফলতা পেতে সর্বোচ্চ রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন উল্লেখ করে বলেন, 'খাল দখল ও দূষণের সাথে যারা জড়িত তারা সকলেই প্রভাবশালী এবং রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী। এই কারণে শুধুমাত্র খালের মালিকানা বদল আমাদের ঢাকা শহরের খালগুলোকে পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হবে না। রাষ্ট্র এবং সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে অনমনীয় দৃঢ়তা থাকলে খালগুলোকে তার পূর্বের রূপে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।'
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, 'খাল দখল করে নির্মাণ করা ভবনগুলো অনুমোদিত নকশায় বিল্ডিং কোড মেনে করা হয়েছে এমনটাই দাবি ভবন মালিকদের। তাহলে এই অনুমোদন কে দিলো? একটি সুন্দর নগরের স্বার্থেই অতিদ্রুত ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান- ড্যাপ'র অনুমোদন দেয়া জরুরি'।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা শহরে বিদ্যমান অধিকাংশ সরকারী খেলার মাঠগুলো রক্ষণাবেক্ষণের নামে কতিপয় ক্লাব কিংবা প্রভাবশালী মহল দীর্ঘদিন ধরে দখল করে আছে উল্লেখ করে এগুলো সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবিও জানান তারা।
তারা আরও বলেন, জনসাধারণের মাঠ রক্ষণাবেক্ষণ করবার নামে দখল কিংবা ইজারা নেয়া- পুরোপুরি অবৈধ এবং শিশু-কিশোরদের প্রবেশে বাধা দেয়া আইনের লংঘন। খেলার মাঠগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কমিউনিটি ভিত্তিক কমিটি ও প্রয়োজনীয় নীতিমালা করে খেলার মাঠে সকলের প্রবেশ নিশ্চিতের দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের।