সরবরাহ না করায় চালকলগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে সরকার
সরকারের খাদ্য সংগ্রহ অভিযানে অংশগ্রহণ না করায় কিংবা অংশগ্রহণ করেও চাল না সরবরাহ না করায় দিনাজপুরে ৯১৪ টি চালকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে সরকার। একই রকম সিদ্ধান্ত এসছে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চালকলগুলোর বিরুদ্ধেও। এর মধ্যে যশোরের ১৯৩ আর কুষ্টিয়ার ২৬১ চালকলকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
দিনাজপুরের কালো তালকিাভুক্ত হওয়া ৯১৪ টি চালকলের মধ্যে রয়েছে চুক্তি না করা ৯৯টি মিল, চুক্তি করে চাল না দেওয়া ৬৭৩টি মিল এবং চুক্তি করে আংশিক চাল দেয়ার ১৪২টি মিল।
দিনাজপুর জেল খাদ্য কার্যালয় থেকে জানা যায়, বোরো মৌসুমে দিনাজপুরে সিদ্ধ চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯১ হাজার ৭২৩ মেট্রিক টন। এর বিপরীতে ক্রয় করা গেছে ৬৬ হাজার ৬৮৪ মে.টন। আর ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩২ হাজার ৭২ মে.টন, যার বিপরীতে ক্রয় হয়েছে ৯ হাজার ১৫৩ মে.টন।
সরকারের দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা পূরন করতে দিনাজপুরের ২ হাজার ১২২ টি চালকলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাদের মধ্যে সাড়া দেয় ২ হাজার ২৩টি চালকল। বাকি ৯৯টি চালকল চুক্তিবদ্ধ হয়নি। এর মধ্যে চুক্তি করার পরও অনেক মিলই চাল দেয়নি, আবার অনেকে দিয়েছে আংশিক। ফলে সরকারের সংগ্রহ অভিযানের লক্ষ্যমাত্রা পুরণ হয়নি ধানের জেলা দিনাজপুরে।
জেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে একটি তালিকা প্রেরণ করা হয়েছে। তালিকায় সরকারকে চাল দেওয়ার চুক্তি না করায় ৯৯টি মিল, চুক্তি করেও চাল না দেওয়ায় ৬৭৩টি মিল ও আংশিক চাল দেওয়া ১৪২টি মিল রয়েছে।
চুক্তি করার পর সম্পূর্ণ চাল সরবরাহ করতে পেরেছে ১২০৮টি চালকল।
খাদ্য মন্ত্রণালয় আরও জানাচ্ছে, যে চালকলগুলো খাদ্য সরবরাহের চুক্তি করেনি তাদের লাইসেন্স বাতিল কিংবা র্দীঘমেয়াদে কালো তালিকাভুক্ত করা, যারা চুক্তি করেও চাল দেয়নি তাদেরকে অপেক্ষাকৃত কম সময়ের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করা এবং যারা চুক্তি করে আংশিক চাল দিয়েছে তাদেরকে স্বল্প সময়ের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হতে পারে। এছাড়া যেসব চালকল সরকারের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে সম্পূর্ণ চাল দিয়েছে তাদেরকে পুরস্কৃত করারও সিদ্ধান্ত হতে পারে।
দিনাজপুর জেলা খাদ্য কর্মকর্তা মো: আশ্রাফুজ্জামান বলেন, আমরা যথাযথ চেষ্টা করেছি মিলারদের কাছ থেকে চাল নেয়ার। রুটিন করে কর্মকর্তারা গিয়েছেন মিলারদের কাছে চাল দেয়ার জন্য। এরপরেও অনেকেই চাল দেয়নি। এখন কেন্দ্র থেকেই তাদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
সরকারের সাথে চুক্তি করার পরও চাল না দেওয়া যশোরের ১৯৩ চালকলকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। যশোর জেলা খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, যশোরে বোরো মৌসুমে ২৭ হাজার তিনশ' ১২ মেট্রিকটন চাল সরবরাহ করবে বলে চুক্তি করেন ৩৬১ জন চালকল মালিক। অথচ ধানের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে সরকারকে তারা চাল দিয়েছে মাত্র ১৫ হাজার একশ' পাঁচ মেট্রিক টন। আর এসব চালকলরে মধ্যে ৮১ জন মিলার একেবারেই কোনো চাল দেননি।
বাজারে ধানের দাম বেশির কথা বলে চালকল মালিকরা সরকারকে চাল না দিয়ে খোলা বাজারে বিক্রি করেছেন বলে খাদ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। গত বছর এসব মিল মালিক কেজিতে সর্বোচ্চ নয় টাকা পর্যন্ত লাভ করেছিলেন।
এ বছর বোরো মৌসুমে যশোরে ১০ লাখ ৩০ হাজার সাতশ' ৬৬ মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হয়েছে। আর চাল উৎপাদন হয়েছে ছয় লাখ ৮০ হাজার তিনশ' ছয় মেট্রিকটন। দাম বৃদ্ধির অজুহাতে ১৯৩ জন চালকল মালিক চুক্তি অনুযায়ী চাল দেননি। এ কারণে ২৭ হাজার তিনশ' ১২ মেট্রিক টনের জায়গায় সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ১৫ হাজার ১০৫ মেট্রিক টন চাল। বোরো মৌসুমে চাল দেওয়ার জন্যে যশোরে ৩৬১ জন চালকল মালিক চুক্তিবদ্ধ হন। তারা ২৭ হাজার তিনশ' ১২ মেট্রিকটন চাল দিবেন বলে চুক্তি করেছিলেন।
কুষ্টিয়াতেও চাল সংগ্রহ অভিযানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। খাদ্য বিভাগের সাথে চুক্তি করেও চাল সরবরাহ না করায় জেলার ২৬১ চালকলকে কালো তালিকাভুক্ত করার পাশাপাশি র জামানত বাজেয়াপ্ত, প্রণোদনা বাতিল ও আগামী দুই মৌসুম চাল সরবরাহ থেকে চুক্তির বাইরে রাখার মত পদক্ষেপ গ্রহণ করছে খাদ্য বিভাগ।
জেলায় চলতি বোরো মৌসুমে প্রতি কেজি ৩৬ টাকা দরে ৩৪ হাজার মেট্রিক টন মোটা চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সেখানে সময় বাড়িয়েও সংগ্রহ হয়েছে ২২ হাজার মেট্রিক টনের কিছু বেশি।
জেলা খাদ্য অফিস সুত্র জানিয়েছে, লক্ষ্যমাত্রার ৩৪ হাজার মেট্রিক টনের বিপরিতে সংগ্রহ হয়েছে ২২ হাজার মেট্রিক টনের সামান্য কিছু বেশি।
কুষ্টিয়া জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন জানান, এ বছর দেশে প্রচুর ধান উৎপাদনের পরেও ধানের বাজার বেড়ে যায়। আর বোরো মৌসুমে মোটা ধানের উৎপাদন হয় একেবারেই কম। এ কারণে সরকার নির্ধারিত দরের তুলনায় চালের উৎপাদন খরচ বেশি পড়ে গেছে। এ কারণে মিল মালিকরা কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা লোকসান দিয়েও চাল সরবরাহ করেছে। তবে যারা চুক্তি করে চাল দিতে ব্যার্থ হয়েছে তাদের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার আগে ভাবলে ভাল হয়। ছোট মিলাররা এমনিতেই দেউলিয়া হয়ে গেছে, তার ওপর কড়া পদক্ষেপ নিলে তারা আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না।
প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন: দিনাজপুর প্রতিনিধি বিপুল সরকার সানি এবং কুষ্টিয়া ও যশোর প্রতিনিধি।