স্কুল কলেজ বন্ধ, বই ব্যবসায়ীদের দুর্দিন
বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয় চলতি বছরের ৮ মার্চ। এরপর ১৬ মার্চ সরকার স্কুল, কলেজসহ সব ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার বন্ধ ঘোষণা করে। ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ হয়ে যায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বই বিক্রেতারা। বেচাবিক্রি নেই সাতক্ষীরা জেলার ২৮০টি বইয়ের দোকানে। নিয়োগ গাইড, শিশুদের আদর্শলিপি ছাড়া অন্য কোনো বই কিনছেন না ক্রেতারা। বেচাবিক্রি না থাকায় কর্মচারী, দোকানভাড়াসহ আনুসাঙ্গিক খরচ তুলতেও হিমসিম খাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
সাতক্ষীরা শহরের বইয়ের বড় দোকান 'সাতক্ষীরা বুক হাউজ'। করোনা প্রাদুর্ভাবের আগে দোকানটিতে প্রতিদিন লাখ টাকার বই বিক্রি হত। তবে এখন দোকানটিতে মাত্র পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকার বই বিক্রি হচ্ছে। এই বিক্রি দিয়ে দোকান মালিক প্রতিদিনের খরচই তুলতে পারছেন না।
সাতক্ষীরা বুক হাউজ বইয়ের দোকানের ম্যানেজার প্রানেশ মন্ডল জানান, করোনায় আমাদের অবস্থা খুবই করুন। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় বেচাবিক্রি নেই। মাঝে মধ্যে দুই একটি চাকরির গাইড, কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স ও শিশুদের আদর্শলিপি বিক্রি হচ্ছে।
''করোনার আগে দিনে যেখানে লাখ টাকার উপরে বিক্রি হত এখন সেখানে বিক্রি হচ্ছে মাত্র পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকার। দোকানে চারজন কর্মচারী- তাদের মাসিক বেতন ৪০ হাজার টাকা, ঘরভাড়া ১৫ হাজার টাকা, এ ছাড়া বিদ্যুৎ বিলসহ মাসে আনুসাঙ্গিক খরচ ৮০ হাজার টাকার মতো। এখন দোকানের খরচই উঠছে না'', যোগ করেন তিনি।
শহরে বইয়ের আরেকটি বড় দোকান 'বই মেলা'। দোকানের সত্ত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর হোসেন দাবি করেন, করোনায় সব থেকে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ বইয়ের দোকানীরা।
''গত পাঁচ মাসে আমার ১০ লাখ টাকার ওপরে লোকসান হয়েছে। দোকানে বই বিক্রি নেই বললেই চলে। যেটুকু বিক্রি হচ্ছে সেটি উল্লেখযোগ্য কিছু নয়, খুব সামান্য।''
পপি লাইব্রেরির বই বিক্রেতা মামুন হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীরা সাধারণত বিভিন্ন বইয়ের পাশাপাশি সৃজনশীল বই কিনে থাকে। যেহেতু স্কুল কলেজ বন্ধ তাই বই বিক্রি নেই। কোচিং সেন্টার, টিউশুনও বন্ধ থাকায় শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনের তাগিদে বিভিন্ন ধরণের বই কেনার পরামর্শও দিতে পারছে না।
''যেহেতু পড়াশুনার কোনো চাপ নেই তাই অভিভাবকরাও বই কেনার প্রতি আগ্রহ হারিয়েছেন। বই বিক্রির অবস্থা খুব শোচনীয়'', যোগ করেন তিনি।
সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর এলাকার এইচএসসি পরীক্ষার্থী বৈশাখী আক্তার। এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করবেন বলে রেজিষ্ট্রেশন করে পরীক্ষা শুরুর অপেক্ষা আছেন।
''করোনাকালে পড়াশুনা ঠিকমত হয়নি। পরীক্ষা কবে হবে বা আদৌ হবে কি না এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকায় এমনটি হয়েছে। ফলে কয়েকটি বইয়ের প্রয়োজন থাকলেও এখনও কেনা হয়নি'', বললেন বৈশাখী আক্তার।
শহরের পপুলার লাইব্রেরি থেকে একটি নিয়োগ বই কিনেছেন সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ক্যামেস্ট্রি বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান।
তিনি বলেন, করোনাকালে কলেজ বন্ধ। লেখাপড়া করা লাগছে না। তাই চাকরির একটি নিয়োগ বই কিনেছি। এখন চাকরির নিয়োগও বন্ধ তাই হতাশায় দিন পার হচ্ছে।
বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সাতক্ষীরা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কাইয়ুম সরকার। তিনি জানান, করোনাকালে নানাভাবে ক্ষতির সম্মূখীন হয়েছেন বই বিক্রেতারা।
''অনেক দোকানীর ব্যাংক ঋণ রয়েছে। কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছে না দোকান মালিকরা। তাছাড়া বছরে সমিতির সদস্য নবায়ন ফি দুই হাজার টাকা দিতে পারছে না তারা। সব মিলিয়ে করোনাকালে বই ব্যবসায়ীরা দিশেহারা'', যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, করোনাকালে গত পাঁচ মাসে জেলার বই ব্যবসায়ীদের ১০ কোটি টাকার বেশী লোকসান হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও এই ক্ষতি পুষিতে উঠতে অনেক সময় লাগবে।
সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেন, স্কুল-কলেজ খোলার বিষয়ে এখনও অফিশিয়ালি কোনো সিদ্ধান্ত আমরা পাইনি। বর্তমানে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে। অনলাইনে ইলেকট্রনিক ডিভাইস আর খাতা, কলম ছাড়া বাইরের কিছু প্রয়োজন হয় না।