নানান অস্থিরতায় দেশে বইয়ের বিক্রি ৫০ শতাংশ কমেছে
দেশজুড়ে ছাত্র-সমাজের নেতৃত্বাধীন সাম্প্রতিক বিক্ষোভ-আন্দোলন ও সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে গত দুই মাসে বইয়ের বিক্রি প্রায় ৫০ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি।
একইসঙ্গে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি, ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা এবং সাম্প্রতিক বন্যাসহ আরও বেশ কয়েকটি কারণে বইয়ের বিক্রি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে বিক্রিতে এমন ধসের পরও আশা দেখছেন প্রকাশকরা। তারা বলছেন, দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলে আগামী তিন মাসের মধ্যে এ অবস্থা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।
প্রতিভা প্রকাশের প্রকাশক মঈন মুরসালিন টিবিএসকে বলেন, "কোভিডের সময় থেকেই বইয়ের বিক্রি অর্ধেকে নেমে আসে। সে ধাক্কা সামলে না উঠতেই শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, যার প্রভাবে কাগজের দাম বেড়ে যায়।"
তিনি বলেন, "জুলাই থেকে আন্দোলনের পর নতুন সরকার গঠন, বন্যা, সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এখন আরও করুণ।"
নিজের বিক্রির অবস্থা তুলে ধরে মুরসালিন বলেন, "অনলাইন এবং বইমেলা বাদে প্রতি মাসে আমার আগে অন্তত ৩০ হাজার টাকা বিক্রি থাকত, গত তিন মাসে এটা ১০ হাজার টাকায় নেমে এসেছে।"
"অনলাইনে আগে যেখানে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা প্রতিমাসে সেল থাকত, এখন তা নেমে এসেছে ৫ হাজারে," যোগ করেন তিনি ।
যেসব অনলাইন প্ল্যাটফর্মে তারা বই বিক্রি করেন, তারমধ্যে ৮০ ভাগই রকমারি ডট কমের দখলে বলে জানান তিনি।
প্রকাশকরা বলছেন, চলমান উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে মধ্যম-আয়ের মানুষেরাও তাদের দৈনন্দিনের খরচ মেটাতে হিসেব করে চলছেন, সেখানে বই কেনা তো বিলাসিতার পর্যায়ে পড়ে।
একইসঙ্গে মূল্যস্ফীতিতে বইয়ের দামও বেড়েছে। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় আইটেম না হওয়ায় কমে গেছে বইয়ের চাহিদা।
অনিন্দ্য প্রকাশের স্বত্বাধিকারী আফজাল হোসেন বলেন, "মানুষের কাছে পয়সা নাই। আমার প্রায় ৬০ শতাংশ বই বিক্রি কমে গেছে গত চার মাস যাবত।"
সৃজনশীল বইয়ের বাজার খারাপ জানিয়ে তিনি বলেন, "আমি গল্প-উপন্যাসের মতো সৃজনশীল বই বিক্রি করে থাকি। তবে এসব বইয়ের চাহিদা কমে গেছে। সে জায়গায় ইসলামী বই বেশি বিক্রি হচ্ছে।"
বই বিক্রির বাজার বর্তমানে খুবই খারাপ জানিয়ে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল পাল বলেন, "দেশে এক ধরনের এলোমেলো অবস্থা বিরাজ করছে। ফলে স্কুল-কলেজও বন্ধ। তাই বিক্রি একদমই কমে গেছে। বলা যায়, তিন-চার মাস আগের তুলনায় গড়ে এই খাতে ৫০ ভাগ বিক্রি কমেছে।"
দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে জানিয়ে তিনি বলেন, "বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ-খাওয়াতে সময় লাগবে। আশা করা যায়, দুই-তিনমাসের মধ্যে পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটবে।"
এদিকে নতুন বছরের পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর কাজ আপাতত স্থগিত রয়েছে বলে সমিতি সূত্রে জানা গেছে। পাঠ্যক্রম পরিবর্তন হবে— এমন খবরের ভিত্তিতে আপাতত ছাপা হচ্ছে না পাঠ্যপুস্তক।
এ বিষয়ে শ্যামল পাল বলেন, "কারিকুলাম পরিবর্তন হলে নতুন বইয়ের মাধ্যমে বেচাকেনা বাড়বে। তবে এবার কারিকুলামগত কারণে ছাপতে দেরি হবে।"
সমিতির আওতায় প্রায় ২৬,০০০ সদস্য এবং ১,৫০,০০০ এরও বেশি কর্মী রয়েছেন। এর মধ্যে ৩,০০০ সদস্য ঢাকায়। তবে শ্যামল পালের মতে, পুরো খাতের সঙ্গে জড়িত লোকের সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ।
সমিতির তথ্যমতে, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে প্রকাশনা খাতে ৩,০০০ কোটি টাকারও বেশি লোকসান হয়েছে। এ খাতে বছরে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়।