হাট ভরা গরুতে, রাজধানীতে লাভের আশায় বসে রয়েছেন ব্যাপারীরা
হাটে প্রচুর গরু থাকার পরও লাভের আশায় এখনও তেমন বিক্রি করছেন না ব্যপারিরা। তারা বলছেন এ বছর বেশি দামে গরু কিনতে হলেও ক্রেতারা গত বছরের চেয়েও কম দাম বলছেন। দাম শুনে ক্রেতারা চলে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা।
অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, বিক্রেতারা চড়া দাম হাঁকিয়ে বসে রয়েছেন। তাই সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
হারুনুর রশিদ নাটোরের বড়াইগ্রাম থেকে ৪০টি গরু এনেছেন আফতাব নগর হাটে। ৩ দিন হয় তিনি এসেছেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত একটি গরুও বিক্রি করেননি।
হারুনুর রশিদ বলেন, "কেনা দামও বলছেন না ক্রেতারা। কীভাবে বিক্রি করবো। একটু লাভের আশার বসে রয়েছি। আগামীকাল দেখি কী হয়।"
আশা নিয়ে তিনি বলেন, "বেচা শুরু হলে শেষ হয়ে যাবে।"
রামপুরার মেরাদিয়া বাজারসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা ও বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং (আফতাবনগর) অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে এ হাটগুলো গরুতে ভরে গেছে।
মাইকে বার বার ব্যাপারিদের গরু চেপে বাঁধার ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে। হাটে আরও গরু আসছে।
মেরুল বাড্ডা থেকে মো. নাজমুল আফতাবনগর হাটে এসেছেন। দুপুর থেকে ঘুরছেন হাটে। এরপর তিনি দুটি লাল রঙের ষাড় কিনেছেন দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে।
নাজমুল বলেন, দাম একটু বেশি মনে হয়েছে। কোরবানি দেয়ার জন্য তাই এটা নিয়ে ভাবছি না।
পাবনা থেকে মো.মনসুর দুই দিন আগে ৩৪ টি গরু এনেছেন আফতাবনগর হাটে। একটি গরু বিক্রি হয়েছে।
মনছুর বলেন, "যে গরু কেনা এক লাখ ৭০ হাজার টাকায়, সেই গরুর দাম বলছে এক লাখ ৫০ হাজার। আমরা ১১ জন লোক এসেছি। একটু লাভে বিক্রি না করলে কীভাবে চলবে।"
মেরাদিয়া হাটে সকাল থেকেই ক্রেতার উপস্থিতি ছিল। তবে বিকেলে বৃষ্টির সময় কিছুটা কম ক্রেতা ছিল। রাস্তায় হাট বসায় গরুর গোবরের সঙ্গে ধানের খড় মিসে রাস্তা কাঁদা হয়ে গিয়েছিল। বিক্রেতারা সেটা পরিস্কারে ব্যস্ত ছিলেন। তারা বলছেন বৃষ্টি না হলে আরও ক্রেতা আসতো।
জামালপুর থেকে হাটে গরু নিয়ে এসেছেন জহুরুল । তিনি বলেন, "বৃষ্টি না হলে ভাল হতো। হাটে লোক সমাগম বাড়তো। এখন বাকি সময় বৃষ্টি না হলেই হয়।"
রাজবাড়ি থেকে মনজুরুর ইসলাম ১০০ টি গরু এনেছেন । তিন দিন হয়েছে তিনি হাটে এসেছেন ।
মনজুরুল বলেন, "ক্রেতারা কেনা দামও বলছে না তাই বিক্রি করি নি এখনও। প্রতি গরুতে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা কম বলছে।"
রামপুরা থেকে রাসেল এসেছেন মেরাদিয়া হাটে গরু কিনতে। তিনি বলেন, "এত দাম হলে মানুষ গরু কিনবে কীভাবে। এমনিতেই তো করোনায় অর্থনৈতিক অবস্থা কাহিল।"
রাসেল বলেন, "যে গরু গত বছর ৮৫ থেকে ৯০ হাজার ছিল, সেই গরু এখন বলছে এক লাখ টাকা।"
মগবাজার থেকে গরু কিনতে এসেছেন জুয়েল । তিনি বলেন, তার গরু কেনার বাজেট ৮৫ হাজার টাকা। কিন্তু যে গরু পছন্দ হচ্ছে তার দাম এক রাখ ৪০ হাজারের নিচে না। জুয়েল বলেন, একটু বড় সেটার দামই লাখ ছাড়িয়ে। এমন হলে মধ্যবিত্তরা কীভাবে গরু কিনবে।
হাট ঘুরে দেখা গেছে যে গরুর দাম দেড় লাখের উপরে সে গরুগুলো কম বিক্রি হচ্ছে। তবে হাটে ছোট গরু বিক্রি ভালোই হয়েছে।
রামপুরা থেকে বশির ৬৫ হাজার টাকা দিয়ে মেরাদিয়া হাট থেকে একটি গরু কিনেছেন। তিনি বলেন, "দাম গতবারের মতোই মনে হয়েছে। আসলে ছোট গরুর দাম ৬০ থেকে ৬৫ হাজারের মধ্যেই থাকে।"
আফতাবনগর হাটে কয়েক লাখ গরু এসেছে। এখানে রাস্তা প্রসস্ত ও রাস্তায় পাশে বালু থাকায় বিকালে একটু বৃষ্টিতে বরং ভালই হয়েছে। ব্যাপারিরা বলাছেন, "ভাল হয়েছে। একটু ঠান্ডা হয়ে ধুলো কমেছে।"
আফতাব নগর হাটে রেজাউল কমির শেরপুর থেকে ১৩ টি গরু এনেছেন। তিনটি গরু বিক্রি করেছেন যথাক্রমে ৬০ হাজার , ৭০ হাজার ও এক লাখ টাকা মূল্যে।
তিনি বলেন, "গত বছরের চেয়ে এ বছর দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করতে খরচ বেশি হয়েছে। তাই কোরবানির হাটে পশুগুলোর দাম একটু বেশি রয়েছে। কিন্তু আমরা যদি গরুর দাম এক লাখ ২৮ হাজার চাই ক্রেতারা তার দাম বলেন এক লাখ। আর ৯০ হাজার টাকা কেনা গরুর দাম ক্রেতারাও বলেন ৯০ হাজার। ক্রেতারা দাম শুনে চলে যান। দুশ্চিন্তায় পড়েছি। কাল যদি বিক্রি করতে না পারি কী হবে।"
সন্ধ্যার পর আফতাবনগর গরুর হাটে ক্রেতার আনাগোনা বেড়েছে। তারা ঘুরে ঘুরে দরদামে ব্যস্ত ছিল। কেউ কেউ কিনেছেন তাদের পছন্দের গরু।
গরু ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের আগের দিন সবচেয়ে বেশি গরু বিক্রি হবে। তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা এটাই বলে তাই আশায় রয়েছেন যে গরু আছে সেটা বিক্রি হয়ে যাবে।