হিলিতে লকডাউনে অভুক্ত কুকুরদের খাবার দিয়ে যাচ্ছেন এক ট্রাক শ্রমিক
সারা বিশ্ব করোনাভাইরাস মহামারির থাবায় স্থবির হয়ে পড়েছে, এ থেকে বাদ পড়েনি বাংলাদেশও। চলমান ১৪দিনের কঠোর লকডাউনের ৯ম দিন চলছে দিনাজপুরের হিলিতে। লকডাউনের কারণে দু-একটি খোলা থাকলেও বন্ধ রয়েছে বেশিরভাগ হোটেল রেস্তোরাঁ। এতে করে চরম খাবার সংকটে পড়েছে সড়কে অবস্থান করা কুকুর -বিড়ালগুলো, ক্ষুধার জ্বালায় ছুটাছুটি করছে প্রাণিগুলো। এমন অবস্থায় তাদের ক্ষুধা নিবারণে খাবার নিয়ে এগিয়ে এসেছেন আজাদ আলী নামের স্থানীয় এক ট্রাক শ্রমিক।
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় করে হিলি স্থলবন্দরের চারমাথা মোড়ে অবস্থান করা পথকুকুরদের মাঝে আজাদ আলী নিয়মিত খাবার বিতরন করে আসছেন। লকডাউনের প্রথম থেকেই তাকে এই প্রাণিদের খাবার দিতে দেখা গেছে। এদিকে খাবার হাতে আজাদকে দেখামাত্রই সড়কে অবস্থান করা কুকুরগুলো তার কাছে গিয়ে হাজির হচ্ছে, আশেপাশে ঘুরঘুর করছে। আর আজাদ আলী তাদেরকে খাবার দিয়ে নিজে বসে থেকে সেই খাবার খাওয়া দেখছেন।
হিলি স্থলবন্দরের চারমাথা মোড়ের বাসিন্দা ফিরোজ হোসেন ও ইদ্রিস আলী বলেন, 'আজাদ একজন পশুপ্রেমিকের পরিচয় দিয়েছেন। করোনার কারনে যখন হোটেল রেস্তোরাঁ বন্ধ তখন এসবের ওপর নির্ভরশীল কুকুরগুলো খাবার না পেয়ে ছুটাছুটি করছে। ঠিক সেই মুহুর্তে ক্ষুধার্ত এসব কুকুরদের পাশে খাবার নিয়ে দাড়িয়েছেন তিনি, সব সময় তিনি এসব কুকুরগুলোকে খাইয়ে থাকেন,'
'যেখানে মানুষ মানুষকে দেখতে পারেনা সেখানে তিনি কুকুরদের খাবার দিয়ে যাচ্ছেন যা সত্যিই প্রশংসনীয়।আর নিয়মিত কুকুরগুলোকে খাওয়ানোর ফলে কুকুরগুলো আজাদ ভাইকে ঠিক মতো চিনে রেখেছে।তাকে দেখলেই তার কাছে ছুটে চলে যায়, অন্য কারও কাছে তারা যায় না। সে একজন পশু প্রেমিক, তার জন্যই কুকুরদের প্রতি তার অনেক ভালোবাসা। আমরা প্রায় দেখি তাকে বিভিন্ন সময় কুকুর বিড়ালসহ অন্যান্য প্রাণিদের খাবার খাওয়াতে।'
পশুপ্রেমিক আজাদ আলী বলেন, 'আমি একজন ট্রাক বন্দোবস্তকারী অর্থাৎ ট্রাক শ্রমিক। আমি জানি ক্ষুধার কী কষ্ট। তাই আমি অনেক আগে থেকেই সড়কে থাকা বিভিন্ন পশুদের খাওয়াতাম। তাদের প্রতি আমার একধরনের ভালোবাসা কাজ করে। করোনার কারণে সারাদেশের ন্যায় হিলিতে লকডাউন চলছে। বেশিরভাগ হোটেল রেস্তোরাঁ বন্ধ। এরা যেসব হোটেলের ফেলে দেওয়া খাবার খেয়ে বেঁচে থাকতো এখন তো সেই হোটেল বন্ধ তাই খাবার পাবে কোথায়?'
'তাই সড়কে থাকা এসব কুকুরগুলো চরম খাদ্য কষ্টে ভুগছিলো দেখে তাদের জন্য আমার সাধ্যমত ভাত,মুড়ি, বিস্কুট যাই পাই তাই নিয়ে এইসব অভুক্ত কুকুরদের খাওয়াই।পৃথিবীতে যেমন মানুষের দরকার আছে তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এই সব পশুদের প্রয়োজন রয়েছে। তাই অবলা এসব প্রাণিদের প্রতি সবাই যদি একটু দয়াশীল হই, তাদেরকে যতটুকু পারি খাবার দেই তাহলে তারাও বাঁচতে পারে।'