ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে মিছিলের ডাক, রাজধানী ইসলামাবাদে লকডাউন
পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে জেলে বন্দী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে বিক্ষোভ ও মিছিল ঠেকাতে কঠোর নিরাপত্তা লকডাউন (অবরোধ) জারি করা হয়েছে।
"নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো"তে মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবা স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ এবং ইসলামাবাদে প্রবেশের মহাসড়কগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) আয়োজিত দেশব্যাপী 'ফাইনাল কল' প্রতিবাদের অংশ হিসেবে ইসলামাবাদ অভিমুখে ইমরানের সমর্থকদের মিছিল ঠেকাতে পাকিস্তানের রাজধানীতে কড়া নিরাপত্তা জারি করা হয়েছে।
ইসলামাবাদের বেশিরভাগ প্রধান সড়ক শিপিং কনটেইনার দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি, পুলিশের বিশাল বাহিনী এবং আধাসামরিক সদস্যদের দাঙ্গা প্রতিরোধী সরঞ্জামসহ মোতায়েন করা হয়েছে, যাতে মিছিল পার্লামেন্ট পর্যন্ত পৌঁছাতে না পারে।
ইসলামাবাদ পুলিশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আইনি বিধানের আওতায় সব ধরনের সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
পিটিআই-এর দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে– ইমরান খানসহ দলীয় সব নেতার মুক্তি এবং চলতি বছরের বিতর্কিত নির্বাচনের পর গঠিত প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সরকারের পদত্যাগ।
শনিবার একটি ভিডিও বার্তায় পিটিআই নেতা এবং খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আলী আমিন গন্ডাপুর বলেন, "আমাদের সব দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ইমরান খান এখানে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।"
আলী আমিন ইসলামাবাদে সবচেয়ে বড় মিছিল নেতৃত্ব দেবেন এবং তিনি জনগণকে শহরের রেড জোনের প্রবেশদ্বারে ["ডি চৌকো" নামে পরিচিত] জমায়েত হতে আহ্বান জানিয়েছেন।
আল জাজিরার প্রতিবেদক কামাল হায়দার জানিয়েছেন, "ইসলামাবাদে মহাসড়ক এবং মোটরওয়ে ব্লক করা একটি নজিরবিহীন পদক্ষেপ। কিছু বিক্ষোভকারী বাধা পেরিয়ে নৌকা ব্যবহার করে নদী পার হয়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে নিরাপত্তা বাহিনী কতটা প্রস্তুত, সেটিই এখন প্রশ্ন।"
পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দেশের বেশিরভাগ এলাকায় যোগাযোগ সেবা স্বাভাবিক থাকবে। তবে তারা কোথায় এই সেবা বন্ধ রাখবে, তা নির্দিষ্ট করেনি। কর্মসূচির আগেই হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজিং সেবা সীমিত করা হয়েছে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ও ভিপিএন সেবাগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
গত মাসে ইসলামাবাদ ও রাওয়ালপিন্ডিতে ইমরান খানের সমর্থক মিছিল ঠেকানোর জন্য মোবাইল সেবা বন্ধ করা হয়েছি। এর ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি ব্যাংকিং ও খাদ্য সরবরাহসহ বিভিন্ন সেবা প্রভাবিত হয়।
ইমরান খানের সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং হোয়াটসঅ্যাপ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে প্রতিবাদ কর্মসূচি আয়োজন এবং তথ্য আদান-প্রদান করে থাকেন।
২০২২ সালে ইমরান খান পার্লামেন্টের অনাস্থা ভোটে ক্ষমতা হারান এবং রাষ্ট্রদ্রোহ ও সন্ত্রাসবাদসহ বিভিন্ন অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। যদিও তিনি বেশ কিছু মামলায় জামিন এবং খালাস পেয়েছেন, তারপরও তিনি কারাগারে আছেন। পিটিআইয়ের দাবি, তাকে রাজনীতিতে ফিরতে না দেওয়ার জন্য এই চক্রান্ত।
ইমরান খান ও তার দল পিটিআই সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং এসব মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছে।
ইমরান খানের পাকিস্তানে বিশাল জনপ্রিয়তা রয়েছে। ২০২৩ সালের মে মাসে তাকে গ্রেপ্তার করা হলে পিটিআই সমর্থকরা দেশব্যাপী প্রতিবাদ শুরু করেন, যা সহিংসতায় রূপ নেয়। এই প্রতিবাদে বহু মানুষ গ্রেপ্তার হলেও, শুধু ১০০ জনের কাছাকাছি ব্যক্তিকে সামরিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে।