৫০ ট্রান্সজেন্ডারকে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিল 'পাঠাও ফুড'
স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপনের ঐতিহাসিক মুহূর্তে রাজধানীর গুলশানে বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমদ' পার্ক এ পাঠাও এবং এপেক্স আয়োজন করে "স্বাধীনতা সবারই" নামক বিশেষ অনুষ্ঠান। উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও মাননীয় সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর এমপি, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) এর সম্মানিত মেয়র জনাব মো. আতিকুল ইসলাম, এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, পাঠাও এর প্রেসিডেন্ট ফাহিম আহমেদ, ডিরেক্টর মার্কেটিং ও পিআর সৈয়দা নাবিলা মাহবুব, "ট্রান্সএন্ড" এর সিইও লামিয়া তানজীন তানহা, ট্রান্সজেন্ডার অ্যাক্টিভিস্ট শোভা সরকার, মিতু প্রমুখ।
এই বিশেষ আয়োজনে ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের ৫০ জনকে পাঠাও ফুড- এ ডেলিভারিম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। নিয়োগ দেবার পূর্বে পাঠাও কর্তৃপক্ষ তাদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ ও ওয়ার্কশপেরও ব্যবস্থা করে। উক্ত আয়োজনে পাঠাও ও এপেক্স এর সৌজন্যে উপহার হিসেবে তাদের হাতে তুলে দেয়া হয় আইডি কার্ড, টিশার্ট, স্মার্ট ফোন, ফুড ব্যাগ ও বাইসাইকেল। আয়োজকদের বিশ্বাস চাকরির এই সুযোগ স্বাধীনতার ৫০তম বর্ষে দেশকে কর্মঠ কিছু মানুষ উপহার দিবে। যারা ফুডম্যান হিসেবে সম্মানজনক আয়ের মাধ্যমে নিজেদের জীবনে আনবে ইতিবাচক পরিবর্তন।
পাঠাও বিশ্বাস করে এই পঞ্চাশজন ফুডম্যান তাদের যৌন দৃষ্টিভঙ্গি বা লিঙ্গ দ্বারা পরিচিত নয়। বরং তাদের পরিচয় প্রকাশ পাবে কাজে। তাদের একটাই পরিচয় তারা এই দেশের নাগরিক। মানুষ হিসেবে তাদের প্রতি সমাজেরও দায়বদ্ধতা রয়েছে। পাঠাও এর স্লোগান "মুভিং বাংলাদেশ" শুধু কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী। স্বাধীনতার চেতনা ও সমতায় তাদের রয়েছে পূর্ণ আস্থা। শুধু ট্রান্সজেন্ডার নয়, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন যেকোনো মানুষ যদি যোগ্য হয় পাঠাও তাদের কর্মসংস্থানে পূর্ণ সহযোগিতা দিবে।
ডিএনসিসি'র মেয়র জনাব মো. আতিকুল ইসলাম পাঠাও ও এপেক্স এর উদ্যোগের আন্তরিক প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, উত্তর সিটি কর্পোরেশন ট্রান্সজেন্ডারদের পাশে ছিল, রয়েছে ও ভবিষ্যতে তাদের দক্ষতা উন্নয়ন ও কাজের সংস্থানে পূর্ণ সহযোগিতা দিবে।"
ইভেন্টটির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে মেয়র জনাব মো. আতিকুল ইসলাম আরো বলেন, "স্বাধীনতা সবারই। আজ যারা ফুডম্যান হিসেবে নিয়োগ পেলেন ভবিষ্যতে তারাই গাড়ি চালানোসহ আরও নানামুখী কাজে অংশ নিবেন।"
অনুষ্ঠানে মাননীয় সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর এমপি তার বক্তব্যে বলেন, "বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আমরা পাচ্ছি অভিনন্দন ও প্রশংসা। কিন্তু এই অগ্রগতির সাথে প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন। আমি পাঠাওকে সাধুবাদ জানাই এমন একটি আয়োজন করার জন্য ও ৫০ জন ট্রান্সজেন্ডারের আয়ের সুব্যবস্থা করার জন্য। আপনাদের সাথেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ"।
অনুষ্ঠানে পাঠাও প্রেসিডেন্ট ফাহিম আহমেদ বলেন, "আমি মনে করি দেশের পঞ্চাশতম স্বাধীনতা উদযাপনের সঠিক উপায়, দেশের নাগরিকদের জন্য কিছু করা ও দেশকে এগিয়ে নিতে অবদান রাখতে সচেষ্ট হওয়া। এই ইতিবাচক পরিবর্তনের সঙ্গী হিসেবে আমাদের মতাদর্শের সাথে যায় এমন কিছু করার সুযোগ পেয়ে আমরা আনন্দিত। আমরা এগিয়ে গেলেই, এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।"
এপেক্স এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, "ক্ষমতায়ন হচ্ছে এগিয়ে যাওয়ার মূলমন্ত্র। একটি সমাজ তখনই সমৃদ্ধ হতে পারে যখন প্রত্যেক ব্যক্তি- বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে - স্বীকৃত এবং ক্ষমতায়িত হতে পারে। চলুন দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাই এবং মানুষকে তার প্রাপ্য সম্মানটুকু দিতে শিখি। আমরা সবাই মানুষ, সবারই একটা গল্প আছে, আর প্রত্যেকের গল্পই গুরুত্বপূর্ণ। আত্মার কোনও লিঙ্গ হয় না । প্রকৃত সাহস হচ্ছে অন্যকে অনুকরণ না করে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস রাখা এবং তা কাজের মধ্যে ফুটিয়ে তোলা ।"