৯৮% কারখানায় বেতন, ৯৯% কারখানায় বোনাস পরিশোধের দাবি বিজিএমইএ’র
আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগেই বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) অধীনে থাকা ৯৮ শতাংশ পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস পরিশোধ করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন সংগঠনটির সভাপতি ফারুক হাসান।
তিনি বলেন, আজকের মধ্যেই বাকি কারখানায় বেতন বোনাস দেয়া হবে।
বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি এ কথা বলেন। বিজিএমইএর উত্তরা অফিসে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।
ফারুক হাসান বলেন, "ছুটি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে কিছু কারখানায় বিচ্ছিন্নভাবে শ্রম অসন্তোষ ঘটেছে যা দু:খজনক।"
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সচল কারখানা ১৯১৩ টি । গতকাল ১১ মে পর্যন্ত এপ্রিল মাসের বেতন দেয়া হয়েছে এক হাজার ৮৬৬টি কারখানায়। যা ৯৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ। গতকাল বোনাস দেয়া হয়েছে এক হাজার ৮৮২ টি কারখানায়, যা ৯৯ শতাংশ।
ফারুক হাসান বলেন, ঢাকার ১৫ টি কারখানায় এপ্রিল মাসের বেতন ও ৮ টি কারখানায় বোনাস এখনও হয় নি। চট্টগ্রামে এপ্রিল মাসের বেতন ৩২ টি ও ২৩ কারখানায় বোনাস এখনও দেয়া হয় নি। এসব কারখানার বেতন বোনাস আজকে ( ১২মে) পরিশোধ করবে।
করোনা ভাইরাসের সংক্রামণ বোধে সরকার চলমান লকডাউন আগামী ১৬ মে পর্যন্ত বাড়িয়েছে। পাশাপাশি ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সব সরকারি – বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তিন দিনের ছুটি ও কর্মস্থলে অবস্থান করার নির্দেশনা জারি করেছেন। বিজিএমইএর সদস্য কারখানাগুলোতে সরকারের নির্দেশনা মেনে চলতে অনুরোধ করা হয়েছিল বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, "আমাদের ঈদের ছুটি কিন্তু ৩ দিনই। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী তিন দিন ছুটি দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো মালিক ছুটি সমন্বয়ও করছেন, শ্রমিকদের বেশি ছুটি দিয়েছেন। তবে শ্রমিকরা যেন কর্মক্ষেত্রেই থাকে। ছুটি পেয়ে গ্রামের বাড়িতে না যায়। গ্রামে গেলে করোনা সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি থাকবে।"
পোশাক কারখানায় ঈদের ছুটি তিন দিন দেওয়া নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ ছিল। কয়েকটি কারখানায় ছুটি বাড়ানো নিয়ে শ্রমিকরা বিক্ষোভও করে। এর পর ৮ থেকে ১০ দিন ছুটি করা হয়।
এ বিষয় লিখিত বক্তাব্যে ফারুক হাসান বলেন, "আমরা দু:খের সথে লক্ষ্য করছি যে , ছুটি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে কিছু কারখানায় বিচ্ছিন্নভাবে শ্রম অসন্তোষ ঘটেছে , যা দু:খজনক। শ্রমিক ভাইবোনেরা উৎসবমুখর পরিবেশে পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদ উদপযাপনের জন্য গ্রামের বাড়িতে যেতে চাইবেন , এটাই স্বাভাবিক। এ ব্যপারে আমাদের উদ্যোক্তাদেরও দ্বিমত নেই। তবে এবার করোনা সংক্রণণ ছড়িয়ে পরায় পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল।"
বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুযায়ী বছরে সর্বমোট উৎসব ছুটি ১১ দিন জানিয়ে ফারুক হাসান বলেন, "ক্যাজুয়াল লিভ ১০ দিন, অসুস্থতা ছুটি ১৪ দিন। এবং অর্জিত ছুটি বছরে সর্বোচ্চ ১৬ থেকে ১৮ দিন (প্রতি ১৮ দিন কাজে উপস্থিত হওয়ার জন্য ১ দিন)।
এছাড়া শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কাজ করে পরে এ ছুটি উৎসব-ছুটির সঙ্গে যোগ করে ছুটি কাটাতে পারে।
ফারুক হাসান বলেন, উৎসব ছুটির আগে অথবা পরে সমন্বয় করে প্রতি ঈদে ৩ দিন সরকারী ছুটি সহ কারখানা ভেদে মোট ৪ থেকে ৮ দিন পর্যন্ত ছুটি দেয়া হয়।
শ্রমিকদের ছুটি সংক্রান্ত বিশৃঙ্খলা এড়িয়ে চলার আহবান:
বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, শ্রমিক ভাইবোনদের প্রতি আমাদের একান্ত অনুরোধ, ছুটি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে যেকোন প্রকার বিভ্রান্তি ও বিশৃঙ্খলা এড়িয়ে চলুন। এবারের ঈদে আপনারা গ্রামে যাওয়া থেকে বিরত থেকে কর্মস্থলের কাছাকাছি অবস্থান করে ঈদ উদযাপন করুন। আপনাদের এই ত্যাগ স্বীকারের মাধ্যমে রক্ষা পাবে আমাদের সকলের জীবন ও জীবিকা।
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এর পূর্ব থেকেই পোশাকের দরপতন শুরু হতে থাকে জানিয়ে বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, এর করোনার পরে তীব্র আকার ধারন করে। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে আমাদের পোশাকের দরপতন ৪.৫%- ৫% হারে অব্যাহত আছে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা পরিচালনা করতে গিয়ে একদিকে যেমন খরচ বেড়েছে, অপরদিকে আমরা কারখানার ক্যাপাসিটি পরিমিত ব্যবহার করতে পারছি না। শুধুমাত্র কারখানা চালু রাখার জন্য ও বাজার ধরে রাখতে আমাদের কারখানাগুলো ব্রেক ইভেন এর চেয়ে কম মূল্যে অর্ডার নিচ্ছে এবং চরম আর্থিক ও ক্যাশ ফ্লো সংকটের মধ্যে ব্যবসা পরিচালনা করছে।
২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের জন্য প্রস্তাব:
আগামী ৩ মাস পোশাক শিল্পের জন্য খুবই সংকট সময় উল্লেখ করে ফারুক হাসান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রণোদনা প্যাকেজ প্রদান না করলে শিল্পকে টিকিয়ে রাখা সহজ হতো না। আগামী দিনে আমাদের ক্ষতি পুষিয়ে প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখতে সরকারের নীতি সহায়তা ও সমর্থন অব্যাহত থাকবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
শ্রমিকের বেতন ভাতা পরিশোধের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বৃদ্ধি করার আবেদন জানিয়ে বলেন, ২ বছরে ১৮ টি কিস্তির পরিবর্তে ৩ বছরে ৩০টি কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধের সুযোগ প্রদানের জন্য অনুরোধ করেছি।
এছারা রপ্তানীমূখী তৈরী পোশাক শিল্পের জন্য রপ্তানীর বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে কর ০.৫০% থেকে হ্রাস করে ০.২৫% করা এবং তা আগামী ৫ বছর পর্যন্ত কার্যকর রাখার আবেদন করছি। নগদ সহায়তার উপর আয়কর কর্তনের হার ১০% হতে হ্রাস করে ০% নির্ধারন করাও দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সিনিয়র সহ-সভাপতি এস এম মান্নান কচি , সহ-সভাপতি শহীদউল্লাহ আজিম, খন্দকার রফিকুল ইসলাম, মো. নাছির উদ্দিন, মিরান আলী, পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।