‘ধর্মঘটে বাস বন্ধ, ওমান যাব কীভাবে’
ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে দেশজুড়ে চলছে পরিবহন ধর্মঘট। বন্ধ রয়েছে বাস, ট্রাক ও কার্ভাডভ্যানসহ ডিজেল চালিত সকল যানবাহন। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। স্থবির হয়ে পড়েছে মানুষের জীবিকা ও অন্যান্য জরুরি প্রয়োজনের ভ্রমণ।
তাদেরই একজন লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর আফজাল গ্রামের বাসিন্দা আফসার উদ্দিন। ১১ মাস আগে ওমান থেকে দেশে ফেরা এই প্রবাসী আবার বিদেশ যাবেন। কিন্তু, যানবাহন বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম গিয়ে ফ্লাইট ধরার উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না।
তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন; "আমি ওমান থাকি। শনিবার সকাল ৯টায় আমার ফ্লাইট। কোনোরকমে নোয়াখালী পর্যন্ত এসেছি। কিন্তু এখানে সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বসে থেকেও গাড়ি পাচ্ছি না। আজ রাতের মধ্যে চট্টগ্রাম না পৌঁছাতে পারলে বিদেশ যাওয়াটা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।"
সোনাপুর কাউন্টারে গাড়ির অপেক্ষারত আরেক যাত্রী রুহুল আমিন ঢাকার একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। গত কয়েকদিন আগে ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আসেন। শুক্রবার ছুটি শেষ, শনিবার সকালে অফিসে যোগ দিতে হবে, তাই সকাল থেকে এসে হিমাচল কাউন্টারে বসে আছেন। কাউন্টারের বাইরে তালা দেখে লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারেন বাস বন্ধ।
তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, "তেলের দাম বাড়ার সাথে সাথে গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়ায় এখন তিনি বিপাকে পড়েছেন। শনিবার কাজে যোগদান করতে না পারলে চাকরি নিয়ে শঙ্কায় পড়তে হবে।"
ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে সারাদেশের মত নোয়াখালীতেও চলছে পরিবহন ধর্মঘট। জেলার প্রতিটি রুটে বন্ধ রয়েছে বাস, ট্রাক ও কার্ভাড ভ্যানসহ ডিজেল চালিত সকল যানবাহন।
শুক্রবার ভোর থেকে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জেলা বাস মালিক সমিতির নেতৃবৃদ্ধের নির্দেশে বন্ধ রাখা হয়েছে ডিজেল চালিত যানবাহন। পুনরায় গাড়ি চালুর বিষয়ে মালিক কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
সকাল থেকে জেলার সোনাপুর বাস স্ট্যান্ড ঘুরে দেখা গেছে, নোয়াখালী-ঢাকা, নোয়াখালী-চট্টগ্রাম রুটের গাড়িগুলো স্ট্যান্ডে পার্কিং করে রাখা হয়েছে। নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে রয়েছে মাইজদী-ফেনী, চৌমুহনী-লক্ষ্মীপুর-রায়পুর ও চাঁদপুরসহ আঞ্চলিক রুটের বাসগুলো। সকাল থেকে বন্ধ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান। স্ট্যান্ডে কয়েকজন শ্রমিক গাড়ি ধোয়া-মোছার কাজ করছিলেন। বেশিরভাগ চালক-শ্রমিক মাঠে বসে অবসর সময় কাটাচ্ছেন।
সকাল থেকে কাউন্টারগুলোর সামনে ভিড় করছে সাধারণ যাত্রীরা। কিন্তু কাউন্টারগুলো বন্ধ থাকায় ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকেও কোনো সমাধান পাচ্ছেন না যাত্রীরা। কখন গাড়ি ছাড়বে এমন প্রশ্ন সবার।
এতে শুধু যাত্রী নয়, করোনায় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর হঠাৎ করে আবার গাড়ি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা। তবে এই সুযোগে যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠছে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ও সিএনজি অটোরিকশা চালকদের বিরুদ্ধে।
সোনাপুর স্ট্যান্ডে একুশে পরিবহন শ্রমিক বেলায়েত হোসেন জানান, "দীর্ঘদিন করোনার লকডাউন থাকায় ওই সময়টা আমরা ঘরে বসে অনাহারে-অর্ধাহারে কাটিয়েছি। মাঝে কয়েকদিন গাড়ি চললেও, এখন আবার তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মালিকরা গাড়ি বন্ধ করে দিয়েছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে আমরা বিপাকে পড়েছি।"
বাস সুপারভাইজার আলীরাজ রনি বলেন, "গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সোনাপুর থেকে ঢাকা প্রতি সিট প্রতি আমরা ৩৫০ টাকা করে ভাড়া নিয়েছি। কিন্তু, প্রতিবার ২০-২৫টি সিট পূরণ হয় এবং বাকি আসন খালি থাকে। অথচ সায়দাবাদ পর্যন্ত ১২৫-১৩০ লিটার তেল খরচের কারণে প্রতিবার আসা যাওয়ায় ৪ হাজার টাকার বেশি লোকসান হচ্ছে। এখন আবার প্রতি লিটার তেলে ১৫ টাকা করে বাড়ার কারণে মালিকরা বাস বন্ধ করে দিয়েছে।"
বাঁধন পরিবহনের মালিক মো. মঞ্জু বলেন, সোনাপুর-চট্টগ্রাম রুটে তাঁর ৮টি বাস রয়েছে। প্রায় সময় লোকসান দিয়ে যাত্রী পরিবহন করতে হয়। বর্তমানে ডিজেলের দাম ৮০ টাকা হওয়ায় শুক্রবার ভোর থেকে সবগুলো গাড়ি বন্ধ রেখেছেন। সরকারিভাবে ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত আসার পর নিজেদের লাভ লোকসান হিসেব করে পুনরায় গাড়ি চালানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।