‘রেড জোন’ চিহ্নিত করে কক্সবাজার পৌরসভার ১০টি ওয়ার্ড লকডাউন
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের উপর ভিত্তি করে কক্সবাজার পৌরসভার ১০টি ওয়ার্ডসহ জেলার কয়েকটি এলাকাকে 'রেড জোন' বা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে ১৪ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা প্রশাসক ও জেলা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মো. কামাল হোসেন এ ঘোষণা দেন। শুক্রবার সকাল থেকে ওই এলাকাগুলোতে লকডাউন কার্যকর হয়।
জেলা প্রশাসক বলেন, 'রেড জোন' হিসেবে চিহ্নিত এলাকাগুলো সম্পুর্ণ অবরুদ্ধ থাকবে। ওই এলাকাগুলো থেকে কেউ যেমন বাইরে যেতে পারবেন না, তেমনি বাইরে থেকে কেউ প্রবেশও করতে পারবেন না। প্রয়োজনে লকডাউনকৃত এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষকে সরকারিভাবে খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা দেয়া হবে। করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি কমাতে প্রচেষ্টার কমতি নেই আমাদের। দরকার হলে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জরুরি কাজের সঙ্গে জড়িতরা রেড জোনে সীমিত আকারে চলাচল করতে পারবেন।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, কক্সবাজার পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডকে 'ইয়োলো জোন' বা সংক্রমিত অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। বাকি ২ থেকে ১১ নম্বর ওয়ার্ডকে অতিমাত্রায় করোনা সংক্রমণের 'রেড জোন' হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ফলে এই ১০টি ওয়ার্ডে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, রোগীর ক্রম অনুসারে কক্সবাজার সদর ও চকরিয়ায় করোনার প্রাদূর্ভাব সবচেয়ে বেশি। ফলে ওই অঞ্চলের কয়েকটি এলাকাকেও 'রেড জোনের' আওতায় আনা হয়েছে। তবে এই দুই উপজেলার কোন কোন এলাকা লকডাউনের আওতায় আনা হয়েছে, তা এখনও জানা যায়নি।
এসব স্থানে প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে কমিটি থাকবে। কক্সবাজার পৌরসভার কাউন্সিলররা কমিটির প্রধান হবেন। প্রত্যেক ওয়ার্ড থেকে যুবক, ছাত্র, সমাজকর্মী নিয়ে একটি করে স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করা হবে। কমিটিতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সেনাবাহিনীর সদস্য, পুলিশ, স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিনিধিরা থাকবেন। তারা সার্বিক সহযোগিতা করবেন এলাকাবাসীকে।
সদর পৌরসভার যে দুটি ওয়ার্ড ইয়েলো জোন হিসেবে চিহ্নিত; সেখানেও সবকিছু চলবে সীমিত পরিসরে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে সকলকে। কক্সবাজার পৌরসভায় কোনো ওয়ার্ডকে 'গ্রিন জোন' হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি। কারণ প্রতিদিন পৌরসভার কোনো না কোনো স্থানে করোনা রোগী মিলছে।
সূত্র আরো জানায়, করোনা আক্রান্তের সংখ্যার ভিত্তিতে কক্সবাজার জেলাকে তিনটি জোনে বিভক্ত করা হয়েছে। জেলার আটটি উপজেলাকে ইউনিয়নভিত্তিক ও চারটি পৌরসভায় ওয়ার্ড ভিত্তিক বিন্যাস করে ম্যাপ তৈরী করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা এ মানচিত্র তৈরির দায়িত্ব পালন করছেন। জেলার আটটি উপজেলাকে ইউনিয়নভিত্তিক এবং চারটি পৌরসভায় ওয়ার্ড ভিত্তিক করোনা সংক্রমণের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে এই তিনটি রং দ্বারা বিভাজন করা হয়।
বিভাজনে যে ইউনিয়ন বা ওয়ার্ড করোনায় খুব বেশী সংক্রমিত বলে তথ্য রয়েছে, সেগুলোকে 'রেড জোন' বা লাল চিহ্নিত এলাকা, যে ইউনিয়ন বা ওয়ার্ড মাঝারী পর্যায়ে সংক্রমিত বলে তথ্য পাওয়া গেছে সেগুলোকে 'ইয়লো জোন' বা হলুদ চিহ্নিত এলাকা এবং যে ইউনিয়ন বা ওয়ার্ডে করোনা একেবারে সংক্রমিত হয়নি সেগুলোকে নিরাপদ রাখতে 'গ্রিন জোন' বা সবুজ চিহ্নিত এলাকা হিসেবে বিভক্ত করা হয়েছে।
কক্সবাজার জেলায় এ পর্যন্ত (৪ জুন) ৮৯০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ২০ জন। ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প রয়েছে ঝুঁকিতে। ইতিমধ্যে একজন রোহিঙ্গা মারা গেছেন, ৩০ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।