“ধর্ষণ মামলা নেওয়ার ৭২ ঘণ্টা সময়সীমার” মন্তব্য রেইনট্রি মামলার রায়ের লিখিত কপিতে নেই
হোটেল রেইনট্রি ধর্ষণ মামলার রায় ঘোষণাকালে বিচারক "ধর্ষণ মামলায় ৭২ ঘণ্টার সময়সীমা" নিয়ে যে মন্তব্য করেছিলেন, রায়ের পূর্ণাঙ্গ লিখিতরূপে তার উল্লেখ নেই। গত ১১ নভেম্বর ঢাকার একটি আদালতের এ পর্যবেক্ষণ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভ-অসন্তোষ সৃষ্টি হয়।
আদালত ৭২ ঘণ্টার পর পুলিশকে ধর্ষণ মামলা না নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন; দেশের প্রায় সকল গণমাধ্যম রায় ঘোষণাকালে বিচারক মোছা. কামরুন্নাহারের মৌখিক পর্যবেক্ষণের উদ্ধৃতি দিয়ে এ সংবাদ পরিবেশন করে।
এতে সামাজিক মাধ্যমসহ দেশজুড়ে প্রতিবাদ ও সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। এরপর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ থেকে মোছা. কামরুন্নাহারের বিচারিক ক্ষমতা প্রত্যাহার হয়।
গত সোমবার এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রধান বিচারপতি এবং আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ৪৯ পাতার ওই রায়ের কপি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডও বিশ্লেষণ করেছে।
টিবিএস বিশ্লেষণে উঠে আসে, রায়ের নথিতে "যৌন মিলনের পূর্ব অভিজ্ঞতা" উল্লেখিত মেডিকেল রিপোর্ট রয়েছে। অথচ মহামান্য হাইকোর্ট ২০১৮ সালে ফরেনসিক তদন্তের এই দিকটিকে ভিকটিমের জন্য অসম্মানজনক উল্লেখ করে রায় থেকে বাদ রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
মামলার আসামিপক্ষও ওই মেডিকেল রিপোর্ট কেন্দ্র করে তাদের অধিকাংশ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে। এর ভিত্তিতে অভিযুক্ত পাঁচ আসামির সবাইকে খালাস দেন আদালত।
বিচারক তার রায়ে লিখেছেন, "ইতঃপূর্বে শারীরিক সম্পর্কে অভ্যস্ত অনেক সাবালক ভিকটিম এই ট্রাইব্যুনালে ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে বিচারের জন্য এসেছেন যাদের ঘটনার অনেকদিন পর মেডিকেল পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু, ঘটনার দীর্ঘসময় পর মামলা হলে, ভিকটিমের ওপর যৌন সহিংসতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। মামলার সময়েই এদিকটি লক্ষ্য রাখা হলে এবং ৭২ ঘন্টার মধ্যে (অধিকাংশক্ষেত্রে মেডিকেল কর্মকর্তাদের মতানুসারে) মেডিকেল পরীক্ষা করে ধর্ষণের যে যথাযথ আলামত পাওয়া যায় তা ফরেনসিক পরীক্ষায় প্রমাণিত হলে, মামলার রায়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণিক নথি হিসাবে কাজ করে।"
মঙ্গলবার বিশ্লেষণের জন্য এই মামলার সকল তথ্যপ্রমাণ নিম্ন আদালত থেকে নিজ আওতায় নিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।
গত ১১ নভেম্বর হোটেল রেইন্ট্রি ধর্ষণ মামলার রায় ঘোষণাকালে বিচারকক্ষে উপস্থিত সাংবাদিকরাও বলছেন, বিচারক তার পর্যবেক্ষণ মৌখিকভাবেই দেন।
ইতঃপূর্বে, অনেক চাঞ্চল্যকর মামলার রায় ঘোষণাকালে বিচারকগণ সাংবাদিক ও আইনজীবীদের লিখিত পর্যবেক্ষণের কপি দিয়েছেন, কিন্তু এই মামলার ক্ষেত্রে তা দেওয়া হয়নি।
এর আগে, ২০১৭ সালে আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া এক তরুণী ধর্ষণের অভিযোগে বনানী থানায় মামলা করেন।
ওই বছরের ৩ জুন একটি মেডিকেল বোর্ড ভিকটিমদের ফরেনসিক রিপোর্ট পুলিশের কাছে জমা দেয়। মামলায় অভিযোগ অনুসারে, অভিযুক্তরা বাদী এবং তার এক বন্ধুকে ঢাকার রেইনট্রি হোটেলে আটকে রেখে দুজনের ওপরই নির্যাতন চালায়। মামলাটি সে সময়েও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টির পাশাপাশি দেশজুড়ে ধর্ষণ-বিরোধী জনমত গড়ে তুলেছিল।