২০৩২ সালের মধ্যে দেশে ৩২০০ জন চক্ষু চিকিৎসক প্রয়োজন
দেশে বর্তমানে পাঁচ লাখের বেশি ছানি রোগী রয়েছে। ছানি পড়া রোগীর সংখ্যা বাড়লেও রোগটি নিয়ে রোগীদের মধ্যে সচেতনতা কম। ছানি একটি নিরাময়যোগ্য অন্ধত্ব। দেশ থেকে ছানিজনিত অন্ধত্ব প্রতিরোধে সচেতনতা জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।
বুধবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ডা. মিল্টন হলে ছানি সচেতনতা মাস উপলক্ষে বাংলাদেশ সোসাইটি অব ক্যাটারাক্ট অ্যান্ড রিফ্লাকটিভ সার্জনস (বিএসসিআরএস) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা এসব তথ্য জানান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর বলেন, 'মানুষের মধ্যে ছানি পড়া নিয়ে সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে। দিনদিন তাদের চোখের জটিলতা বাড়লেও হাসপাতালে রোগী কম আসে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে কিন্তু চিকিৎসা, পরীক্ষা, ওষুধসহ সব ফ্রি কিন্তু রোগীরা আসছেন না।'
আসাদুজ্জামান নূর আরও বলেন, 'সুস্থ থাকতে হলে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা জরুরি। তাহলেই যার যে রোগ সেটি ধরা পড়বে। চিকিৎসার মাধ্যমে আবার সুস্থও হয়ে যায়। কিন্তু তারা চিকিৎসকের কাছে এমন একটা সময়ে আসে, যখন অনেকক্ষেত্রেই কিছু করার থাকে না।'
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএসএমএমইউ উপাচার্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, 'চোখের ছানি নিয়ে রোগীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। অনেক রোগীর ছানি সার্জারির প্রয়োজন হলেও রোগীরা তা করতে চাচ্ছেন না। তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। অপারেশন ভীতি দূর করতে হবে।'
তিনি বলেন, 'চক্ষু চিকিৎসকেরও ঘাটতি আছে। এ সংকট কমাতে হবে। ২০৩২ সালের মধ্যে ৩২০০ জন চক্ষু চিকিৎসকের প্রয়োজন পড়বে। এখন আছে মাত্র এক হাজার ৪০০ জন।'
সেমিনারে চিকিৎসকরা জানান, 'বিশ্বব্যাপী অন্ধত্বের একটি প্রধান কারণ ছানি। ক্যামেরাতে যেমন লেন্স লাগে, তেমনি চোখের ভিতরেও একটি স্বচ্ছ লেন্স থাকে। যদি কোন কারণে এই স্বচ্ছ লেন্সটি অস্বচ্ছ হয়ে যায়, তখন তাকে ছানি বলে। অনেকগুলো কারণে চোখে ছানি পড়তে পারে। যেমন- বার্ধক্যজনিত, জন্মগত কোন ত্রুটি থাকলে, চোখে আঘাত পেলে, চোখে কোন প্রদাহ হলে, ডায়বেটিস এবং দীর্ঘ সময় স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন করলে ছানি পড়তে পারে। তবে সবচেয়ে বেশি ছানি হয় বার্ধক্যজনিত কারণে।'
ছানি রোগের অনেকগুলো লক্ষণ থাকে। এরমধ্যে অন্যতম প্রধান লক্ষণ হচ্ছে- কোন বস্তুকে ঝাপসা দেখা, দূরে ধীরে ধীরে কম দেখা, কোন কোন ক্ষেত্রে উজ্জ্বল আলোতে কম দেখা এবং নিকটে তুলনামূলকভাবে ভালো দেখা। চিকিৎসকেরা জানান, ছানি রোগের চিকিৎসা ওষুধ কিংবা চশমা দিয়ে হয় না। ছানির একমাত্র চিকিৎসা অস্ত্রোপচার।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সোসাইটি অব ক্যাটারাক্ট অ্যান্ড রিফ্ল্যাকটিভ সার্জনসের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মোস্তাক আহমেদ ছানি সচেতনা নিয়ে একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএসসিআরএস সভাপতি অধ্যাপক ডা. জাফর খালেদ। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ জাহিদ হোসেন, শিশু অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. শাহীন আকতার, কমিউনিটি অফথালমোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোঃ শওকত কবীর, সহযোগী অধ্যাপক ডা. তারেক রেজা আলী প্রমুখ অংশ নেন।