দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কবলে সিলেট
গত ১৪ জুন ঘরে পানি ঢুকেছিল সুনামগঞ্জের কাঠইর ইউনিয়নের নওয়াগাওয়ের সুলতানা বেগমের ঘরে। ১৬ দিনেও সেই পানি নামেনি।
সুলতানা বেগম বলেন, 'ঘরে পানি, বাইরে পানি। আমরা সড়কের পাশে ত্রিপল টানিয়ে ১৫ দিন ধরে আছি। পশুর মতো জীবন কাটাচ্ছি। পানি নামার কোনো লক্ষণই নেই, বরং বাড়তেছে।'
গত ১৫ জুন পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুরের শাকিল আহমদের বাড়ি। তার ঘর থেকেও এখনো পানি নামেনি।
শাকিল বলেন, ঘরে ১৫ দিন ধরে পানি। পানি কিছুতেই নামছে না। কাল থেকে আবার পানি বাড়ছে।
তিনি বলেন, 'ঘরে পানি, রাস্তাঘাটও পানিতে তলিয়ে আছে। এই অবস্থায় আর কতদিন চলবে বুঝছি না। এমন দুর্ভোগ জীবনেও পোহাতে হয়নি।'
মে মাসের বন্যায়ও ঘরে পানি উঠেছিল জানিয়ে শাকিল বলেন, তখনও প্রায় ১০ দিন ঘরে পানি ছিল। এবার আরও কতদিন থাকতে হয় কে জানে।
টানা কয়েকদিন কমার পর বুধবার থেকে সিলেট ও সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি আবার বাড়ছে। তবে স্থিতিশীল রয়েছে কুশিয়ারা নদীর পানি।
এদিকে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে সিলেট ও সুনামগঞ্জে। শুক্রবার পর্যন্ত বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বৃষ্টি হচ্ছে সিলেটের উজানে ভারতের মেঘালয় ও আসামেও। ফলে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে ৩ সেন্টিমিটার, সুনামগঞ্জ পয়েন্টে ৬ সেন্টিমিটার পানি। তবে পানি কমেছে কানাইঘাট পয়েন্টে। আর স্থিতিশীল রয়েছে কুশিয়ারা নদীর পানি।
পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কবলে পরেছে সিলেট ও সুনামগঞ্জ। টানা ১৫ দিন ধরে পানিতে তলিয়ে আছে অনেক এলাকা। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পরেছেন মানুষজন।
শুক্রবার পর্যন্ত বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে জানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের উপসহকারী প্রকৌশলী একেএম নিলয় পাশা বলেন, শনিবার থেকে বৃষ্টি কমবে। এতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চলমান বন্যায় সিলেট সিটি করপোরেশনসহ ১৩ উপজেলা ও ৫ পৌরসভা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। প্রায় ৩০ লাখ লোক পানিবন্দি ছিল। সর্বশেষ পাওয়া তথ্যের হিসাবে, জেলার ৬১৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ ৫২ হাজার ৭৮৪ জন আশ্রয় নিয়েছে।