৪৪ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও পাননি ট্রেনের টিকিট, চলছে অপেক্ষা…
প্রায় ৪৪ ঘণ্টা অপেক্ষার পরেও ট্রেনে ঈদের অগ্রীম টিকিট পাননি ৫২ বছর বয়সী অটোচালক মো. ভুট্টু। ৫ জুলাই নীলসাগর এক্সপ্রেসে নীলফামারি যাওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় তিনি টিকিটের লাইনে দাঁড়ান। শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে ঈদের অগ্রীম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। কিন্তু দুপুর ১২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে তিনি জানতে পারেন সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।
এরপর তিনি জুরাইনে বাড়ি গিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে এসে আবার লাইনে দাঁড়ান। এবার লাইনে সামনের দিকে থাকায় সহজেই টিকিট পাবেন বলে মনে হচ্ছিল তার।
সময়ের সঙ্গে মানুষ বাড়তে থাকে। রাতে এক পর্যায়ে টিকিট কিনতে আসা কয়েকজনের মধ্যে হাতাহাতি হয়। ফলে লাইন ও সিরিয়াল সব ভেঙে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলে পুনরায় সবাই লাইনে দাঁড়ান। কিন্তু এবার ভুট্টু চলে যান লাইনের একদম ৭১ নাম্বারে।
শনিবার সকাল ৮টায় আবার টিকিট বিক্রি শুরু হয়। কিন্তু সেদিনও তার সিরিয়াল আসার আগেই সব টিকিট বিক্রি হয়ে যায়।
শনিবার বিকেল ৪টার দিকে যখন এই প্রতিবেদকের সঙ্গে তার ফোনে কথা হয় তখনও তিনি লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন।
"আমি দুইদিন যাবত অপেক্ষা করছি। টিকিট পাই নাই। আজ আবার অপেক্ষা করছি। আশা করি কাল টিকিট পাব। আজ আমার সিরিয়াল ১৬ নাম্বার", বলেন ভুট্টু।
এত দীর্ঘ সময় কীভাবে অপেক্ষা করেন তা জিজ্ঞেস করলে এই অটো ড্রাইভার বলেন, "রেলস্টেশনে একটা দোকান আছে সেখান থেকে রুটি কলা খাই। ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা এখানে নাই। রাতে ঘুমানোর সুযোগ নাই। এখানে যেমন গরম তেমন মশা। কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। প্রতি রাতেই এখানে কয়েকশ টিকিট প্রত্যাশী আসেন।"
এ ব্যাপারে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন-এর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, "আমাদের সামর্থ্যের চেয়ে চাহিদা অনেক বেশি। একটি টিকিটের অনুপাতে শতাধিক লোক কাউন্টারে আসে। তারপরও আমরা এই বিষয়টা দেখব।"
এদিকে লাইনে দাঁড়ানো লোকজন কাউন্টারে টিকিট দিতে দেরি করে বলে অভিযোগ করেন।
বিষয়টি স্বীকার করে একজন কাউন্টারম্যান বলেন, "আসলে যাত্রীদের জাতীয় পরিচয়পত্র পরীক্ষা করতে গিয়ে মাঝে মাঝে একটু দেরি হতে পারে। তবে আমরা দ্রুত কাজ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করি।"
এদিকে অনলাইনে টিকিট কাটা নিয়েও মানুষের অনেক অভিযোগ। অনলাইনে টিকিট কাটতে না পেরেও অনেকে কাউন্টারে আসেন।
টিকিট কিনতে আসা মোহাম্মদ রনি বলেন, "আমি গত দুদিন ধরে অনলাইনে টিকিট কেনার চেষ্টা করলেও ঢুকতে পারিনি। আজ সকাল ৮টায় বিক্রি শুরুর ৫ মিনিটের ভেতর সব অনলাইন টিকিট বিক্রি হয়ে যায়।"
আরেক টিকিট প্রত্যাশী রুহুল আমিন বলেন, সকালে আমি অসংখ্যবার অনলাইনে টিকিট কিনতে ঢুকার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই। এরপর সকাল ৯টার দিকে স্টেশনে আসি।
এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী বলেন, "অনলাইনে প্রায় ৬ কোটি হিট পড়ে। কিন্তু টিকিট আছে মাত্র ১৩-১৪ হাজার। সেখানে সবাইকে কোনোভাবেই টিকিট দেওয়া সম্ভব না।"
রেলওয়ের অনলাইন সেবা প্রদানকারী সহজের ব্যবস্থাপক ফারহাত আহমেদ জানান, প্রতিদিনের জন্য প্রায় ২৭,০০০- ২৮,০০০ টিকিট রয়েছে। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ বা অর্ধেক টিকিট অনলাইনে দেওয়া হয়। এর বাইরে বাকি টিকিট কাউন্টারে বিক্রি করা হয়। মোট অনলাইন টিকিটের মধ্যে অর্ধেক বিক্রি হচ্ছে ওয়েবসাইটে এবং অর্ধেক অ্যাপে।
তিনি আরও বলেন, শনিবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত অনলাইনে টিকিটের জন্য প্রায় ৭ কোটি হিট পড়ে। শুক্রবার এই সংখ্যা ছিল প্রায় ৬ কোটি।
তিনি বলেন, গত ঈদে একটি আসনের জন্য ৭০০ হিট পড়ে, এবার চাহিদা বেশি।
এদিকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে শনিবার দ্বিতীয় দিনের মতো ট্রেনের অগ্রীম টিকিট বিক্রি হয়েছে।
"শনিবার ৬ জুলাইয়ের টিকিট দেওয়া হয়। ৭ জুলাইয়ের টিকিট দেওয়া হবে ৩ জুলাই, ৮ জুলাইয়ের টিকিট ৪ জুলাই এবং ৯ জুলাইয়ের টিকিট ৫ জুলাই বিক্রি হবে। এছাড়া ১১ জুলাইয়ের ট্রেনের ফিরতি টিকিট ৭ জুলাই, ১২ জুলাইয়ের টিকিট ৮ জুলাই, ১৩ জুলাইয়ের টিকিট ৯ জুলাই এবং ১৪ ও ১৫ জুলাইয়ের টিকিট ১১ জুলাই দেওয়া হবে," বলেন তিনি।