লোডশেডিংই এখন সবচেয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ: বিশেষজ্ঞদল
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট মোকাবেলায় অন্য কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না বিধায় সঠিক পরিমাণে বিদ্যুতের লোড ব্যবস্থাপনাই বর্তমানে গ্যাস ও বিদ্যুতের সরবরাহ কমানোর একমাত্র উপায়।
রোববার (৩ জুলাই) দেশের বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থায় ৫০০ মেগাওয়াট ঘাটতি রেকর্ড করা হয়। এর পরের দিনই এই ঘাটতি ১৪০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়।
মঙ্গলবার প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও সরবরাহ করা হয়েছে ১১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট।
পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা মনে করেন, বৈশ্বিক বাজারে জ্বালানির দাম কমার পর মানুষের চাহিদা মেটানোই বর্তমানে একমাত্র প্রতিকার।
তবে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান জ্বালানি সরবরাহের একটি সুষ্ঠু ও পরিকল্পিত লোড ব্যবস্থাপনা জনগণের ভোগান্তি কমাতে পারে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর গ্যাস সংকটে ভোগা বিশ্বের দেশগুলোতে বিদ্যুৎ বিঘ্নিত হওয়ার ঘটনা বিরল নয়।
বেশিরভাগ দেশই সঠিক উপায়ে লোড ব্যবস্থাপনার দিকে ঝুঁকছে বলে উল্লেখ করেন বিশেষজ্ঞরা।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানি বিষয়ক সাবেক বিশেষ সহকারী, অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ তামিম বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক জ্বালানি পরিস্থিতি বিবেচনায় খরচ সাশ্রয়ের জন্য লোডশেডিংই সেরা বিকল্প।
"জাপানের সরকার যদি নাগরিকদেরকে এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার করতে নিষেধ করে তাহলে অন্তত ৮৫ শতাংশ মানুষ তা মানবে; কিন্তু বাংলাদেশে এটি অসম্ভব। একারণেই সরকার লোডশেডিং চালু করেছে," বলেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, এতে অন্তত জনগণ বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিতে ভুগবেন না।
তবে, ঠিক কোন কোন দিন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে তা যেন কর্তৃপক্ষ আগেই ঘোষণা করে সেই পরামর্শ দেন তিনি।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের জ্বালানি উপদেষ্টা এবং সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. শামসুল আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, সঠিকভাবে লোড ম্যানেজমেন্ট গ্যাস ও বিদ্যুতের বর্তমান উৎপাদন হারের মধ্যেও জনগণের দুর্ভোগ কমাতে পারে।
"কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, এ ধরনের পরিকল্পিত লোড ম্যানেজমেন্ট মেকানিজম আমাদের এখানে দেখা যায় না। এর ফলে দেশের কিছু অংশ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যদিকে অন্যান্য এলাকায় সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে," তিনি বলেন।
গ্যাস ও বিদ্যুতের অবৈধ ব্যবহার বন্ধেরও আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে, দিনের বেলা জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ ২ হাজার ৮২৪ মিলিয়ন ঘনফুট থেকে ২ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে এসেছে। কিন্তু, স্থানীয় ক্ষেত্র থেকে সরবরাহের পরিমাণ একই রয়ে গেছে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) জানিয়েছে, সোমবার রাত ৯টায় দেশের বিভিন্ন স্থানে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি রেকর্ড করা হয়েছে।
গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রায় ১ হাজার ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন, যেখানে সেদিন সরবরাহ ছিল মাত্র ৮৮২.৫২ মিলিয়ন ঘনফুট।
এদিকে, বিশ্বের অন্যান্য দেশে অস্বাভাবিকহারে বেড়েছে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম।
টেক্সাসে একটি তরল প্রাকৃতিক গ্যাস ফ্যাসিলিটি সাময়িকভাবে বন্ধ হওয়ার পর থেকে ইউরোপ এবং এশিয়ায় গ্যাসের দাম কয়েক সপ্তাহে ৬০ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
মূলত, গত বছরের শুরু থেকেই বেড়েছে গ্যাসের দাম। ইউরোপে এই দাম বেড়েছে ৭০০ শতাংশ পর্যন্ত।
জার্মানিও বলেছে, অচিরেই বিদ্যুৎ ফুরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার মুখোমুখি ইউরোপ।
এরমধ্যে নতুন খবর হলো, জার্মানিতে রাশিয়ান গ্যাস বহনকারী প্রধান নর্ড স্ট্রীম পাইপলাইনটি ১১ জুলাই থেকে ১০ দিনের জন্য রক্ষণাবেক্ষণের কাজে বন্ধ করা হবে। মস্কো এই পাইপলাইন আবার নাও খুলতে পারে, এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে এখন।