উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রো রেলের কাজ শেষের পথে
রাজধানীর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রো রেলের সব ধরনের পূর্ত কাজ শেষ হচ্ছে আগামী মাসে। ইতোমধ্যেই দিয়াবাড়িতে আসা ১৪ সেট মেট্রো রেলের ১০টি প্রস্তত করা হয়েছে এ অংশের জন্য। স্বয়ংক্রিয় ট্রেন পরিচালনা ও স্বয়ংক্রিয় ট্রেন নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রস্ততিও চলছে আলাদাভাবে।
আগামী অক্টেবরের শুরুতেই ঢাকায় প্রথম মেট্রো রেলের যাত্রীবিহীন ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট পরিচালনা করা হবে। এই টেস্টের সফলতার উপরই নির্ভর করছে বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে মেট্রো রেলের প্রথম বাণিজ্যিক যাত্রা।
এর আগেই বিমান বন্দর থেকে নতুনবাজার হয়ে কমলাপুর ও নতুনবাজার থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত মেট্রো রেল (লাইন-১) প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।
ডিপো উন্নয়নের দরপত্র, আহ্বান ও বাছাই শেষে এখন অপেক্ষায় রয়েছে ঋণদাতা সংস্থা জাইকার অনুমোদনের। অনুমোদন পাওয়া গেলে আগস্টেই শুরু হবে দেশের প্রথম আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো রেল নির্মাণের কাজ।
রাজধানী ঢাকায় মেট্রো রেল স্থাপন ও পরিচালনা প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানী লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক এক সাক্ষাতকারে গতকাল বৃহস্পতিবার এ সব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রো রেল নির্মাণে ৯৩.৭৬% অগ্রগতি হয়েছে। আর মতিঝিল পর্যন্ত দেশের প্রথম মেট্রো রেলের সার্বিক অগ্রগতি ৮১.১৯%।
তিনি জানান, উত্তরা ডিপো এলাকায় মোট ৫২টি অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ গত মাসে শেষ হয়েছে। এর আগে ডিপোর ভূমি উন্নয়নে ৭০.৫৮ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছিল। অবকাঠামো উন্নয়নেও শতাধিক কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলেও তিনি জানান।
তিনি জানান. উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৯টি স্টেশনের সবগুলোর কাজ আগেই শেষ তবে এন্ট্রি-এক্সিট নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে চারটির। শেষ পাঁচটি স্টেশনে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার রাস্তার নির্মাণকাজ চলছে।
স্টেশনের এন্ট্রি ও এক্সিট নির্মাণে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের সঙ্গে জমি নিয়ে জটিলতা ছিল। এ সব জটিলতা শেষ হয়েছে। এখন কোথাও টাকা পরিশোধের কাজ চলছে, আবার কোথাও নামজারির কাজ চলছে।
প্রস্তত ১০ সেট ট্রেন
উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত সেবা পরিচালনা করতে ১০ সেট ট্রেনের প্রয়োজন হবে জানিয়ে এমএএন সিদ্দিক জানান, ইতোমধ্যেই ১৪ সেট ট্রেন ডিপোতে এসে পৌঁছেছে। এর মধ্যে ১০ সেট ট্রেন পরিচালনার জন্য প্রস্তত করা হয়েছে।
তিনি জানান, প্রতিটি ট্রেন ডিপোতে আসার পর আলাদাভাবে ফাংশনাল টেস্ট ও পারফরমেন্স টেস্ট পরিচালনা করতে হয়। যাত্রী চলাচলের আগে সব ধরনের ব্যবস্থাপনার সমন্বয়ে ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট পরিচালনা করা হবে।
তিনি জানান, অটোমেটিক ট্রেন অপারেশন পরীক্ষা চলছে। অটোমেটিক ট্রেন প্রটেকশান পরীক্ষাও চলছে। দুইটি ট্রেনের মাঝে ২৫০ মিটার দূরত্ব নিশ্চিত করতে হয়। এই সব টেস্টের মাধ্যমে এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
কতটা প্রস্ততি আছে ট্রেন পরিচালনার
প্রথম অংশে ট্রেন পরিচালনার প্রয়োজনীয় লোক নিয়োগ শেষে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন সিদ্দিক।
তিনি বলেন, প্রথমে তাদের দেশে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে দুইটি ব্যাচের বিদেশে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। আর তিনটি ব্যাচ প্রশিক্ষণের জন্যে দেশের বাইরে আছেন।
তিনি জানান, মেট্রো রেলের সার্বিক নিরাপত্তার জন্যে এমআরটি পুলিশ গঠনের কাজও শেষ পর্যায়ে রয়েছে। জরুরী সেবা হিসেবে মেট্রো রেলকে যেন লোডশেডিংয়ের বাইরে রাখা হয় এ বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়েছে।
হলি আর্টিজানে নিহতদের সম্মানে মনুমেন্ট
হলি আর্টিজান বেকারীতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত জাপানি প্রকৌশলীদের সম্মানে মেমোরিয়াল মনুমেন্ট নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এমএএন সিদ্দিক। তিনি জানান, নিহতদের সম্মানার্থে স্টেশনের নামকরণসহ বিভিন্ন প্রস্তাব আসলেও দুই দেশ একমত হয়েছে মনুমেন্ট নির্মাণে।
তিনি জানান, জাপানে নির্মাণ হওয়া মনুমেন্ট ইতোমধ্যেই দেশে এসেছে এবং মেট্রো রেলের উত্তরা এক্সিবিশন সেন্টারে রাখা হয়েছে। এমআরটি লাইন-১ এর নির্মাণ শেষে এটা নতুন বাজার স্টেশনে স্থাপন করা হবে।
তিনি জানান, ঈদের পর জাইকার প্রধান ও জাপানের একজন মন্ত্রী বাংলাদেশে এসে এক্সিবিশন সেন্টারে এই মনুমেন্ট উদ্বোধন করবেন।
মেট্রোর যাত্রী পরিবহনে বিআরটিসির বিশেষ ব্যবস্থা
উত্তরা ও আগারগাঁও স্টেশন থেকে মেট্রো রেলের যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছাতে সহায়তা করতে বিআরটিসির ৪০টি বাস পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, প্রয়োজনে এই বাসের সংখ্যা আরও বাড়বে।
ইতোমধ্যেই বিআরটিসি একটি খসড়া এমওইউ পাঠিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় পরিমার্জন শেষে এই খসড়া আবার বিআরটিসিতে পাঠানো হয়েছে। দুই পক্ষ একমত হলেই এমওইউ সই করা হবে।
তিনি বলেন, উত্তরা থেকে জসিমউদ্দিন ও বিমানবন্দর হয়ে বাসগুলো বিআরটিসির রেগুলার রুটে চলে যাবে। আবার আগারগাঁও থেকে ফার্মগেট হয়ে পরিচালনা করা হবে বিআরটিসির বাস।
তিনি বলেন, ৪০ বাস দিয়ে প্রথমে তারা শুরু করবে। এটা কম মনে হলে আরও বাস দেবে। তারা কিছু নতুন বাস কিনবে। সেই বাসগুলো এই ফ্লিটে যুক্ত হবে।